জাতীয়আন্তর্জাতিকজীবনশৈলীশিরোনামসর্বশেষসব খবর

রোহিঙ্গাদের ভার কতদিন বইবে বাংলাদেশ, আজ ২৫ আগষ্ট

রোহিঙ্গাদের ভার আর কতদিন বইবে বাংলাদেশ। আজ ২৫ আগষ্ট। ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের জুলুম নির্যাতন আর

জোর করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার তিন বছর পুর্তি আজ।

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান’- কিন্তু ছোট্ট এই বাংলাদেশে ভিন দেশের কত শিশুর স্থান সংকুলান হবে?

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংখ্যায় শিশুরাই বেশি ছিল। তারপরই রয়েছে নারী। সে তুলনায় কর্মক্ষম পুরুষ হাতেগোনা।

অপ্রত্যাশিত এই রোহিঙ্গাদের বোঝা কেমন করে,আর কতোদিন বইবে বাংলাদেশ।

নতুন ও পুরনো মিলিয়ে মিয়ানমারের ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে।

তালায় প্রতিবাদ করায় স্ত্রী কে হত্যা করলো সন্ত্রাসীরা

কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলার ২৮টি পাহাড়ের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের দুই লাখেরও বেশি ঝুঁপড়িতে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে।

এর প্রভাব পড়েছে পুরো কক্সবাজার জেলায়। এই অঞ্চলের উন্নয়ন হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপত্তা ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে দুই উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে নিজ দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে।

এরপর সেদেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে

বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং ‘ভয়েজ অব রোহিঙ্গা’ সংগঠনের নেতা মাস্টার নুরুল কবির বলেন,

এ দিবস উপলক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে গত দুই বছর কর্মসূচি পালন করা হলেও

এবছর কোন ধরণের কর্মসূচী পালন করা হবে না।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে প্রবেশ করেন।

আশ্রিত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেওয়া হয়নি। যদিও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে দুটি প্রত্যাবাসনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন সরকার। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য দিন নির্ধারিত ছিল।

কিন্তু কোনো রোহিঙ্গাই যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি।

এর আগে ১৫ নভেম্বরও একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

রোহিঙ্গারা জানায়, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরে যাবে না তারা।

চারঘাটে বেড়েই চলেছে করোনা রোগী, প্রশাসনের নজরদারী

কিন্তু রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তিও করেছিল বাংলাদেশ। তাও বেশি দুর এগুয়নি।

২০১৯ সালের ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার থেকে ছাড়পত্র পাওয়া

তিন হাজার ৪৫০ জনের মধ্যে প্রায় তিনশজনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের দপ্তর। ঠিক সেই পর্যন্তই।

স্থানীয়রা জানায়, রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দের গুম, খুন, মাদক ব্যবসা সহ নানান অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না।

আর সব অপরাধ ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত একটি সুবিধা ভোগী মহল।

এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগামী দিনের কথা চিন্তা করে রীতিমত অস্থিরতায় আছে স্থানীয়রা।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালী ভাসানচরে স্থানান্তর করার দাবী উখিয়া-টেকনাফের সচেতন মহলের।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন নিপিড়ন ও নির্যাতন শুরুর পর থেকে

সাড়ে ৭ লাখের বেশি মিয়ানমারের সংখ্যলঘু রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে এ দেশে আশ্রয় নেয়।

এর আগে থেকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে অবস্থান করছিল প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী।

রোহিঙ্গারা ঝুঁপড়ি ঘরে জীবন যাপন করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তার উপর চলা এ বাস্তচ্যুত নাগরিকদের নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির উখিয়ার কুতুপালং।

উখিয়ার ও টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। প্রতিটি ক্যাম্পে একজন ক্যাম্প ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিটি ক্যাম্পে একজন নির্বাচিত ক্যাম্প চেয়ারম্যানও রয়েছে। প্রতি ব্লকে রয়েছে একজন করে নেতা। এই নেতাকে রোহিঙ্গারা মাঝি বলে ডাকেন।

এদিকে রেহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন যাপনের পাশাপাশি তাদের অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টিও ছিলো আলোচনায়।

এরই মধ্যে মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের অনেকেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতও হয়েছেন। গ্রেফতার হয়ে জেলেও আছেন বহু রোহিঙ্গা।

স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান যে এত দীর্ঘমেয়াদি হবে সেটা ভাবতে পারেনি।

সেদিন যারা মানবিকতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল আজ তারাই বড় দুর্দশা ও ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।

অনেকের ফসলি জমি, বাড়ির উঠান পর্যন্ত দখল করেছে রোহিঙ্গারা।

নড়াইলে আসামী উপহার পেলেন জায়নামাজ ও ফুলের তোড়া

রোহিঙ্গাদের ভার আর কতদিন বইবে বাংলাদেশ, কবে নাগাদ রোহিঙ্গারা ফিরবে বা আদৌ তারা ফিরবে কি না, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।.

স্থানীয়রা আরো বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গারা সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন।

তাদের কারণে শরণার্থী ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা নানা সামাজিক ও আর্থিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এ কারণে তাদের মধ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে।

উখিয়ার ১৬ নং ক্যাম্পের বাসিন্দা মোঃ মোজাম্মেল হক ও সামসুদ্দৌহা বলেন ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

বাবা-দাদার ভিটে মাটি হারিয়ে তারা আজ মানবেতর জীবন যাপন করেছেন।

এদেশের সরকার ও নাগরিকের সহযোগীতা না পেলে প্রাণে বেঁচে থাকতাম না। বাংলাদেশীদের কাছে আজীবন ঋণী।

এ ব্যাপারে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ খলিলুর রহমান বলেন,

দিবসটি উপলক্ষ্যে কোন ধরণের কর্মসূচী পালনে অনুমতির আবেদন আমার হাতে আসেনি।

সাতক্ষীরায় গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা আটক-৪

তাছাড়া বিশ্ব মাহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরণের সমাবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন,

দেশে রোহিঙ্গা আগমনের ৩ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে কোন কর্মসূচীর খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

তবে ক্যাম্প এলাকায় যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থায় রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়ে যে মানবিকতা দেখিয়েছেন,

সেই মানবিকতার বোঝা রোহিঙ্গাদের ভার আর কতদিন বইবে বাংলাদেশ সেটা প্রশ্নটাই থেকে গেল স্থানীয়দের মাঝে।

/ শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ২৫ আগষ্ট।

Shopno Television
Shopno Television
The Bangla Wall
http://shopno-tv.com/