সুনামগঞ্জ বিশ্বের বজ্রপাত প্রবণ এরিয়া ৬ বছরে ১১৩ প্রাণহানি
হাওরাঞ্চলে দ্রুত বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপনের দাবী, সুনামগঞ্জ বিশ্বের বজ্রপাত প্রবণ এরিয়া ৬ বছরে ১১৩ জনের প্রাণহানি।
‘সুনামগঞ্জে মেঘলা আকাশ আর অকাশ ফাটা বজ্রশব্দ এখন হাওরবাসীর চরম আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি কয়েক দিনের ব্যবধানে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বজ্রপাতে বেশ কয়েকজন সুস্থ্য সবল মানুষ মারা যাওয়ায় হাওরবাসী শংকিত হয়ে উঠছেন।
অতীতে বর্ষায় বৃষ্টি হলে হাওরের লোকজন বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ চিত্তে বৃষ্টিস্নান করতো।
এখন এই হাওরবাসী মেঘলা আকাশ দেখলেই তাদের দু:চিন্তা বেড়ে যায়।
অকাশ ফাটা বজ্রশব্দ হলেই ঘরে বসে পরিবার পরিজন নিয়ে মহান প্রভুকে ডেকে কোন রকম দু:সময়টি পার করছেন।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, ২০১৭ সালে নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়,
কুড়িগ্রামে তরুন কবি মোল্লা উমরকে কবি সম্মাননা প্রদান
মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে।
সুনামগঞ্জে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশের প‚র্বাঞ্চলে বজ্রপাতের পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে যায়।
ভারতের খাসিয়া পাহাড় ও মেঘালয় এলাকায় মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আকাশে মেঘ জমে থাকে।
স্তরীভ‚ত মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে ওই এলাকার পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি হয়ে থাকে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৬ বছরে বজ্রপাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১১৩ জনের মর্মান্তিক প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে।
আহত হয়েছেন আরো শতাধিক।
বজ্রপাতে মারা যাওয়া হাওরের ধান কাটার শ্রমিক, কৃষক পরিবারের সদস্য, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারীও অন্যতম।
এছাড়া গবাদিপশু, গাছপালাসহ বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ অবস্থায় বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে তালগাছ লাগানোর একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ‘একটা তালগাছ বড় হতে ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লাগে।
এই দীর্ঘ সময়ে বা আগামী বছরগুলোতে মানুষ বজ্রপাত থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে?
মেঘলা আকাশ আর আকাশ ফাটা বজ্র-শব্দে কোথায় না কোথায় আহত-নিহত হওয়ার খবর এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
বজ্রপাত নিয়ে দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছেনা হাওরবাসীর। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পাচ্ছে না সাধারন মানুষ।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনেই হাওর এলাকায় বজ্রপাত বেশী হচ্ছে।
আবহাওয়া জ্ঞান সম্পর্কে অসচেতনতা ও উন্মুক্ত হাওর এলাকায় গাছপালার অভাব এবং সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের কারণে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
বজ্রপাত ও আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের জন্য জেলার ৫টি উপজেলায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৫টি আবহওয়া অফিস স্থাপন করা হবে এমনটাই শুনা যাচ্ছে।
জানা যায়, আবহাওয়া ও বজ্রপাতের তথ্য না পাওয়া এবং সচেতনতার অভাবে হাওর এলাকার লোকজনই বজ্রপাতে বেশী মারা যাচ্ছেন।
পত্রিকা পড়ার গল্প : শেখ হাসিনা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, ২০১৫-’১৭ সাল পর্যন্ত জেলার দিরাইয়ে ১৭ জন, তাহিরপুরে ৯ জন, শাল্লাায় ৮ জন, ধর্মপাশায় ৭ জন,
সুনামগঞ্জ সদরে ৭ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬ জন, জগন্নাথপুরে ৪ জন, দোয়ারাবাজার ৪ জন, ছাতকে ২ জন, জামালগঞ্জে ২ জন,
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ১ জনসহ মোট ৬৭ জন তরতাজা প্রাণ বজ্রপাতে নিহত হয়েছে।
তম্মধ্যে ২০১৫ সালে ৩৭ জন, ২০১৬ সালে ২০ জন ও ২০১৭ সালে ১১ জন ও ২০১৮ সালে বজ্রপাতে ২৫ জনসহ মোট ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বজ্রপাতের ঘটনায় অন্তত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ৯ জন ও এ রির্পোট লিখা পর্যন্ত আরও অন্তত ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর সুনামগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
এ রির্পোাট লিখা পর্যন্ত চলতি বছর আরো কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
বজ্রপাতে নিহতদের পরিবারে মধ্যে জেলা প্রসাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
এটা বাড়ানো উচিৎ। কারন পরিবারের আয় রোজগারের প্রধান ব্যক্তি যদি হঠাৎ বজ্রপাতে মারা যায়,
তাহলে সেই পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাদের বাচাঁর সুযোগ থাকে না।
হাওর এলাকার বাসিন্দা সজল মিয়া জানান, ‘বজ্রপাত হাওর এলাকার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বজ্রপাত শুরু হলে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ মরছে।
মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করায় হাওর এলাকার মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পাচ্ছে না।
প্রশাসন তালগাছ লাগানোর মত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলছেন।
কিন্তু কবে তালগাছ বড় হবে? তাহলে কি এই সময়ের মধ্যে মানুষ মরে সাফ হয়ে যাবে ?
বজ্রপাতে নিহতদের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের কাছ থেকে জানা যায়, সচেতন থাকার পরেও নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার আগেই বজ্রপাতের শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ।
সুনামগঞ্জ বিশ্বের বজ্রপাত আর অধিকাংশ জায়গা উন্মুক্ত ও কোনো আশ্রয়স্থল না থাকায় দ্রুত নিরাপদ স্থানে যেতেও পারছেন না তাঁরা।
ফলে বজ্রপাত আতংকে গেল বছর ফসলের মাঠে যেতে রাজি না হওয়ায় ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারন করেছিল।
কৃষকদের দাবী, হাওরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও দ্রæত বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হলে সাধারন মানুষ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাচঁতে পারবে।
জামালগঞ্জে বজ্রপাতে পিতা-পুত্র নিহতের ভাই ওবায়দুর চৌধুরী কেঁদে কেঁদে জানান, আমরা ১৬-১৭ বছর পূর্বে দেখেছি বজ্রপাতে হঠাৎ মানুষ মারা যেত।
আর এখন সত্যি কথা বলতে বজ্রপাত শুরু হলে আমাদের জান কাঁপে। বজ্রপাতে আমার ভাই-ভাতিজা মারা গেছে।
আর যেন কোন মায়ের কুল আল্লাহ খালি না করেন, সে দোয়া করি।
আমরা সরকারের কাছে মিনতি করে বলি, আমাদের বাঁচাতে হাওরে হাওরে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনসহ বজ্র নিরোধক আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করুন।
আবহাওয়াবিদ আবু নাঈম মোন্তফা জানান, হাওর এলাকায় বজ্রপাত বেশি হওয়ার কারণ হলো সেখানে বজ্রপাত হলে কোন প্রটেকশন পাওয়া যায় না।
সুনামগঞ্জ বিশ্বের বজ্রপাত তাই সাধারণত হাইয়েস্ট লংগেস্ট ও টলেস্ট বস্তুর উপর আঘাত করে।
বজ্রপাত মৌসুমে হাওরের খোলা আকাশের নিচে মানুষ বেশি অবস্থান করেন, এবং কোন কোন সময় বজ্রপাতে মারা যান।
তিনি বলেন, যখন কোন মানুষ ভূমিতে হাইয়েস্ট, লংগেস্ট ও টলেস্ট অবস্থানে থাকেন তখন বজ্রপাত আর্থিং করে।
সুনামগঞ্জের শেষ প্রান্তে মেঘালয় পাহাড়ের অবস্থান। তাই স্থানীয় ভাবে তৈরী মেঘ ও জলীয়বাষ্প সরাসরি পাহাড় অতিক্রম করতে পারে না।
এ জন্য আকাশে একটি গভীর কালো মেঘমালার ফ্রেমের তৈরি হয়ে প্রচন্ড সংর্ঘষে বজ্রপাত হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান,
সুনামগঞ্জের হাওরে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য কিছুদিন পূর্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।
তিনি বলেছেন সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওরে নির্দিষ্ট দ‚রত্ব বজায় রেখে বজ্র নিরোধক যন্ত্র লাগানো হবে।
সেখানে যারা কাজে যাবেন তারা আশ্রয় নিতে পারেন এমন আশ্রয়কেন্দ্রও তৈরি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেয়ার জন্য একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে।
সেই টাকা দিয়ে বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
Pingback: ৫ মাসে বেনাপোল রেলষ্টেশনের আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা - দ্যা বাংলা ওয়াল
Pingback: সাপের কাঁমড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু - দ্যা বাংলা ওয়াল