ইরানের ফুটবল গ্যালারিতে আর ব্রাত্য নন মেয়েরা
বহু দশক পরে ইরানের হাজার-হাজার মহিলা স্টেডিয়ামে বসে পুরুষদের ফুটবল ম্যাচ দেখবেন। ফিফা সম্প্রতি ইরানকে হুমকি দিয়েছিল, সে দেশে নারীবর্জিত ফুটবল ম্যাচ চলতে থাকলে তাদের নির্বাসিত করা হতে পারে। এ হেন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশাসন নমনীয় হল বলে মনে করা হচ্ছে। ধর্মীয় নেতাদের নির্দেশেই প্রায় ৪০ বছর সে দেশে মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি সাহার খোদাইরি নামে এক ইরানীয় মহিলা জেলে যাওয়ার ভয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। একটি ম্যাচে পুরুষদের সাজে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে তিনি ধরা পড়ে যান। তার পর থেকে তাঁর উপরে নানা ধরনের মানসিক অত্যাচার চালানো হচ্ছিল। হয়তো তাঁকে গ্রেফতারও করা হত। এই ঘটনার পরে ফিফা আও কড়া হয়। ইরানের সরকার অবশ্য বিদেশিদের চাপে যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে নমনীয় হয়েছে, তা স্বীকার করছে না।
আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচে ইরান মুখোমুখি হবে কম্বোডিয়ার। তেহরানের আজ়াদি স্টেডিয়ামে যে ম্যাচ কয়েক হাজার মহিলা খেলা দেখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মেয়েদের জন্য আলাদা টিকিট বিক্রি শুরু হতেই আধ ঘণ্টার মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়। ইরানের ক্রীড়ামন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আজ়াদি স্টেডিয়ামে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা আগামী দিনে পুরুষদের ফুটবল দেখতে পারবেন। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত ৩৫০০ টিকিট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। যাঁরা টিকিট পেয়েছেন তাঁদের এক জন ক্রীড়াসাংবাদিক রাহা পুরবাখ্স বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে আমরা টেলিভিশনে ম্যাচ দেখে খবর লিখেছি। এ বার সবকিছু সামনে থেকে দেখে লিখতে পারব, তা ভাবতেই পারছি না।’’ রাহা অবশ্য এটা ভেবে দুঃখ করেছেন যে, বহু মহিলা ইচ্ছে থাকলেও টিকিট পাননি। যাঁদের অনেকে দক্ষিণ ইরানের প্রত্যন্ত এলাকা আহবাজ় থেকেও এসেছিলেন।
তেহরানের রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষদের প্রতিক্রিয়ায় এটা স্পষ্ট যে, তাঁরা সরকারের এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তে দারুণ খুশি। হাস্তি নামে এক মহিলাকে যেমন বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘নারী স্বাধীনতার সমর্থক আমি। খুব খুশি হব আলাদা জায়গায় নয়, পুরুষদের পাশে বসেই খেলা দেখতে পারলে।’’ মহিলাদের অনেকে অবশ্য ভয় পাচ্ছেন যে, এর পরেও পুরুষ দর্শকদের একটি অংশ মাঠে হয়তো তাঁদের প্রতি অশ্লীল এবং আপত্তিকর আচরণ করতে পারেন।