বন্ধ হয়ে গেল ‘রাজমনি’ সিনেমা হল
রাজধানীতে প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকা অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় প্রেক্ষাগৃহ ‘রাজমনি’ সিনেমা হলটিও ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ে অব্যাহত মন্দায় টিকে থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ৩৬ বছরের পুরানো এই হলটি বন্ধ করে দিলো কর্তৃপক্ষ।
রবিবার রাজমনি সিনেমা হল থেকে প্রজেক্টর মেশিন, সার্ভার খুলে ফেলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ভাঙ্গা শুরু হবে হলটি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হলের কর্ণধার আহসানউল্লাহ মনির ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ। এই হলটি নির্মাণ করা হয় ১৯৮৩ সালে।
মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ জানান, দেশের সিনেমা ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। বিগত কয়েক বছর পুরোপুরি লোকসান দিয়ে হলটি চালানো হয়েছে। লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনাও নেই। এভাবে কত আর লোকসান দেয়া যায়? তাই রাজমনি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
তিনি জানান, হলটি ভেঙ্গে এখানে একটি কর্পোরেট ভবন নির্মাণ হবে। কোন সিনেপ্লেক্স হবে না।
প্রসঙ্গত যে, সিনেমা ব্যবসায় ধস নামার কারণে ঢাকার অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি হল টিকে থাকলেও তা আগামীতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলটিও ভেঙ্গে ফেলার চিন্তা করছেন মালিকরা।

একে একে নিভেছে দেশের সিনেমা হলগুলোর বাতি। সে তালিকার সর্বশেষ যোগ হলো ‘ফিল্মপাড়া’খ্যাত কাকরাইলের রাজমণি সিনেমা হলটি। শেষ হলো রাজমণির যাত্রা। ১২ অক্টোবর শাকিব–ববির জুটির ‘নোলক’ ছবির প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে থেমে গেল রাজমণির কার্যক্রম। এখানে ২২তলা বাণিজ্যিক ভবন হবে। মালিক সেখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কোনো জায়গা রাখবেন না।
রাজমণি হলের বাইরের একটি অংশে প্রতিষ্ঠানের একটি অফিস কক্ষ। সেখানে দেখা হলো উদ্যোক্তা, চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসান উল্লাহ মণির সঙ্গে। প্রস্তাবিত ভবনের নকশা সেখানে রাখা। আহসান উল্লাহ মণি জানান, রাজমণি হল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালের ৩ মার্চ। কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘লালু ভুলু’ ছবির প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে চালু হয়েছিল এই হল। শেষ হলো শাকিব খানের নোলক দিয়ে। শুরু হয়েছিল রমরমা বাজার দিয়ে। শেষ হলো চরম মন্দায়। আহসান উল্লাহ মণি বললেন, ‘আমরা ঢাকার এমন একটি ব্যস্ত এলাকায় ব্যবসা চালাতে পারিনি শুধু ছবির অভাবে। দেশের ছবি নেই, কলকাতা থেকে যেসব ছবি আসে, সেগুলোও চলেনি। ভাষা, সংস্কৃতি ও পোশাকে মিল না থাকার কারণে এখানে অন্য দেশের ছবি বাজার পাবে না।’ তাঁর আশঙ্কা, আগামী এক বছরে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে।
ছবির ব্যবসায় প্রায় ৫০ বছর ধরে যুক্ত আহসান উল্লাহ। বাবা সরাফত উল্লাহ ভূঁইয়া ছিলেন সোনারগাঁ এলাকার স্কুলশিক্ষক। চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন সত্তরের দশক থেকে। ভাবলেন এমন এক জায়গায় প্রেক্ষাগৃহ বানাবেন, যেটা হবে রাজধানীর কেন্দ্রে। তখন কাকরাইল ছিল এ রকম একটি জায়গা। স্ত্রী রাজিয়া এবং নিজের নামের অংশ যুক্ত করে ‘রাজমণি’ হলের নামকরণ করা হয়। পরে রাজিয়া নামে আরেকটি ছোট প্রেক্ষাগৃহ চালু হয় একই ভবনে।