নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ পড়ায় লাশেরও ঠাঁই নেই ভারতে!
নাগরিকপঞ্জী তালিকা থেকে বাদ পড়ে আসামের তেজপুরে ডিটেনশন ক্যাম্পে(বন্দীশিবির) থাকা অবস্থায় চারদিন আগে মারা গেছেন দুলালচন্দ্র পাল নামে এক ব্যক্তি। রবিবার মারা যাওয়ার পর থেকে চারদিন ধরে তার লাশ নিয়ে চলছে টানাপড়েন। কিছুতেই দুলালচন্দ্রের লাশের দায়িত্ব নিতে রাজি নয় তার পরিবার। তাদের দাবি, লাশটাকে যেন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর, গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শোণিতপুরের আলিসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা দুলালচন্দ্র পালের। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৬৫ বছর। দুলালচন্দ্র পালের মৃত্যুতে রাস্তা অবরোধ করে মানববন্ধন করেন দশহাজারের বেশি মানুষ। তারপরই তদন্তের নির্দেশ দেয় আসামের রাজ্য সরকার। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা না করা পর্যন্ত মৃতদেহ নেবেন না তারা।
এ বিষয়ে মৃত দুলালচন্দ্র পালের বড় ছেলে আশিস পাল বলেন, ‘রাজ্য সরকার যেহেতু তাকে বিদেশী বলে ঘোষণা করেছে, তাই তার মৃতদেহ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। একমাত্র যদি সরকার বিবৃতি জারি করে ঘোষণা করে যে, তিনি বিদেশী নন, ভারতীয় নাগরিক, তাহলেই আমরা লাশ নেব।’
মৃতদেহ ফিরিয়ে নিতে পরিবার ও গ্রামবাসীদের রাজি করানোর জন্য গত চারদিন ধরে তার বাড়িতে একাধিকবার প্রতিনিধি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। এখন পর্যন্ত সে অনুরোধে সাড়া দেননি তারা। দুলালচন্দ্রের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৭তে দুলালচন্দ্র পালকে বিদেশী বলে ঘোষণা করা হয়। মানসিক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও তাকে সেসময় বিদেশী বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
শোণিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং বলেন, ‘তাকে বিদেশী ঘোষণা করেছে ট্রাইবুনাল। ফলে তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করা প্রশাসনের আওতার বাইরে। যদি তারা ট্রাইবুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতে চান, আমরা তাদের আইনি সহায়তা দিতে পারি। আমরা এই বিষয়টিতে অগ্রগতি চাই।’
হাসপাতালসূত্র জানায়, ডায়াবেটিস এবং সাইক্রাটিকের চিকিৎসা চলছিল দুলালচন্দ্র পালের। ১১ অক্টোবর তার পরীক্ষা করেন তেজপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। সেদিনই তাকে ডিনেটশন সেন্টারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
মৃত দুলালচন্দ্রের পরিবার এবং গ্রামবাসীদের দাবি, দেহ ফিরিয়ে দিতে সঙ্গে একটি নথি নিয়ে আসেন জেলের কর্মকর্তারা। ওই নথিতে তাকে ‘বিদেশী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং ঠিকানার জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। তার ছেলে বলেন, ‘জেল কর্তৃপক্ষ খুব ভালভাবেই ঠিকানা জানতেন, তারপরেও জায়গাটি খালি রাখা হয়েছে। আমাদের মনে হয়, তারা বাংলাদেশের কোনও ঠিকানা দিতে পারতেন। যদি তিনি বাংলাদেশীই হন, কেন আমাদের কাছে আনা হয়েছে? তাদের উচিত মৃতদেহটা বাংলাদেশে পাঠানো।’
বন্দীশিবিরের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও দুই-একদিন অপেক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে। কীভাবে মৃতদেহটির সৎকার করা যায়, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।