জীবনশৈলীস্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাখাদ্য ও পুষ্টিসব খবর

কোষ্ঠকাঠিন্য জব্দ এই তিন টোটকায়, ভ্যানিশ হবে পেট গুড়গুড়

কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে নাকাল মানুষদের সংখ্যা বড় কম নয়। প্রতিদিন বাথরুমে গিয়ে সিংহনাদ করাটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে অধিকাংশ বাঙালিরই। পেট সাফ না হওয়ার যন্ত্রণার সঙ্গে কীভাবে যেন জুড়ে যায় নিত্যদিনের যাবতীয় সঙ্কটগুলো। রাস্তায়-বাসে-ট্রেনে-অটোতে চর্চার বিষয় ঘুরেফিরে সেই একটিতেই এসে থামে–পেট। ‘পিকু’ ছবির ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে অমিতাভ বচ্চন পেরেছিলেন। এতদিন যা ছিল মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা থুড়ি চুপিচুপি হজম করে নেওয়ার মতো যন্ত্রণা, তাকে তিনি ‘পাবলিক’ সমস্যা করে তুলেছেন। ডাইনিং টেবিলের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল কোষ্ঠকাঠিন্য।

তবে রুপোলি পর্দার ‘পিকু’র সত্তরোর্ধ্ব বাবা হয়তো জানতেন না এই কোষ্ঠকাঠিন্য শুধুমাত্র প্রবীণদের সমস্যা নয়। পেটের নানান বিটকেল রোগ, হজমের গণ্ডগোল, পেট গুড়গুড়, বমি বমি ভাব এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও হানা দিচ্ছে স্কুলবেলা থেকেই। আর সেগুলো মোটেই ওই পেট খারাপের মতো ওষুধ খেলেই সেরে যাবে ধরনের সমস্যা নয়।

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুলপড়ুয়াদের ৪০ শতাংশই ভুগছে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়। এবং এ ক্ষেত্রেও চিকিৎসকেরা কাঠগড়ায় তুলছেন বর্তমান দিনযাপনের অনিয়মকে। বাড়ির খাবারে নাক সিঁটকে যখন তখন রেস্তোরাঁয় ছোটা, সবুজ শাক-সবজির বদলে বার্গার-পিৎজা-বেকন-সালামির সঙ্গে বন্ধুত্ব রীতিমতো নিমন্ত্রণ করে ডেকে আনছে এই রোগকে।

তিন ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়–

নরম্যাল ট্রানজিট একদিন-দু’দিনের মতো সমস্যা। তবে সচেতন না হলে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। 

স্লো ট্রানজিট– একটু একটু করে মাথাচাড়া দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য। পেট সাফ না হওয়ার সমস্যা লুকিয়ে গেলে শিকড় গেড়ে বসে পাকাপাকিভাবে। ধীরে ধীরে মলের সঙ্গে রক্ত বেরোতে দেখা যায়। 

ক্রনিক-ছ’মাসের বেশি লাগাতার এই সমস্যা চললে তাকে বলা হয় Outlet defecation syndrome (ODS)। ডাক্তারের কাছে গিয়ে সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। প্রথম থেকে সতর্ক না হলে এই রোগ খিদে কমিয়ে দেয়। খাবারে অনীহার দরুন ঘাটতি পড়ে পুষ্টিতে। সেই সঙ্গে পেটের যন্ত্রণা হয়ে উঠতে পারে নিত্যসঙ্গী। হতে পারে অর্শ, আলসারও। বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, চায়ের মধ্যে থাকা রাসায়নিক থিওফাইলিন পরিপাকের সময় শরীর ডিহাইড্রেট করে দেয়। ফলে বেশি চা খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগার সমস্যা দেখা যায়।

ফাইবার-জল-ব্যায়াম–এতেই জব্দ হবে কোষ্ঠকাঠিন্য

চিকিৎসকরা বলছেন, জীবনযাপনে অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়াই ইন্ধন জোগাচ্ছে এই রোগে। সাধারণত দেখা যায়, ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার (গম বা যবের রুটি, নানান সব্জি) যাদের আদৌ খাওয়া হয় না বা কম খাওয়া হয় তারাই বেশি ভোগেন এই রোগে। তারপর জল না খাওয়ার মতো আলস্য তো রয়েছেই। আর ব্যায়ামের নাম শুনেই যাঁরা পালাই পালাই করেন, তাদের ক্ষেত্রে তো পেটের সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী।

কী হতে পারে প্রতিকার-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে খুব ভাল ওষুধ রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা হয় রোগীর অন্য সব লক্ষণ দেখে। যেমন জিভ সাদা আর শুকনো হলে এক রকম ওষুধ, তো জিভ ভিজে হলে অন্য ওষুধ। সুতরাং ওষুধ খেতে হবে অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে। আর যাঁরা ঘরোয়া টোটকায় বিশ্বাস রাখেন তাঁদের জন্য কিছু টিপস আছে।

ডায়াবেটিস, থাইরয়েড বা কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি নাজেহাল করে। সে ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারই রুখে দিতে পারে এই সমস্যা।  ওটস, ব্রাউন রাইস, তাল, আলুবোখরা এগুলিতে এমন ফাইবার থাকে। ব্রাইন রাইস, ব্রাউন ব্রেড বেশি করে খেতে পারেন। এগুলো ঘরে না থাকলে চেষ্টা করুন প্রতিদিনের পাতে আটার রুটি রাখার। ভাতেও প্রচুর ফাইবার থাকে। তবে মেদ বৃদ্ধির কারণে যাঁরা ভাতে লাগাম টেনেছেন, তাঁদের জন্য রুটিই শ্রেয়।

প্রোটিন ডায়েট শরীরের পক্ষে উপকারী। কিন্তু বেশি প্রোটিন খেতে হলে সঙ্গে ফাইবারের মাত্রা বাড়ান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কয়েকটা আমন্ড ও অঙ্কুরিত ছোলা খান। মুগের দানাও খেতে পারেন। কালো বা সবুজ মুগের দানা তেল ছাড়া কড়ায় টেলে নিয়ে রেখে দিন। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।

প্রতিদিনের ডায়েটে পেঁপে, ব্রকোলি, গাজর, বিট, বিনস্ রাখুন।

মুসাম্বির রস: পৌষ্টিকনালী থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে মুসাম্বির রস। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও এই রস কাজে দেয়।

আনারসের রস: আনারসের মধ্যে থাকা উৎসেচক ব্রোমেলিন হজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

লেবুর রস: লেবুতে থাকা ভিটামিন সি হজমে ও পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

রাতে ৩-৫ গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণ ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খান। দীর্ঘ দিন অম্বলের সমস্যাতেও ভাল ফল পাবেন। মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।

প্রতিদিন একটা করে ফল খান। কোষ্ঠকাঠিন্যের অসুখ থাকলে বেদানা এড়িয়ে চলুন। তার বদলে আপেল, পেয়ারা, কলা খান।

শারীরিক পরিশ্রম করুন। জোরে হাঁটা, সুইমিং, জগিং, সাইক্লিং খুব ভাল কাজ দেয়।

Total Page Visits: 392 - Today Page Visits: 1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares