যে কারণে নিষেধাজ্ঞা: বিসিবির কাছেও গোপন করেছিলেন সাকিব
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কথা আপনারা শিগগিরই জানতে পারবেন। চিন্তা কইরেন না, ওগুলো আসতেছে—গত ২২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ক্রিকেটাররা ধর্মঘট (২১ অক্টোবর) ঘোষণা করার পরদিনই এমন মন্তব্য করেছিলেন বিসিবি সভাপতি। এক সপ্তাহ পরই ফিক্সিংয়ের বিষবাষ্প কাঁপিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তৈরি হয়েছে এক গুমোট,
অস্বস্তিকর পরিবেশ। দীপক আগারওয়াল নামের এক জুয়াড়ির কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর আইসিসিকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। নিয়ম অনুযায়ী এমন প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই আইসিসিকে জানাতে হয় ক্রিকেটারদের। সেখানেই ভুল করেছেন সাকিব। অবশ্য প্রস্তাবটা সরাসরি প্রত্যাখানও করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো তারকাকে নিয়ে লম্বা সময় তদন্ত করেছে আইসিসির দুর্নীতিদমন কমিশন (আকসু)। তদন্তে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি আকসুকে না জানানো সম্পর্কে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন সাকিব। গতকাল এই বিষয়ে নিজেদের রায় দিয়েছে আইসিসি।
গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানিয়েছে, সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ও পরে আরো এক বছর থাকছে স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। প্রথম বছরে তার কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক না হলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়বে। তবে সবকিছু ঠিক চললে তথা আইসিসির আইন মানলে আগামী বছর ২৯ অক্টোবরের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন তিনি।
বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ গঠন করেছে আকসু। ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে দুই বার জুয়াড়ির প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। ঐ সময় প্রস্তাবের কথা জানাননি আকসুকে। পরে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল আইপিএলে হায়দরাবাদ-পাঞ্জাব ম্যাচেও প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। তিনটি অভিযোগই মেনে নিয়েছেন সাকিব।
এদিকে সাকিবকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া এই জুয়াড়ি আবার আইসিসির কালো তালিকাভুক্ত। যদিও ক্যারিয়ারে অনেকবারই এমন ফোন পেয়ে আকসুকে জানিয়েছিলেন সাকিব।
গতকাল বিসিবির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আইসিসির আকসু এই বিষয়ে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিল চলতি বছরের শুরুতে। কিন্তু এই ক্রিকেটার তা অবহিত করেননি বিসিবিকে। তবে বিসিবির কাছে বিষয়টি গোপন থাকেননি। কারণ চলতি মাসে দুবাইয়ে আইসিসির সভায় গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন।
সূত্র জানায়, বিসিবির শীর্ষ কর্তারা আইসিসিকে বলে এই তদন্ত কিছুদিন দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি তারা। পরে আইসিসির সভা শেষে ফিরে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের সময় মিডিয়ার সামনে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপন।
এমনকি সংবাদ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত সভায় বোর্ড পরিচালকদের এই বিষয়ে জানিয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি। গতকাল এক পরিচালক বলেছেন, ‘বোর্ড সভাপতি আমাদের বলেছিলেন, জাতীয় দলের এক হাই প্রোফাইল ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তবে তিনি নাম বলেননি আমাদেরকে। তখন ধর্মঘট চলছিল ক্রিকেটারদের।’
গতকাল বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সাকিব আপাদমস্তকই ভুলে গিয়েছিলেন আকসুকে জুয়াড়ির ফোনের বিষয়টি জানাতে। প্রথমবার আকসুর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, এমন কিছু তার মনে পড়ছে না। পরে আকসু কর্মকর্তারা জুয়াড়ির ফোন ট্র্যাক করা কললিস্ট তুলে ধরেন সাকিবের সামনে। তখন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার বিষয়টি মনে করতে পেরেছেন। এবং নিজের ভুল স্বীকার করেছেন আকসুর কর্মকর্তাদের কাছে।
আশরাফুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পেলেন সাকিব। আশরাফুল নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বিপিএলে ফিক্সিংয়ের কারণে। সাকিব নিষিদ্ধ হলেন ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব আকসুকে না জানানোর কারণে।