যৌন হেনস্থা রুখতে, স্কুলে হবে গুড টাচ-ব্যাড টাচ-এর শিক্ষা
কোলকাতা: শিখতে হবে ‘না’ বলা। ‘না’ বলার ক্লাস করাবে স্কুলই। শেখাবে- নো মিনস নো! শিশুদের যৌন নিগ্রহ থেকে বাঁচাতে এই ‘না’-এর ক্লাসে সায় রয়েছে রাজ্য সরকারেরও। আর তাই এবার রাজ্যের ছয় জেলার ৩০০টি সরকারি এবং সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলে গুড টাচ-ব্যাড টাচ-এর শিক্ষা দেবে সরকারই।
প্রথমিক পর্যায়ে এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক স্তরে রাখা হয়েছে। যদি সফল হয় তবে তা আগামী দিনে রাজ্যের সব স্কুলেই শেখানো হবে। আর এই শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে, চাইল রাইট্স অ্যান্ড ইউ অর্থাৎ ক্রাই।
স্কুল পড়ুয়াদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে চলতি বছরেই গাইডলাইন প্রকাশ করেছে স্কুলশিক্ষা দফতরের। আর সেখানেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এমন বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল।
যেখানে ছাত্রছাত্রীদের যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সজাগ করতে স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দিতে বলা হয়েছিল। অস্বস্তিকর কোনও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা যাতে সাহসের সঙ্গে ‘না’ বলতে পারে, তার পাঠ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনেই শুরু হতে চলেছে এই পরীক্ষামূলক প্রকল্প।
শিশুকে শেখান ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’
- শিশুকে শেখান ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’
- শরীর সম্পর্কে খুব ছোটবেলা থেকেই ওয়াকিবহাল করুন।
- বাচ্চাকে সুইমসুট রুল শেখান, ছেলে অথবা মেয়ের শরীরে স্যুইমিং কস্টিউম যে অংশ ঢেকে রাখবে তা যে গোপনাঙ্গ সেটা বোঝান।
- মা-বাবা এবং ডাক্তার ছাড়া আর কেউ সেই অঙ্গ ছুঁতে পারে না, এই ধারণা তৈরি করুন।
- কোনও রকম অস্বস্তিতে বাচ্চাকে বাধা দিতে শেখান, প্রয়োজনে চিৎকার করে প্রতিরোধ করতে বলুন।
- গল্পের ছলে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করুন, শিশুর উপর কোনও অত্যাচার হচ্ছে কি না।
সতর্ক থাকবেন যাদের থেকে
- বাচ্চা না-চাইলেও কেউ যদি জোর করে আদর করতে চায়।
- কেউ যদি আড়ালে গিয়ে বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করে।
- কেউ যদি উপহার এনে বা লোভ দেখিয়ে বাচ্চাকে সকলের কাছ থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে।
শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন হেনস্থা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের রিপোর্ট ও পরামর্শ এবং বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা, শিক্ষা পরিষদের সুপারিশকে একত্র করে শিশু নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরি করে স্কুলশিক্ষা দফতর।
এই গাইডলাইন এ রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি সব স্কুলের জন্যই। আইসিএসই, সিবিএসই বোর্ড এবং সংখ্যালঘু পরিচালিত স্কুলগুলি অবশ্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে রাজ্য সরকারের এই সুপারিশ গ্রহণ করতে পারবে। ওই নির্দেশনামায় প্রধানশিক্ষকদের উপরে দায়িত্ব রয়েছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই ধরনের ক্লাসের আয়োজন করা।
এই ধরনের ক্লাসের অগ্রগতি কেমন হয়েছে, তা নিয়ে তিন মাস অন্তর একটি স্টেটাস রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয়েছে শিক্ষা দফতরের তরফে। প্রথম শ্রেণি অর্থাৎ ছ’বছর বয়সের আগে কোনও পড়ুয়াকে এই ধরনের ক্লাসে রাখতে না করা হয়েছে গাইডলাইনে।
তেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুলের আগে এই পাঠ শুরু করতে হবে বাবা-মায়েদেরই। পেরেন্টাল কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের বক্তব্য, ‘গল্প বলার মতো ছোট ছোট করে শিশুদের গুড টাচ-ব্যাড টাচ বোঝানোর পাঠ মা-বাবাদেরই দিতে হবে।
আদর করার ছলে যতই কোনও পরিচিত মানুষ বাচ্চার দিকে এগিয়ে যাক, সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদেরই। গোপনাঙ্গ বা প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কে একেবারে ছেলেবেলা থেকে মা-বাবাকেই পাঠ দিতে হবে।’