সোনা আরও উঁচুতে, সমস্যায় গয়নার বাজার
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্থির হয়ে উঠেছে স্বর্ণের বাজার। যার প্রভাব বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়লো স্বর্ণের দাম। যা এসে ঠেকেছে ৬০ হাজার টাকার উপরে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২২, ২১, ১৮ ক্যারেট ও সনতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের ভরিতে দাম বেড়েছে ১ হাজার ১৬৬ টাকা। রবিবার থেকে এটি কার্যকর হবে।
অর্থাৎ, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বেড়ে ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা হয়েছে। এছাড়া ২১ ক্যারেট ৫৮ হাজার ২৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৫৩ হাজার ১৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৪০ হাজার ২৪০ টাকা হয়েছে।
বাজুস বলছে, বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ দর বাড়ানো হয়েছে।
কলকাতায় শুক্রবার সর্বকালীন রেকর্ড গড়ার করার পরে সোনার দাম বাড়ল শনিবারও। পৌঁছল নতুন উচ্চতায়।
এ দিন শহরে ২৪ ক্যারাটের ১০ গ্রাম পাকা সোনার দর ১৪০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪০,৬৫০ টাকা। ১৩০ টাকা বেড়ে ৩৮,৫৬৫ টাকায় পৌঁছেছে গয়নার সোনা।
বাজার থেকে কেনার সময়ে এই দু’ক্ষেত্রেই অবশ্য ৩% জিএসটি যোগ করে হিসেব কষতে হবে। ফলে পাকা সোনার দর আদতে দাঁড়াচ্ছে ৪১,০০০ টাকার উপরে। কিন্তু এর ফলে সোনায় লগ্নি বাড়লেও চাপে গয়না শিল্প।
গত বছর দেশে প্রায় ২৪% বেড়েছে সোনার দর। হলুদ ধাতুতে লগ্নি বাড়লেও তা হয়েছে মূলত মুদ্রা, বাট ও কাগুজে সোনায়। কিন্তু দামের চাপে গয়নার বাজার আদতে ধাক্কা খেয়েছে। ফলে লগ্নির জন্য সোনার চাহিদা বাড়লেও, গয়নার বাজারে চাহিদা না-থাকার কোপ পড়েছে সোনা আমদানিতে। ২০১৮ সালে ৯৪৪ টন সোনা আমদানি করেছিল ভারত। ২০১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৮৩১ টন।
গয়নার চাহিদা কমার জন্য মূলত মাথা তোলা সোনার দরকেই দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘দাম বাড়ার ফলে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে গয়নার বাজারে মন্দা চলছে। আমার আশঙ্কা, আগামী দিনে দাম আরও বাড়তে পারে।’’ বেশি সমস্যায় পড়েছে ছোট দোকানগুলি।
বিশেষ করে মফস্সল এলাকার। ছোট গয়নার দোকানের মালিক এবং অখিল ভারতীয় স্বর্ণকার সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার বলেন, ‘‘গত তিন দিন ধরে বউনিই করতে পারিনি। চাহিদা তলানিতে ঠেকার ফলে দোকানের মালিকেরা তো মার খাচ্ছেনই, বেশি সমস্যায় পড়েছেন কারিগরেরা। গয়নার বরাতের উপর মজুরি থেকেই তাঁদের রোজগার।’’ ব্যবসায়ীরা এখন মাঘ মাসের অপেক্ষায়। তখনই শুরু হবে বিয়ের মরসুম।
গয়নার চাহিদা অবশ্য বিশ্ব জুড়েই কমেছে। যার ফলে ভারত থেকে কমেছে গয়না রফতানি। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে তা কমেছে ৭.৭১%।