সোলেইমানি হত্যা: জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা, বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে
ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ডসের অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানি ইরাকে হত্যার পর ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু তেলের বাজার নয়, এ হত্যাকাণ্ডে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও বেশ তোলপাড় তুলেছে। মার্কিন ও এশীয় শেয়ারবাজারে দেখা গেছে মন্দাভাব।
অন্যদিকে স্বর্ণ, ইয়েন ও সরকারি সঞ্চয়পত্রের বাজারে দেখা গেছে বড়ো ধরনের উল্লম্ফন। অনিশ্চিত পরিস্থিতির আশঙ্কায় শেয়ারবাজারের বদলে স্বর্ণের মতো মূল্যবান ধাতু কেনার প্রবণতায় এমনটি তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যদি আরেকটি যুদ্ধ লেগেই যায়, সেক্ষেত্রে মুদ্রামান কমে যাবে এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশই আক্রান্ত হবে। মূলত ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে অঞ্চলটির আগামী দিনগুলোর পরিস্থিতি।
এই হামলার পরপর বিশ্বব্যাপী তেলের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে প্রায় ৭০ ডলারে পৌঁছেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দর।
সিএনএন এর সংবাদ অনুযায়ী ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড যুদ্ধে রূপ নেবে না। ছোটো-খাটো প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে তেলের দামে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলার পর জ্বালানির দাম প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে এটি স্থায়ী ছিল মাত্র ১১ দিন। পরে ৫৭ ডলারে নেমে আসছে ব্যরেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের অর্থনীতি এখন দুর্বল। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থাও অস্থির।
এ পরিস্থিতিতে বড়ো ধরনের পালটা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে না। তবে প্রতিক্রিয়া যাই হোক, তাতে এই অঞ্চলের তেলের উত্পাদনকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং তেলের দাম বাড়াবে। এর প্রভাব পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বে। ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরান যদি ইরাকের দক্ষিণ অঞ্চলে মার্কিন প্রভাবের তেল স্থাপনায় হামলা করে অথবা হরমুজ প্রণালিতে তেল চলাচলে বাধা দেয় সেক্ষেত্রে তেলের দাম ৮০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালে ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলো হতে রেকর্ড তেল উত্তোলন করা হয়েছে। দৈনিক গড়ে ৪৭ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলিত হয়েছে ইরাকে। বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরাকের দ্বিতীয় যুদ্ধের সময়কালে এক রাতের ব্যবধানে ১০ ডলার বেড়েছিল তেলের দাম। সেসময় অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়লেও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
কাসেম সোলেইমানি হত্যার পর ইরাকের তেল ক্ষেত্রে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরা দেশটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ইরাকের তেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, শুক্রবারের ঘটনার পর ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের মার্কিন কর্মীরা ঐ অঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের ইরাক ছাড়ার জরুরি বার্তা দেওয়ার পর দেশ ছাড়ছেন তারা। তবে ইরাকে অবস্থানরত অন্যান্য বিদেশিরা আগের মতোই অবস্থান করছেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে তেল ক্ষেত্রগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।