পুরুষদের ঝুঁকি বাড়ছে ব্রেস্ট ক্যানসারের! স্তনবৃন্তে অস্বস্তি, লালচে দাগ! অজ্ঞতা ডেকে আনছে মৃত্যু

স্তনবৃন্তের কাছে একটা মাংসপিণ্ড অবাঞ্ছিতভাবেই গজিয়ে উঠেছিল রাহুলের। আইটি সেক্টরের ঝকঝকে তরুণ ভেবেছিলেন র‍্যাশ ও চুলকানির কারণেই হয়তো মাথাচাড়া দিয়েছে ওই অস্বস্তিকর বস্তু।

টনক নড়ে কয়েকমাস পরে। স্তনবৃন্ত থেকে ক্ষরণ, রক্ত-পুঁজ দেখে ডাক্তারের কাছে গিয়ে আতঙ্কিত হতে হয়। ওই উপসর্গটা ছিল পূর্বাভাস, রোগটা স্তন ক্যানসার। কয়েকমাসে যা আরও ডালপালা মেলেছিল গোটা শরীরেই।

এই রোগের ঝুঁকি যে তাঁদেরও আছে, সেটা জানেনই না অধিকাংশ পুরুষ। স্তন ক্যানসার মানেই জনমানসে প্রচলিত ধারণা আছে শুধু মহিলারাই এই রোগের শিকার। তা কিন্তু একেবারেই নয়। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি পুরুষদেরও ততটাই বেশি। বরং বলা যায়, পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসারের সঠিক কারণ জানা না থাকায় এবং এই বিষয়ে সচেতনতার অভাবে রোগ হানা দেয় অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে যেখানে প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ৩-৪ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতেন, এখন সেই সংখ্যাটা অনেক বেশি। অ্যানথ্রোপলিজক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার গবেষণাপত্রেও ধরা পড়েছে পুরুষদের স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ছে এবং এই সমস্যার রেখচিত্রটা যথেষ্টই উপরের দিকে।


এই উপসর্গগুলোই জানান দেয় সতর্ক হতে হবে

স্তনবৃন্তের কাছে অথবা বুকে বা বগলে ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড

ধীরে ধীরে সেই মাংসপিণ্ডের আকার বড় হতে থাকা ও রঙের পরিবর্তন

স্তনবৃন্তে অস্বস্তি, লালচে দাগ, অনেকটা র‍্যাশের মতো

স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন, ভিতরের দিকে ঢুকে যাও

স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থের নিঃসরণ

ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চল্লিশ পেরোলেই অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে পুরুষদের। ষাটের বেশি বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা অনেক বেশি। তবে পরিবেশগত ও জিনগত কারণে কম বয়সীদের মধ্যেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, পুরুষ রোগীরা স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতন নন।

তাঁদের অধিকাংশই জানেন না যে এই রোগটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হানা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্টেজ-২ পেরিয়ে যাওয়ার পরে পুরুষ রোগীরা ডাক্তারের দ্বারস্থ হন। তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। আবার এমনও দেখা গেছে, অনেক বেশি দেরি করে ফেলার কারণে ক্যানসার কোষ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা শরীরেই। যার কারণে অন্যান্য অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।


চুপি চুপি হানা দেয়, আঘাত করে আচমকা

পুরুষদের স্তনের কোষ কম, তাই টিউমার হলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু অজ্ঞতার কারণেই সঠিক সময় এই রোগের নির্ণয় করা যায় না। সাধারণত দেখা যায়, স্তন গ্রন্থির কাছ থেকেই বাড়বাড়ন্ত শুরু হয় ক্যানসার কোষের। সাধারণ কোষের তুলনায় দ্রুত বিভাজিত হতে শুরু করে তারা। ‘মিল্ক ডাক্টস’-এর কাছে কোষ বিভাজিত হয়ে টিউমার তৈরি করে যাকে বলে ডাক্টাল কারসিনোমা (Ductal Carcinoma)। বেশিরভাগ পুরুষরাই ডাক্টাল কারসিনোমায় আক্রান্ত হন।

লবুলার কারসিনোমাতেও (lobular carcinoma) আক্রান্ত হতে দেখা যায় পুরুষদের, তবে এই রোগ বিরল।

কেন হয় পুরুষদের স্তন ক্যানসার–হরমোনের তারতম্য, জিন নাকি অন্যকিছু

পুরুষদের স্তন ক্যানসারের সঠিক কারণ অজানা। মহিলাদের স্তন ক্যানসার নিয়ে যতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা হয়েছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটা হয়নি। তবে ইদানীংকালে গোটা বিশ্বজুড়েই চিকিৎসক ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা পুরুষদের স্তন ক্যানসারের কারণ এবং তার চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। যে কয়েকটি কারণ প্রাথমিকভাবে সামনে উঠে এসেছে সেগুলো হল—

বয়স—বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ষাট পার হওয়াদেরই বেশি। তবে চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের পুরুষরাও বিপদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নন।

হরমোন থেরাপি—হরমোন থেরাপির জন্য যদি এমন ওষুধ নিয়ে থাকেন পুরুষরা যাতে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ বেশি হয় তাহলেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। প্রস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসায় কিছু বিশেষ ওষুধ নিতে হয় যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া উচিত।

জিনগত কারণ—পুরুষদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে জিনের একটা মারাত্মক প্রভাব আছে। মহিলাদের স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ জিনের মিউটেশনের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু পুরুষদের স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে বিআরসিএ১ জিনের প্রভাব অনেক কম। বিআরসিএ২-এর প্রভাবই বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিআরসিএ২ জিনের নতুন এক ধরনের মিউটেশনেরও প্রমাণ মিলেছে যার কারণে ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে পুরুষদের শরীরে।

লিভারের রোগ—লিভার সিরোসিস পুরুষদের স্তন ক্যানসারের অন্যতম বড় কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরোসিসের কারণে পুরুষ হরমোনের ক্ষরণ কমে স্ত্রী হরমোনের ক্ষরণ বাড়তে পারে। যার কারণেও ক্যানসার কোষের জন্ম হতে পারে।

স্থূলত্ব, অধিক ধূমপান—দেহের অতিরিক্ত ওজন আরও একটা কারণ হতে পারে। চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, হরমোনের ওষুধ খাওয়া, অতিরিক্ত ধূমপানও এই রোগের ঝুঁকি বা়ড়িয়ে তুলছে।

চিকিৎসকদের কথায়, মহিলা ও পুরুষদের স্তন ক্যানসারের উপসর্গ এক। অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপির মতো চিকিৎসা প্রক্রিয়া পেরোতে হয় মহিলাদের মতো পুরুষদেরও। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাব সমস্যাটা বাড়িয়ে তোলে। তাই সতর্ক হতে হবে শুরু থেকেই।

লজ্জা, সঙ্কোচ দূরে ফেলে সমস্যার কথা আলোচনা করুন, ডাক্তারের কাছে যান।

পুরুষরা শুনছেন তো!

Total Page Visits: 461 - Today Page Visits: 1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares