২ মাসেও রহস্য উদঘাটন হলো না বেনাপোল কাস্টমের লকারের স্বর্ণ চুরির

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: বেনাপোল কাস্টম হাউজের লকার খুলে ১৯ কেজি ৩৮০ গ্রাম স্বর্ণ, ১৯ হাজার ২৩০ ভারতীয় রুপি এবং ৩৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা চুরির ঘটনার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক বা চুরি হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাস্টমসহ ব্যবসায়ী মহল।

এদিকে কাস্টমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এখনও বহিরাগতদের দাপট থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবারও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, স্বর্ণ চুরির বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। চুরির পর কাস্টম হাউস ও চেকপোস্টের সামগ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মূল্যবান গুদাম পাহারার জন্য পৃথক সিপাই ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

জানা যায়, বেনাপোলসহ শার্শা সীমান্তেরও চেকপোস্টে আটক চোরাকারবারিদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ জমা রাখা হয় কাস্টম হাউজের লকারে। গত ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটির সময়ে লকার ভেঙে চুরি হয়ে যায় স্বর্ণ, রুপি ও টাকা। ১১ নভেম্বর সকালে অফিস খোলার পর চুরির বিষয়টি জানাজানি হয়। সকালে অফিসে এসে কর্মকর্তারা দেখেন কে বা কারা কাস্টমের লকার ভেঙে স্বর্ণ, ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশী টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। তবে লকারে থাকা আরও স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য সম্পদ অক্ষত অবস্থায় ছিল। আবার কক্ষটির পাহারার দায়িত্বেও কেউ ছিলেন না।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর পর কাস্টম, পুলিশ, ডিবি, পিবিআই ও র‌্যাবের ইনভেনটরি (চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের তালিকা) অনুযায়ী লকার থেকে ১৯ কেজি ৩৮০ গ্রাম স্বর্ণ, ১৯ হাজার ২৩০ ভারতীয় রুপি এবং ৩৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা চুরি যায় বলে জানা যায়। এ নিয়ে কাস্টম কর্তৃপক্ষ পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন।

পুলিশ চোর সন্দেহে প্রথমে কাস্টমের ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে গেলেও এক সপ্তাহ পরে তাদের ছেড়ে দেয়। মামলার কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় ২৭ নভেম্বরে মামলা চলে যায় সিআইডিতে। তবে দুই মাস পরও স্বর্ণ চুরির রহস্য উন্মোচন হয়নি। জড়িতদের কাউকে শনাক্তও করতে পারেনি পুলিশ।

বেনাপোল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, চুরির ঘটনা কাস্টমসের ভেতর থেকেই ঘটানো হয়েছে। চোরেরা আগে থেকেই দীর্ঘ দিন পরিকল্পনা করে এ ধরনের চুরি করার সাহস পেয়েছে। কারণ চুরির সময় গোটা কাস্টম হাউসের সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম থেকে কীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো, আর ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করে ম্বর্ণ, টাকা লুট করা হলো কীভাবে, সেটাই এখন তদন্ত কর্মকর্তাদের দেখা উচিত।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখন তথ্য-প্রযুক্তির সময় প্রশাসন যদি আন্তরিক হয়ে কাজ করে তাহলে চোর ধরা কোনও কঠিন বিষয় হওয়ার কথা না।

শার্শা উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জান লিটু বলেন, কাস্টমের অবহেলার কারণে সরকারের এ সম্পদ চুরির ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের এত বড় সম্পদ যারা অবহেলায় রেখেছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অপরাধী শনাক্ত করতে ব্যর্থ হলে আগামীতে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।

বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, এমন একটা চুরির ঘটনা এখন পর্যন্ত ধরা পড়লো না এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। স্বর্ণ চুরির ঘটনায় কাস্টমের সব অর্জনকে যেন ম্লান করে দিয়েছে। চোরকে দ্রুত ধরা দরকার। যেন আর কেউ ভবিষ্যতে সরকারের কোনও সম্পদ চুরি করতে সাহস না পারে। তবে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন জানিয়ে পুলিশ বলছে, রিপোর্ট পেলেই জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হবে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান বলেন, এখনও পর্যন্ত স্বর্ণ উদ্ধার বা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলাটি পোর্ট থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন তারা বিষয়টি দেখছেন।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ ও টাকা চুরির কোনো কিনারা হয়নি। এটি সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাজ। মনে হয় এই চুরির পেছনে কয়েক মাসের পরিকল্পনা ছিল। জরাজীর্ণ ভবনের কক্ষে প্রহরীবিহীন সিন্দুক রাখা রহস্যজনক। কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমাণ জব্দ করা স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের ব্যাপারে আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যশোর সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জাকির হোসাইন বলেন, উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই। তবে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে না।

Total Page Visits: 416 - Today Page Visits: 1

বেনাপোল (যশোর) করেসপনডেন্ট

Md. Jamal Hossain Mobile: 01713-025356 Email: jamalbpl@gmail.com Blood Group: Alternative Mobile No: Benapole ETV Correspondent

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares