নেই পোর্টেবল লেজার ডিটেক্টর, ইনফারেন্স থার্মোমিটার ও ইলেক্টনিক্স অনুবিক্ষণ যন্ত্র; নভেল ‘করোনাভাইরাস’: বেনাপোল চেকপোস্টকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে
সারা বিশ্ব যখন নভেল ‘করোনাভাইরাস’ নিয়ে আতংকিত তখন দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করলেও নভেল ‘করোনাভাইরাস’ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের একমাত্র ভরসা সেকেলের থার্মোমিটার। থার্মোমিটার দিয়ে কখনই করোনা ভাইরাস সনাক্ত করা যায় না। ‘করোনাভাইরাস’ সনাক্তের জন্য প্রয়োজন পোর্টেবল লেজার ডিটেক্টর এবং ইনফারেন্স থার্মোমিটার। এছাড়া ভাইরাসটি দেখতে গেলে প্রয়োজন হয় ইলেক্টনিক্স অনুবিক্ষণ যন্ত্র।
তারপরও নভেল ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। বেনাপোল চেকপোস্টের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি বিশেষ “আইসোলেশন” ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। বেনাপোল চেকপোস্টে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে ভারতীয়সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
একই সাথে এই পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে বাংলাদেশীদেরও। মোট কথা ভারত থেকে যে আসবে তাকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে মেডিকেল টিম। নভেল ‘করোনাভাইরাস’ নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোথাও শনাক্ত হয়নি। বাংলাদেশে যাতে এই ভাইরাস সহজে বিস্তার লাভ করতে না পারে সে জন্য সরকার রীতিমত সতর্ক। ইতোমধ্যে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার প্রতিভা ঘরাইয়ের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম বেনাপোল চেকপোস্ট পরিদর্শন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও ভ্রমণের কাজে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার দেশ-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে বিদেশিদের মাধ্যমে এ ভাইরাস বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ব্যাপক হারে। বেনাপোলের মাত্র ৮৪ কিলোমিটার দুরে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও শনাক্ত হয়েছে নভেল ‘করোনাভাইরাস’ আক্রান্ত রোগী। এরই মধ্যে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে থাইল্যান্ডের এক তরুণীর। বেনাপোল চেকপোস্টে গত ১৫ দিনে প্রায় আট হাজার যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও কারও দেহে নভেল ‘করোনাভাইরাস’ পাওয়া যায়নি। গত ১৭ জানুয়ারি হতে এ পরীক্ষা শুরু হয়।
চিকিৎসকরা থার্মালস্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। কারও শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকলে স্ক্যানার থেকে জোরে আওয়াজ হয়। তখনই তার কাছে শরীরের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তির জবাবে আশঙ্কাজনক কোন কিছু আছে মনে হলে মাস্ক ও গ্লোবস পরিয়ে স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কী করবে না করবে।
চেকপোস্টে প্রয়োজনীয় সরজ্ঞাম সংকট রয়েছে। নেই পোর্টেবল লেজার ডিটেক্টর, ইনফারেন্স থার্মোমিটার ও ইলেক্টনিক্স অনুবিক্ষণ যন্ত্র। সোয়াইন ফ্লু এর সময় যে থার্মালস্ক্যানারটি বেনাপোল চেকপোস্টে স্থাপন করা হয়েছিল সেটা দিয়ে এখনও চলছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ। তবে এ যন্ত্রটি নস্টের যে অভিযোগ উঠেছে। সে বিষয়ে সেখানকার একটি মেডিকেল টিমে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন স্ক্যানারটি নষ্ট না। মনিটরটি নষ্ট। স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে কেউ প্রবেশ করার সময় তার শরীরে বেশি তাপমাত্রা থাকলে জোরে আওয়াজ করছে। কেবল মাত্র মনিটরে ছবি দেখা যাচ্ছে না। এতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ যিনি যাচ্ছেন তাকে তো সামনা সামনি দেখা যাচ্ছে। তারপরও অতিরিক্ত হ্যান্ড থার্মালস্ক্যানার সাথে রাখা হয়েছে। সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
নভেল ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধে বেনাপোল চেকপোস্টে চারটি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেক টিমে একজন করে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। সকাল ছয়টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দুটি ও বেলা ১২ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অপর দুটি টিম পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অশোক কুমার সাহা।
তিনি আরো জানান, মেডিকেল টিম, আইসোলেশন রুম, কন্ট্রোল রুম পারসোনাল প্রোটেকটিভ চিনিসপত্রসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব কিছুর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার মতো তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
ভারত থেকে আসা কয়েকজন পাসপোর্টযাত্রী জানান, নভেল ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য কর্মীদের আগাম সতর্কতাকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও লোকবল বৃদ্ধির করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত মাস্কও সরবরাহ করা দরকার।
বেনাপোল চেকপোস্টের মেডিকেল টিম প্রধান ডা: বিচিত্র মল্লিক জানান, চীনের নভেল ‘করোনাভাইরাস’ সারাবিশ্বে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আগত বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টযাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে। বিশেষ করে সন্দেহজনক ও বিদেশী নাগরিকদের স্পেশাল ভাবে দেখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যে সব যাত্রীদের দেখা হয়েছে তাদের শঙ্কামুক্ত হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আমরা সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম জানান, নভেল ‘করোনাভাইরাস’ আক্রান্ত কোন পাসপোর্টযাত্রী যাতে কোনো ভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে সহযোগিতা করছেন ইমিগ্রেশন পুলিশ। বিশেষ করে বিদেশী নাগরিকরা এ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পুলিশ তাদেরকে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করছেন।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলিপ কুমার রায় বলেন, থর্মোমিটারে শরীরের তাপমাত্রা নির্নয় করা যায়। আমরা তাপমাত্রা দেখে তারপর তার অন্য পরীক্ষা নিরিক্ষা করবো। তিনি বলেন একটি স্কানার আছে, সেটা নষ্ট বলে ঠিক করতে দেওয়া হয়েছে।
/ মোজাহো