অনিয়ম-দুর্নীতির ভারে নুয়ে পড়েছে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলাবাসী
দুর্নীতির চাদরে মুড়িয়ে আছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দেওয়ার নামে চলছে বড় ধরনের বাণিজ্য, হাসপাতালের জেনারেটরের তেলের টাকা থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি বছর লোপাট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা(ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমান ও প্রধান সহকারী অরবিন্দ ঘোষ এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিজের আয়েশের জন্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ব্যবহার করছেন ১৩১ নাম্বার রুম। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়েও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সিল সই ব্যবহার করেন ওই কর্মকর্তা।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা- এ পাঁচটি মৌলিক চাহিদা সরকারের কাছে সেবা হিসেবে পাওয়া মানুষের রাষ্ট্রীয় অধিকার। এর মধ্যে অন্যতম একটি সেবা হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। মানুষের জন্মগত এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং সেবা প্রদানের জন্য বর্তমান সরকার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে। কিন্তু কিছু অর্থলোভী ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছেনা।
অনুসন্ধানে জানাযায়, ৮ বিঘা জমির উপরে গড়ে উঠেছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু বর্তমানে দুর্নীতির ভারে নুয়ে পড়েছে হাসপাতালটি। এই দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে আছে স্বয়ং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা(ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা। প্রতিমাসে সরকারি কোয়ার্টার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামে বরাদ্দ দেখিয়ে হাসপাতালের কোয়ার্টার ব্যবহার করছে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। সরকারি কোয়াটারের একটি ফ্লাট ব্যবহার করে এক রুমের ভাড়া দিচ্ছে ডাক্তার, নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা।
হাসপাতালে জেনারেটরের ব্যবহার না করে তেল বাবদ প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা বিল করেও টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। হাসপাতালের ভিতরে আছে বিভিন্ন ফলজ গাছ। এসব গাছের ফল প্রতি বছর অর্ধ লক্ষ টাকা বিক্রি হলেও সরকারি কোষাগারে এক টাকাও জমা পড়েনা।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া সরকারি ভাবে নির্ধারণ ৮০০ টাকা। কিন্তু সেই ভাড়া ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রোগীদের। এছাড়া জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য সরকারি নির্ধারিত ফি ছাড়া অধিক টাকা গুণতে হচ্ছে আগত রোগীদের। প্রতিদিন শত শত রোগীদের কাছ থেকে ৮ টাকার টিকিট নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা এবং ৩ টাকার টিকিট নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা এমনই জানালেন আগত রোগীরা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্যাথলজিক্যাল বিভাগের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে এলেই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসোনোগ্রাম, রক্ত ও প্রস্রাবের বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও ব্যবহার না করার কারণে বর্তমানে মেশিনপত্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে রোগীরা সরকারি ওষুধ পান না বলে অভিযোগ। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রোগীরা অর্থদণ্ড ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ১টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও স্থানীয় মাইক্রো-চালকদের কাছে জিম্মি রোগীরা। সেই সাথে হাসপাতালটিতে পথ্য সরবরাহে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। এ জন্য রোগী প্রতি যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তা ব্যয় করেন না। এভাবে বরাদ্দের একটি অংশ অর্থ ঢুকছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পকেটে। পথ্য বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পাওয়া কমিটি যথাযথভাবে তদারকি না করায় তারা এ অনিয়ম করার সুযোগ পাচ্ছেন হাসপাতালের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা বলে জানালেন স্থানীয়রা।
হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতয়ের বিষয় অস্বীকার করলেন কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী অরবিন্দ ঘোষ। তিনি বলেন হাসপাতালে ফলজ গাছ কোন বছর ইজারা দেওয়া হয়না। এছাড়া সঠিক নিয়ম মেনে হাসপাতালের কোয়ার্টার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে কোয়ার্টার থেকে সরকার ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। এছাড়া বছরে ৫০ হাজার টাকা আসে জেনারেটরের জ্বালানি বাবদ সেই টাকা যথার্থ ভাবে ব্যায় করেন বলে জানান তিনি।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা(ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমানের কাছে হাসপাতালের অনিয়মও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে সকল বিষয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি অবগতনন। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে অতিদ্রুত তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতয়ের বিষয় আমলে নিয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন মোঃ হুসাইন শাফায়াত বলেন,অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রে আসে এবং আসবে। যেসব অভিযোগ আসবে সেসকল সমস্যা তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে অভিযোগ যে গুলো এসেছে অনেক গুরত্ব পূর্ণ এবং নজর দেওয়ার মত। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমাকে ব্যবস্থ্য নিতে হবে। আশাকরি কিছু দিনের ভিতরে ব্যবস্থা নিব।
/ এমডিআআ