উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ : সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে বেনাপোল চেকপোস্টসহ বন্দরের সর্বত্র
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশও রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ২৫টি দেশের নাম উল্লেখ করেছে, সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। যাত্রী যাতায়াতের দিক থেকে এখন উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। এমন খবরের ভিত্তিতে আবারো নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে জোরদার করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম।
সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে বেনাপোল চেকপোস্টসহ বন্দরের সর্বত্র। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হয়ে যে সকল দেশী-বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তাদেরকে স্বাস্থ্য বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কোন পাসপোর্টযাত্রী যাতে কোনো ভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে সহযোগিতা করছেন ইমিগ্রেশন পুলিশ। বিশেষ করে বিদেশী নাগরিকরা এ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পুলিশ তাদেরকে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করছেন। গত ১৭ জানুয়ারি হতে বেনাপোল চেকপোস্টে এ পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথমে পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও বর্তমানে ট্রাক চালক হেলপার ও রেল যাত্রীদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে কাস্টমস চেকপোস্টে সচেতনতার জন্য কাস্টম হাউজ বেনাপোলে করোনা ভাইরাস সচেতনতা সেমিনার করা হয়। উপজেলা প্রশাসনও প্রস্তুত্তিমূলক আলোচনা সভা করেছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি পাওয়া গেলে তাকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বেনাপোল চেকপোস্টের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি বিশেষ “আইসোলেশন” ইউনিট চালু রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বেনাপোল চেকপোস্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভারত থেকে আসা শতভাগ পাসপোর্টযাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া ইমিগ্রেশনের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতে দেওয়া হচ্ছে না। ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক-শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হচ্ছে একই নিয়ম। বেনাপোল রেল স্টেশনে রবি ও বৃহস্পতিবার ভারত থেকে আসা বন্ধন ট্রেনের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে।

বেনাপোলে দায়িত্বরত মেডিকেল টিমের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত (৫ মার্চ বেলা ৩টা পর্যন্ত) এক লাখ ৫২ হাজার ৯১ জন বাংলাদেশিসহ বিদেশি যাত্রী, ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে ভারত থেকে আসা এক লাখ ১৪ হাজার ৫০৫ জন বাংলাদেশি, ২৫ হাজার ৫৭৫ জন ভারতীয়, ৩১২ জন বিভিন্ন বিদেশী যাত্রী, ১১ হাজার ২৪১ জন ট্রাক চালক হেলপার ও ৪৫৮ জন রেল যাত্রী রয়েছেন। চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারত থেকে আসা দেশি বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী, প্রধান প্রবেশ দুটি গেটে (বাইপাস সড়ক ও প্রধান সড়কে) চলাচলকারী আমদানি-রফতানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালক ও হেলপার এবং রেলপথে চলাচলকারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বেনাপোল চেকপোস্টে চারটি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেক টিমে দুই জন করে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। স্বাস্থ্য সহকারি ও নার্স মিলে ২৪ জন পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ইউসুফ আলী। তিনি আরো জানান, মেডিকেল টিম, আইসোলেশন রুম, কন্ট্রোল রুম পারসোনাল প্রোটেকটিভ জিনিসপত্রসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব কিছুর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার মতো তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। বেনাপোল স্থলবন্দরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো দেয়া হবে।
বেনাপোল চেকপোস্টে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুমন সেন জানান, চীনের করোনা ভাইরাস সারাবিশে^ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আগত বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টযাত্রীদের থার্মোমিটারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নির্নয় করা হচ্ছে। আমরা তাপমাত্রা দেখে তারপর তার অন্য পরীক্ষা নিরিক্ষা করবো। বিশেষ করে সন্দেহজনক ও বিদেশী নাগরিকদের স্পেশাল ভাবে দেখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যে সব যাত্রীদের দেখা হয়েছে তাদের শঙ্কামুক্ত হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আমরা সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, ভারত থেকে আগত পাসপোর্টযাত্রীদের পাশাপাশি আমদানি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাকের চালক ও শ্রমিকরাও করোনা ভাইরাসের জীবানু বহন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। সে লক্ষ্যে আমরা বন্দর থেকে ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার দুটি গেটে মেডিকেল টিম বসিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
/ মোজাহো