দেশব্যাপীসব খবর

নবীগঞ্জের ইভা সৌদিআরবে নির্যাতনের শিকার দেশে ফেরার আকুতি

“আম্মা গো আমারে দেশে নেও, সৌদির অবস্থা একেবারে খারাপ। বেটিনতে কালি কান্দে, (নারীরা শুধু কাঁদে)। দেশে থাকতে ইন্টারনেটে যে দেখতাম সৌদিতে মানুষরে মারে, বেইজ্জত করে (নারীদের যৌন নির্যাতন করে), বাংলাদেশে থাকতে ইন্টারনেটের দেখা সকল দৃশ্যই বাস্তব, কিছুই ভুল নায়। অফিসে দিনের পর দিন যায়, রাইতের পর রাইত যায়, কেউ খানি (খাবার) দেয় না। দালালরা কয় (বলে) তোমরারে ২ লাখ টেকা (টাকা) দি কিইন্না (কিনে) আনছি। বাংলাদেশের অফিস থাকি কল দিয়া কয় আমরারে মারার লাগি, মাগনা আনছি নি, টেকা দি কিইন্না আনছি। একটা পুয়া (ছেলে) যে মাইর মারছে গো আম্মা, পরে কইছি আমারে যা কইবে তা করমু। পরে আমারে দিয়া ভিডিও করাইয়া দেশে দিছে। আম্মাগো আমারে বাচাঁও, সালামের লগে যোগাযোগ করো। আমারে দেশে নেও। নবীগঞ্জের ইভা বেগমের টেলিফোনে কথোপকথন এটি।

এভাবেই সৌদি থেকে বাংলাদেশী নারী শ্রমিক ইভা বেগম দেশে ফেরার জন্য স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে আকুতি জানাচ্ছেন। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রায় ৩ মাস পূর্বে মরুর দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমান নবীগঞ্জের এই নারী। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাকে বিক্রি করে দেয় দালালরা। এরপর থেকেই শুরু হয় তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সুযোগ পেলেই কল দিয়ে দেশে থাকা স্বজনদের কাছে আকুতি জানায় দেশে ফেরানোর জন্য।

নির্যাতনের শিকার ইভা বেগম নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর গ্রামের নূর হোসেনের স্ত্রী। বার বার মানবপাচারকারীর বাড়ী গিয়েও স্ত্রীকে ফেরত আনতে না পেরে হতাশ স্বামী নূর হোসেন হবিগঞ্জ মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নূর হোসেনের বাড়ীতে প্রায়ই যাতায়েত করতো তাদের পূর্ব পরিচিত নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা টুনাকান্দি গ্রামের সালাম মিয়া। আসা যাওয়ার সুবাধে ইভা বেগমকে প্রায়ই মোটা অংকের টাকার লোভ দেখাত। বিদেশ গেলে পরিবারের আর কোন অভাব অনটন থাকবে না বলেও প্রলোভন দেখাত সালাম।

দালাল চক্রের পাল্লায় পড়ে গেল বছরের ২৮ ডিসেম্বর মরুর দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমায় ইভা বেগম। সূত্রে জানা গেছে-সালাম মিয়া ভ্যালি ইন্টারন্যাশনাল নামের রাজধানীর এক ট্র্যাভেল্স এজন্সির মাধ্যমে দুই সন্তানের জননী ইভা বেগমকে নারী কর্মি হিসেবে সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে চাকরির পরিবর্তে তাকে বিক্রি করা হয়েছে অন্য এক দালাল চক্রের কাছে। দালাল চক্রের সদ্যসদের কথামতো অনৈতিক কাজ না করলে তার উপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। মোবাইল ফোনে ইভা বেগম দেশে থাকা স্বজনদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন এবং থাকে দ্রুত দেশে ফেরাতে আকুতি জানান। নির্যাতিত ইভা বেগমের স্বামী নূর হোসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রাম্য শালিস বিচারদের কাছে বিষয়টি জানালেও কারো ডাকে সাড়া দেয়নি সালাম। নূর হোসেন জানান- তিনি পেশায় একজন গাড়ী চালক। তাকে না জানিয়েই দালালদের পাল্লায় পড়ে হঠাৎ শ্বশুর বাড়ী গিয়ে সেখান থেকে সৌদি পাড়ি জমায় তার স্ত্রী ইভা।

নূর হোসেনের অভিযোগ- স্ত্রীকে দেশে ফেরাতে বললে নারী পাচারকারী সালাম ও জাহাঙ্গীর উল্টো ২ লক্ষ টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় তিনি ৩ জনকে আসামী করে হবিগঞ্জ মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্য আসামীরা হলো-উপজেলার লতিবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া ও প্রজাতপুর গ্রামের মামুন মিয়া। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান-নির্যাতনের শিকার ইভা বেগমের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কেউ তথ্যসহ অভিযোগ দেয় প্রশাসন তাকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং দালালদের ব্যবস্থা নেয়ারও আইন রয়েছে বলে জানান তিনি।

/ মোসেউ

হবিগঞ্জ ডিষ্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট

Md. Selim Uddin মোঃ সেলিম উদ্দিন গ্রাম- বাজকাশারা, ডাকঘর- নবীগঞ্জ ৩৩৭০, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ মোবাইল: 01711460048 ইমেইল: selimahmedpress18gmail.com এন আইডি নাম্বার :- ৩৬১৭৭৭৩৬৭৫৫১৩। রক্তের গ্রুপ :- O, positive SSC বর্তমানে স্থানীয় দৈনিক হবিগঞ্জ সময় www.dailyshomoy.com স্টাফ রিপোর্টার, জাতীয় দৈনিক দেশের কণ্ঠ সাপ্তাহিক সময়ের সত্যের সংবাদ পত্রিকায় নবীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি এছাড়াও An Tv (আলোকিত নিউজ টিভি), দৈনিক পত্রিকা, দৈনিক মুক্তপ্রকাশ, জেকে টিভি'র হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে বর্তমানে কাজ করছি এসএনবি নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম এর সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করছি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *