‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ থাকার জন্য ভারত ফেরত যাত্রীদের হাতে সিল : স্বাস্থ্য সামগ্রী সংকটে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্মীরা
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিশেষ সিল মারা হচ্ছে। ভারত থেকে আসা যাত্রীর হাতে প্রবেশ তারিখ ও বিশেষ সিল দিয়ে ১৪ দিনের ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশ ও ইমিগ্রেশন পুলিশ রবিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জীবন বাজি রেখে বেনাপোল বন্দরে পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীরাই রয়েছেন সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঝুঁকিতে। একই ঝুঁকি রয়েছে পাসপোর্টযাত্রী তদারকিতে নিয়োজিত পুলিশ ও বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় তা প্রতিরোধে দুই দেশের সরকার বেশ কিছু সর্তকতা নেয়। এতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন, রেল ষ্টেশন ও আমদানি-রফতানি পণ্য প্রবেশদ্বারে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় চেকপোস্ট বসানো হয়। এসব স্থানে স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরাও। এছাড়া পাসপোর্ট যাত্রীদের তদারকীতে রয়েছেন আনসার, আর্মস ব্যাটালিয়ন পুলিশসহ বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থা। প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সাথে তাদের কথাবার্তা ও পাসপোর্ট দেখভাল করতে হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যাপ্ত মাস্ক, হ্যান্ড গেøাভস ও পোশাক সরবরাহ না থাকায় তারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী মহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়ত ঝুঁকি ও ভয়ের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চালাতে হচ্ছে। কাজের সময় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন মাস্ক, হ্যান্ড গেøাভস ও পোশাক দেওয়া হচ্ছেনা। এছাড়া প্রতিদিন যশোর শহরের বাইরে থেকে তাদের বেনাপোল কর্মস্থলে নিজ ব্যবস্থায় আসতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা বা কোন খরচ তাদের দেওয়া হয় না। এতে তারা দূর্ভোগ ও ভয়ের মধ্যে আছেন।
পাসপোর্টযাত্রীদের তদারকিতে নিয়োজিত কয়েকজন আনসার সদস্য বলেন, তাদেরকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়নি। নিজ ব্যবস্থায় তারা মুখে কেবল মাস্ক ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ে পাসপোর্টযাত্রীদের সাথে কাজ করছেন। এতে তারা ও তাদের পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা: শেখ আবু শাহিন বলেন, সবাইকে কেরোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কবস্থায় রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য সামগ্রী সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে। তেমন সংকট নেয়। সবাই নিয়ম মেনেই চেকপোষ্টে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান তিনি।
সোমবার বিকালে বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমেগ্রেশন ও প্যাসেজ্ঞার টার্মিনালে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মী, ইমিগ্রেশন পুলিশ, আনসার সদস্য ও বন্দর সংশ্লিষ্ট ৬০ শতাংশ প্রতিনিধিকে মাস্ক, হ্যান্ড গেøাভস ও সেইভ পোষাক পড়তে দেখা যায়নি। অনেককে মাস্ক ও হ্যান্ড গেøাভস দেওয়া হলেও ব্যবহার না করার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দফতরের। ফলে চরম ঝুঁকিপূর্ন হয়ে উঠছে বেনাপোল চেকপোস্টসহ বন্দর এলাকা। আতঙ্ক বাড়ছে এলাকার মানুষের। ফলে বাড়ছে ঝুঁকি।
ভারত ফেরত বাংলাদেশি যাত্রী আরিফ হোসেন বলেন, ইমিগ্রেশনে আনসার, পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের দেখলাম অসতর্কভাবে তারা চলছেন। হাতে, মুখে ও শরীরে কোন নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই। এতে তারাও আক্রান্ত হতে পারেন, এমন কি তাদের মাধ্যমে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি।
ভারত থেকে আসা শিরিনা পারভিন ও মিজানুর রহমান জানান, তারা আজ ভারত থেকে দুপুরে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করার আগে তাদের হাতে পুলিশ সিল মেরে দেয়। এসময় তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলে বাড়িতে ১৪ দিন ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ থাকবে। কোন রকম ১৪ দিন বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না।
তবে স্থানীয়রা বলছে এদের হাতে যে সিল মারছে তা বেশী সময় স্থায়ী নয়। আর তাদের প্রশাসনিক ভাবে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বাড়িতে ১৪ দিন ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ থাকবে এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়।
মাদারীপুর জেলার আমির আলীকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন হাতে সিল মারার পর সে চেকপোস্ট চৌধুরী মার্কেটের সামনে এসে সাবান ছাড়া পানি দিয়ে ওই সিল ধুয়ে ফেলে। এতে তার হাতে সিলের কোন দাগ নেই।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের উপ-পরিদর্শক রাজ্জাক আলী বলেন, আমাদের হেড অফিস এসবি থেকে নির্দেশনা আসছে ভারত ফেরত যাত্রীদের হাতে সিল মারার এবং তাদের বাড়িতে ১৪ দিন ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ থাকার নির্দেশনা দেওয়ার। আমরা শুধু সেই কাজটি করছি।
এ সিল মেরে তারা বাড়িতে যেয়ে মানবে কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমাদের যদি কোন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করতে বলত আমরা সেই নির্দেশনা মেনে তাদের ১৪ দিন রেখে তদারকি করতাম।
স্থানীয় ফাইভ ষ্টার পরিবহনের ম্যানেজার আশাদুজ্জামান আশা বলেন, ভারত থেকে এখন মাত্র এক থেকে দুইশ’ যাত্রী আসছে। এর আগে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী এসেছে। তখন এই পদক্ষেপ এবং এদের কোয়ারেনটাইনে রাখলে নিরাপদ হতো।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও যাত্রীরা ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করছেন। যারা ভারতে গিয়েছিলেন এবং যারা বাংলাদেশে এসেছিলেন তারাই কেবল ঘরে ফিরছেন।
দুই দেশের সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারিতে নতুন করে সাধারণ যাত্রীদের দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
/ মোজাহো