সীমান্ত বন্ধ, চেকপোস্টে নীরবতা

বেনাপোল এখন জনশূণ্য। খাঁ খাঁ করছে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট এলাকা। সর্বত্র নীরব সুনসান। এ যেন অচেনা এক চেকপোস্ট।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এলাকার পরিবহন অফিসসহ বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ ও স্টোর নামীয় দোকানগুলো বন্ধ। রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাস, ইজিবাইক, রিক্সা ভ্যান নেই বা অন্য যানবাহন নেই স্ট্যান্ডে। বন্ধ হোটেলও। মালপত্র বহন করা শ্রমিকদের নেই কোন হাকডাক। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্র ও প্যাসেজ্ঞার টার্মিনালের সামনে যাত্রীদের লম্বা লাইনও নেই।

স্বাধীনতার পর থেকে দু‘দেশের মধ্যে এক ঘন্টার জন্যও পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত বন্ধ হয়নি। এমন একটি ভাইরাস রোগে (করোনা) সারা পৃথিবীর সাথে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিয়েছে বেনাপোল চেকপোস্টকে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকার ১৩ মার্চ বিকাল থেকে বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টযাত্রীদের ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি ও ভিসা স্থগিতের পর ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস ও খুলনা-কলকাতা বন্ধন ট্রেন সার্ভিস বন্ধ ঘোষনা করা হয়। এরপর ২২ মার্চ ভারতে জনতার কারফিউ জারি করা হয়। ২৩ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন করা হয় গোটা ভারত বর্ষে।

পেট্রাপোল বন্দর এলাকা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ২৭ মার্চ রাত থেকে। চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। অপরদিকে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে সাধারন ছুটিতে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। সেই সাথে পাসপোর্টযাত্রীও চলাচল বন্ধ ঘোষনা করা হয়। ছুটির সময় সীমা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কাউকে ভারতে ও ভারত থেকে কাউকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।

এর আগে চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমনে যে সব বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থান করছিলেন তারা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে দ্রæত দেশে ফিরে আসেন। তবে দুই দেশের মধ্যে বিমান, বাস ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কষ্ট করে ফিরতে হয়েছে নিজ নিজ এলাকায়। দেশে ফেরার সময় যাত্রীদের দুই দেশের ইমিগ্রেশনে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেশে আসতে হয়।

বেনাপোল থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, কুয়াকাটা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, গোপালগজ্ঞ, খুলনা পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য বন্দরে রয়েছে কয়েকটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার বাস। সেই ব্যবসা থমকে গিয়েছে। পাসপোর্টযাত্রীর উপর নির্ভরশীল এসব বাস সার্ভিস। যেহেতু যাত্রী যাতায়াত বন্ধ সে কারণে বাসও বন্ধ।

যাত্রীদের মালপত্র বহন করতে বন্দরের লেবাররা (কুলি) রয়েছে খুব কস্টে। যাত্রীদের অভাবে তাদেরও কোনও কাজ নেই। এক শ্রমিকের কথায়, ‘কী ভাবে পেট চলবে জানি না। আর ক‘দিন বন্ধ থাকলে না খেয়ে মরতে হবে’।

চেকপোস্ট থেকে বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে চলাচলকারী ইজিবাইকও (ব্যাটারি চালিত বাহন) বন্ধ। খলিলুর রহমান নামে এক ইজিবাইক চালক বলেন, লকডাউনের কারণে আমরা রাস্তায় নামতে পারছি না। রাস্তায় নেমেও লাভ নেই। কোন যাত্রী চলাচল করছে না। চেকপোস্টের সাথে যুক্ত মানুষজন ভাইরাসের থেকেও রুজি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন।

চেকপোস্টের জাহাঙ্গীর স্টোরের মালিক জাহাঙ্গীর বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। জানি এতে আমরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়বো। তারপরও আমরা চাই করোনা ভাইরাস থেকে আল্লাহ যেন সবাইকে হেফাজত করেন। বেঁচে থাকলে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। তবে এই সঙ্কটময় সময়ে আমাদের পরিবারের দিকে স্থানীয় প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার পাসপোর্টধারীযাত্রী দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন। এই পাসপোর্টযাত্রীদের চলাচলের সাথে হাজারো পরিবারের উপার্জন জড়িত। সবার আর্থিক বিষয়টি জড়িয়ে আছে এই চেকপোস্ট নিয়ে। চেকপোস্ট বন্ধে সবারই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার আজিম উদ্দীন বলেন, করোনা সংক্রমন এড়াতে বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, স্থলবন্দরের দুটি পণ্য প্রবেশদ্বার ও রেল স্টেশনে গত ১৭ জানুয়ারী থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ ভারত ফেরত দেশ, বিদেশি যাত্রী ও পণ্য বাহী ট্রাক চালককে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে যাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে এরা সবাই ছিল করোনা ঝুঁকিমুক্ত।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডল জানান, খেটে খাওয়া, দিনমজুরসহ যাদের আয় রোজগার বন্ধ তাদের তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়া হচ্ছে। যদি কেউ না পেয়ে থাকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়া হবে।

/ মোজাহো

Total Page Visits: 352 - Today Page Visits: 1

বেনাপোল (যশোর) করেসপনডেন্ট

Md. Jamal Hossain Mobile: 01713-025356 Email: jamalbpl@gmail.com Blood Group: Alternative Mobile No: Benapole ETV Correspondent

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares