ভারত ফেরত ৪৪ বাংলাদেশিকে বেনাপোল পৌর বিয়ে বাড়ি ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে আসা ৪৪ বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীর মধ্যে ৪০ জন যাত্রীকে বেনাপোল বলফিল্ডে অবস্থিত পৌর বিয়ে বাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে এবং ২ জন যাত্রীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ২ জন যাত্রীকে যশোর সদর হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের অধিকাংশই চিকিৎসার জন্য ভারত ভ্রমনে গিয়ে ভারত সরকার ঘোষিত লকডাউনের কবলে আটকা পড়ে দীর্ঘদীন ভারতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে থাকে।
ভারত ফেরত এসব যাত্রীরা ভারত লকডাউনের আগেই ট্যুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে যায়। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে ভারত বাংলাদেশি যাত্রীদের শর্ত সাপেক্ষে দেশে ফেরার অনুমতি দেয়। কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে স্বাস্থ্যসনদ গ্রহনের পর বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পশ্চিমবাংলা লকডাউনেরর পরও তারা দেশে প্রবেশের অনুমতি পায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত¡াবাধনে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন মানার শর্তে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন ৪৪ জন নাগরিক। এর মধ্যে ১৭ জন নারী, ২৬পুরুষ ও ১ জন শিশু রয়েছে। সোমবার (৬ এপ্রিল) বেলা ১২টার সময় ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করলে তাদের পাসপোর্টের কার্যক্রম শেষে বেনাপোল পৌর বিয়ে বাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও দুইজনকে যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখানে যাত্রীদের সব ধরনের দেখভাল স্বাস্থ্যকর্মীরা করবেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন, নাভারন সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান, বিজিবি‘র বেনাপোল ক্যাম্পের হাবিলদার আকরাম হোসেন, আনসার বাহিনীর কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান, বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খানসহ স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ নিরাপত্তায় দেশে ফেরত আসাদের ২টি এ্যাম্বুলেন্স ও দুটি মাইক্রোযোগে পৌর বিয়ে বাড়ি নেওয়া হয়।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে, তাদের দাবী এলাকায় বিদেশ ফেরতদের রেখে ভাইরাস ছড়িয়ে জনজীবন হুমকির মধ্যে ফেলতে চাই না। পরবর্তীতে পোর্ট থানা পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিক্ষোভকারীদের মানবিক দিক বুঝিয়ে ঘরে ফেরান।
ভারত হতে দেশে ফেরা নাগরিকদের প্রাথমিক ভাবে ইমিগ্রেশনের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। সকলের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। ২/৩ জনের তাপমাত্রা একটু বেশী থাকলেও চিন্তার কোন কারন নেই বলে জানালেন চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল টিমের ইনচার্জ ডা. শিমুল হাসান। ভারত ফেরতদের মধ্যে ৪ জন ক্যন্সার রোগি ও এক জন গর্ভবতী মহিলা রয়েছে যাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পুলিশি নিরাপত্তায় নিজ বাড়িতে রাখা হবে বলে তিনি জানান।
শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, ভারত থেকে যে সকল পাসপোর্টযাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করবে, তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তারপর তাদেরকে বাড়ি পাঠানো হবে। কেননা, তারা ভারত থেকে ফিরে নিজ নিজ বাড়ি গিয়ে সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিংবা চিকিৎসকদের পরামর্শ মানছে না। ১৪ দিন বাড়িতে অবস্থানের কথা বলা হলেও তা না মেনে, নিজেদের ইচ্ছে মত পাড়া-মহল্লা কিংবা হাট বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সে কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। সেজন্য দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক এই ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব সংবাদকর্মীদের ভারতে আটকে পড়া ৪৪ জন নাগরিককে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে দেশে ফেরার কথা নিশ্চিত করেন।
যশোর সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন বলেন, এখন থেকে যারা ভারত হতে ফিরবেন সবাইকে ১৪ দিনের জন্য বেনাপোলের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইরে রাখা হবে। তাদের দেখভাব করবেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। এখানে ভয়ের কিছু নেই। যাদেরকে রাখা হচ্ছে তারা সুস্থ্য। তবে কেউ আক্রান্ত হলে তার নমুনা সংগ্রহ করে বাইরে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হবে।
এ প্রক্রিয়ায় আরো বাংলাদেশীদের ফেরত আসার কথা রয়েছে বেনাপোল পৌর বিয়ে বাড়ি কমিউনিটি সেন্টারের স্থাপিত অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইন এলাকা পরিদর্শন করেন পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। এলাকাবাসীর বিরোধীতা প্রশ্নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখাদের মধ্যে কারো করোনাভাইরাসে আক্রান্তের নমুনা পাওয়া যায়নি। সবাই সুস্থ, সরকারী নির্দেশনায় ঝুঁকি এড়াতে এদের ১৪দিন পর্যবেক্ষনে রাখা হবে। তাই এলাকাবাসীর চিন্তিত হওয়ার কোন কারন নেই। সরকারী ভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা ব্যক্তিদের সার্বিক নিরাপত্তা, খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থাসহ নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হবে।
/ মোজাহো