দেশব্যাপীস্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাশিরোনামসর্বশেষসব খবর

কুড়িগ্রামে উপসহকারি প্রকৌশলী জুবাইদুলের মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন

হ্নদরোগ ও ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুবাইদুল ইসলাম (২৭) এর মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইনে কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাসের আশংকা উল্লেখ করায় তৈরি হয়েছে আতংক। তবে চিকিৎসক ও পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। জন্মগত হার্টের ফুটো সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভুগছিলেন।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী জানান, বুধবার (৮এপ্রিল) দিবাগত রাতে জ্বর ও বুক ব্যাথা উপসর্গ নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. মাঈনুদ্দিন জানান, সোমবার (৬এপ্রিল) জ¦র ও বুক ব্যাথা উপসর্গ নিয়ে আমার চেম্বারে আসেন। তিনি এবং তার স্ত্রী জানান, তিনদিন ধরে তার জ¦র ও বুক ব্যাথা নিয়ে বাসায় অবস্থান করছিলেন। বেশি খারাপ লাগায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসা হয়। এছাড়াও তার করোনার উপসর্গ আছে কিনা তার পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু করোনার কোন উপসর্গ পাওয়া যায়নি। বরং এটি ছিল তার ভাইরাসজনিত জ¦র। পরীক্ষা করে দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট ৯৮ হাজারের নীচে। সে কারণে সন্দেহ করা হচ্ছে সে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ছিল। এছাড়া তার হার্ট জন্মগতভাবে ফুটো থাকায় জটিলতা দেখা দেয়। তাদেরকে ইকো ও ডেঙ্গু টেস্টসহ ব্যবস্থাপত্র দিয়ে তিনদিন পর যোগাযোগ পরামর্শ দেয়া হলেও পরবর্তীতে তারা যোগাযোগ করেননি।

জুবাইদুলের স্ত্রী জুই আক্তার জানান, বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামীর হার্টে জন্মগত ফুটো রয়েছে। একারণে বুকের ব্যাথার সমস্যাটি মাঝে মাঝে হতো। সোমবার ডা: মাঈনুদ্দিন তার স্বামীর ইকো টেস্টসহ ডেঙ্গু টেস্ট করার পরামর্শ দেন। কিন্ত ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তার না বসায় পরীক্ষা করা হয়নি।

বাড়িতে থাকাকালিন তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বুধবার সকালে (৮এপ্রিল) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক করোনা আছে কিনা তার পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করেন। এরপর তাকে আইসোলেসনে রাখা হলেও কোন চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরে দুপুরে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। তবে তিনি দাবি করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে তার স্বামী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না।

কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও পৌরসভাস্থ পঁচার মসজিদ এলাকার অধিবাসী সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রায় ৬মাস ধরে প্রকৌশলী জুবাইদুল ইসলাম তার বাসায় ভাড়া ছিলেন। শুরু থেকে তিনি হ্নদরোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি
বেশি অসুস্থ্য হয়ে পরলে তার শ^শুর, শ^াশুড়ি ও ছোট ভাই এসে তার দেকভাল করছিলেন। তার ১১ মাসের একটি পূত্র সন্তান ছিলেন।

জানামতে করোনা সংক্রান্ত কোন উপসর্গ ছিল না। বুধবার গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে সঙ্গাহীন হয়ে পরলে তাকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর তার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ফেসবুক ও বেশ কিছু অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করায় করোনার আতংক ছড়িয়ে পরে। এনিয়ে পুলিশ বাসায় তদন্ত করতে আসে। সব মিলিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বকুল সাহা জানান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুবাইদুল ইসলাম তিন বছর আগে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রথম চাকুরীতে যোগদান করেন। তার পোস্টিং এরিয়া ছিল চিলমারী উপজেলায়। এছাড়াও তিনি উলিপুর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসিন্দা তিনি। বুধবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিকেল ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া হয়। পথিমধ্যে রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার (৯এপ্রিল) রাজশাহীর বাগমারায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

/ মইবা

কুড়িগ্রাম করেসপনডেন্ট

Phone: +88-01719-691-436

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *