করোনা: পাবনায় উৎপাদিত সবজি নিয়ে চরম বিপাকে কৃষক
করোনা পরিস্থিতিতে উৎপাদিত সবজি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পাবনার চাষীরা। ভাইরাস নিয়ে নানা অস্থিরতায় ক্রেতা না পাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে পারছেন না।
এ মৌসুমে উৎপাদিত সবজির ৩০-৩৫ ভাগই এখনও মাঠে রয়েছে। নিয়মমাফিক তুলতে না পারলে, বেশি দিন জমিতে থাকায় পচন ধরে কিছু সবজি। এতে চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে কৃষকরা। এদিকে খরিপ-১ মৌসুম এসে গেছে প্রায়। রবিশষ্য উঠে গেলেই শুরু হবে লাউ, চালকুমড়া, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, ভেন্ডি আর আবারো মূলার চাষ। আবার কেউ কেউ নতুন করে পাতাকপিও চাষ করবে।
এই অবস্থায় কৃষকরা প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে প্রান্তিক কৃষকের ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। এদিকে জমি চাষ নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ডিজেল ও চাষাবাদের যন্ত্রপাতির দোকান বন্ধ থাকায় জমিতে সেচসহ অন্যান্য চাষাবাদ কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ভাড়ইমারীর কৃষক বাদশা মিঞা জানান,তাঁর ৪ বিঘা জমির বেগুন, টমেটো আর ফুলকফির ৪০ ভাগই মাঠে রয়েছে। সবজির আড়তে ফড়িয়া না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না। লেবারও যায় না। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট করে ২ দিন আড়তে নিয়ে গেলেও ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারিনি। পানির দামে দিয়ে আসতে হয়েছে। এতে নিজেদের মজুরি ও ভ্যানভাড়াও উঠেনি।
বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক ও কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ জানান, কৃষকের অবস্থা শোচনীয়। ১,৬০০ টাকা মন দরের ভেন্ডি ৩০০-৪০০ টাকা, পেঁয়াজ প্রতিমন ৬০০-৮০০ টাকা এবং শশার মন ১০০ টাকা হয়েছে। ফুলকপি, পাতাকপি, মূলা ও লাল,সবুজ এবং পুঁইশাক কেনার ক্রেতা নেই। ঢাকার কাউরান বাজারে কয়েকদফা পাঠিয়ে লোকসান হয়েছে। যে কারণে সোসাইটির পক্ষ হতে ঈশ্বরদীতে প্রশাসনের মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজার প্যাকেট সবজি মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, ডিজেল চালিত সেচ মেশিনে কৃষকরা এই শুস্ক মৌসুমে সেচ দিতে পারছেন না। দোকান বন্ধ থাকায় ডিজেল ও কৃষি খুচরা যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে যে ক্ষতি হলো তাতে কৃষকের মাজা ভেঙ্গে গেল।
সামনে সবজি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে এই মূহুর্তেই কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ প্রণোদনা দানের জন্য সরকারের উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন। মুলাডুলির বৃহত্তর সবজি বাজারের আড়তদার আমিনুর রহমান বাবু জানান, বাইরে থেকে কোন ফড়িয়া আসছে না। স্থানীয়রা ঢাকার কাউরান বাজার, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সবজি নিয়ে গেলেও ক্রেতা না থাকায় সুবিধা করতে পারছে না। ভেন্ডির এই মৌসুমে প্রতিদিনই ১৫-২০ ট্রাক নিয়ম মাফিক আমদানি হচ্ছে। কারণ সবজি বা ভেন্ডি বেশীদিন মাঠে রাখার উপায় নেই।
১,৬০০ টাকা মন দরের ভেন্ডি ৩০০-৪০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল লতিফ জানান, রবি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে ১,২০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, শশা, পাতাকপি, করলাসহ অন্যান্য সবজি ৩০-৩৫ ভাগ সবজি এখনও মাঠে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এই সবজি ঢাকা, চিটাগাং, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালান হয়। বাইরে থেকে পার্টি না আসায় কৃষকরা বিক্রি করতে পারছেন না। এদিকে খরিপ-১ মৌসুম সমাগত। এই মৌসুমে লাউ, চালকুমড়া, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, ভেন্ডি আর মূলার চাষ হয়। আগাম ভেন্ডি ইতোমধ্যেই উঠে গেছে। এসময়ে ভেন্ডি বিক্রি করে কৃষকরা অনেক লাভবান হয়। ক্রেতা সংকটের কারণে দাম তলানিতে ঠেকেছে।
এই অবস্থায় সবজিতে ঈশ্বরদীতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
/ শেতার