করোনাজয়ী চিকিৎসক
‘ভেবেছিলাম, এই বুঝি জীবন শেষ। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও মনোবল শক্ত রেখেছি। ভরসা রেখেছি নিজের ও সৃষ্টিকর্তার ওপর। সচেতনতাই করোনা জয়ের মূলমন্ত্র। এতে করোনা জয় অবশ্যই সম্ভব। কোনো অসুখেই ভয় পেলে চলবে না।’
এটা করোনাযুদ্ধে জয়ী এক চিকিৎসকের কথা। তিনি বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেয়ে গত শনিবার (৯ মে) ঘরে ফিরেছেন। এখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৮ মে ফরহাদ হোসেনের শরীর থেকে দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৯ মে ফলাফল নেগেটিভ আসে। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনা শনাক্ত হলে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আলাদা একটি কোয়াটারে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিতে থাকেন।
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা উপসর্গের তথ্য গোপন করে এক রোগী ভর্তি হয়েছিল। যার পরবর্তীতে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া তিনি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় কোন করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে তাদের সংস্পর্শে এসে তার শরীরে করোনা ছড়িয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।’
চিকিৎসক ফরহাদ বলেন, ‘এপ্রিলের ১১ তারিখ আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাজমা শ্বাসকষ্টে ভোগা এক রোগী এসেছিলেন। যিনি ৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সন্দেহ হলে আমারা তার নমুনা সংগ্রহ করি। পরবর্তীতে তার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই মূলত আমার করোনা উপসর্গগুলো প্রকাশ পাওয়া শুরু হয়। ২৪ এপ্রিল টেস্টের জন্য নমুনা দিলাম। ২৫ এপ্রিল ফলাফল এলো পজিটিভ।’
ফরহাদ আরো বলেন, ‘করনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। খুবই ভয় পেয়েছিলাম। নিজের প্রতি ও আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সবাই সাহস দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ধরা পড়ার পর আইসোলেশনে চলে যাই। সেখানে চিকিৎসায় আস্তে আস্তে উপসর্গগুলো কমতে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমি যে মেডিক্যাল কলেজে লেখাপড়া করেছি সেই মেডিক্যাল কলেজের এক বড়ভাইও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে সুস্থ। তার দেওয়া পরামর্শ গ্রহণ করেছি। এবং আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল করোনা গাইডলাইন অনুসরণ করেছি। ওষুধের পাশাপাশি গরম পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে।’
করোনা জয়ী এই চিকিৎসক বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। সরকারের প্রণোদনা পাওয়ার আশায় ভুয়া রিপোর্ট বানিয়েছি এমন কথাও শুনেছি। তারপরও ভেঙ্গে পড়িনি। আমি জানতাম সচেতনতাই করোনা জয়ের মূলমন্ত্র। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে মানসিক সাহস জোগাতে হবে। এই ভাইরাসের অনেক স্তর আছে। বাংলাদেশে মৃত্যুহার কম। সঠিক সচেতনতার মাধ্যমে করোনা জয় করা সম্ভব।’