আদায় হচ্ছে না টিউশন ফি, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ, এসএমএস পাঠিয়ে টিউশন ফি পরিশোধের অনুরোধ, অর্থসংকটে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপাকে পড়েছে নিজ আয়ে চলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ ধরনের বেশির ভাগ স্কুলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। ফলে একধরনের মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো সমস্যায় না পড়লেও নিজস্ব আয়ে চলা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চরম অর্থ সংকটে পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের ফান্ড থেকে মার্চ মাসের বেতন দিলেও এপ্রিল ও মে মাসের বেতন এবং ঈদের উত্সব ভাতা প্রদান নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে মার্চ মাসের টিউশন ফি-ও নিতে পারেনি বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনার কারণে উভয় সংকটে এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ টিউশন ফি চাইলে সেটা অমানবিক হয়। আর বেশির ভাগ অভিভাবকও এই মুহূর্তে বেতন দিতে রাজি নন। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না। আবার শিক্ষকদের বেতন-বোনাস বাকি পড়লে সেটাও অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই মানবিক আবেদনের মাধ্যমে এসএমএস পাঠিয়ে বেতন চাচ্ছে।

রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সব অভিভাবকের কাছে টিউশন ফি পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য বন্ধের মধ্যেও টিউশন ফি পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। আরো কিছু প্রতিষ্ঠান এভাবে নোটিশ পাঠিয়েছে অভিভাবকদের মোবাইলে।

রাজধানীর রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে আছে। একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছি। তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু এখনো এডহক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, তাহলে টাকার অভাবে অনেককেই ঢাকা ছাড়তে হবে। কলেজটির সভাপতি শিক্ষাসচিব। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মনিবুর রহমান জানান, তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারের কাছ থেকে থোক বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়ে সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন।

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এক আদেশে টিউশন ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায়ের অনুরোধ জানানো হয় আদেশে। তবে গত শনিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোটাই টিউশন ফি নির্ভর। আমি অভিভাবকদের অনুরোধ করব, তারা যেন টিউশন ফি এর ব্যাপারটা বিবেচনা করেন।

জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমস্যা নেই। তবে বর্তমানে অর্ধলাখ কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। শিক্ষকরাও সামান্য টাকা বেতন পান। কিন্তু মার্চ মাস থেকেই এসব স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ৩০ হাজারের মতো স্কুল-কলেজ সরকারি ও এমপিওভুক্ত। তারা সবাই সরকার থেকে বেতন পান। কিন্তু ৬ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩ হাজার কলেজ সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে চলে। তারা চরম আর্থিক সংকটে রয়েছেন। দেশের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১০৫টিই বেসরকারি। বড়ো পাঁচ-সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ো অংকের ফান্ড রয়েছে। কয়েকমাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও তাদের চলতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাকিগুলো মাসে মাসে আদায়কৃত টিউশন ফি দিয়েই চলে। কিন্তু মার্চ মাস থেকে টিউশন ফি আদায় বন্ধ থাকায় তারাও বেশ সমস্যায় রয়েছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের এক সদস্য জানান, এভাবে চলতে থাকলে শুধু বেতন-ভাতা বন্ধ কেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম তা-ও ছাড়তে হবে।

অন্যদিকে ঈদের পর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হবে এমন একটি গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘৩০ মের পর যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার কথা কেউ প্রচার করে, তাহলে তা পুরোটাই গুজব। কারণ এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেয়নি।

Total Page Visits: 375 - Today Page Visits: 1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares