দেশব্যাপীজীবনশৈলীশিরোনামসর্বশেষসব খবর

বাসা বেঁধেছে শালিক, বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত চলবে না ট্রেনের ইঞ্জিন

নিশ্চয় আমাদের মনে আছে, সৌদি আরবে এক চালক তার ট্রাকটিকে কিছুদিন ফেলে রেখেছিলেন। পরে ট্রাক চালু করতে গিয়ে ইঞ্জিনে পাখির বাসা দেখতে পান। বাসায় পাখির ছানাও ছিল। উড়তে না পারা পর্যন্ত ট্রাক চালাননি সেই চালক। পরে বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচিত হন পাখি প্রেমী সেই ট্রাক চালক।

করোনা মহামারির এ দুঃসময়ে চারদিকে যখন শঙ্কা, মৃত্যু আর উদ্বিগ্নতা তখন তেমনি এক স্বস্তির ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনের লোকোশেডে।

প্রায় দুই মাস করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ আছে ট্রেন চলাচল। ফলে রেলের ইঞ্জিনগুলো পড়ে আছে রেলের বিভিন্ন লোকশেডে। তেমনিভাবে ৬৫ সিরিজের ০৭ নম্বর ইঞ্জিনিটি রাখা ছিল পার্বতীপুর লোকশেডে। দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ইঞ্জিনের মধ্যে বাসা বাঁধে এক জোড়া শালিক। সেখানে প্রায় দুই মাসের সংসারে ডিম থেকে জন্ম নেয় দুটি ছানাও।

বেশ নিরাপদ আর স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটছিল পাখি দম্পত্তির। বাচ্চারাও বেড়ে উঠছিল মা-বাবার আদর যত্নে। ১৪ মে (বৃহস্পতিবার) পঞ্চগড় অভিমুখী পণ্যবাহী পার্সেল স্পেশাল ট্রেনের ইঞ্জিন পার্বতীপুরে পরিবর্তন করার সময় ওই লোকমোটিভকে বাছাই করা হয়। ইঞ্জিনটিকে চালু করার চেষ্টা করা হলে মেকানিকদের চোখ যায় ইঞ্জিনের মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গায়। দেখা যায় সেখানে মা শালিক তার দুটি ছানাকে বুকের মধ্যে আগলে বসে আছে। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে উড়ে যায় মা শালিক। এ সময় ইঞ্জিন চালু করা হলে পাখির ছানা দুটি মারা যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে বিষয়টি জানানো হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

এ সময় পার্বতীপুর লোকশেডের ইনচার্জ কাফিউল ইসলাম নির্দেশ দেন, ছানাগুলো উড়তে শেখা না পর্যন্ত এ ইঞ্জিন না চালানোর। পাশাপাশি ইঞ্জিনটিকে কোনো প্রকার মেরামত না করারও নির্দেশনা দেন তিনি। পরে অন্য একটি ইঞ্জিন দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয় ট্রেনটিকে।

কাফিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কচি পাখির ছানাগুলোর কিচির মিচির আর্তনাদ তার হৃদয়ে আঘাত করে, তারা হয়ত বাঁচার জন্যই কান্নাকাটি করছিল তাই তাদের প্রতি মায়া থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ছানাগুলো দেখভালও করছেন কাফিউল, বাচ্চাগুলোকে যাতে কোনো হিংস্রপ্রাণী খেয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য ইঞ্জিনটিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছানাগুলোর যাতে কোন সমস্যা না হয় সব সময় খেয়াল রাখছেন কাফিউল। ছানারা বড় হয়ে মুক্ত আকাশে নিরাপদে ডালা মেলবে সেই প্রত্যাশা এই রেল কর্মকর্তার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *