জাতীয়দেশব্যাপীশিরোনামসর্বশেষসব খবর

আম্ফান : উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি ও পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। উপকূলীয় সব জেলা-উপজেলায় সতর্কতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। জরুরি চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ইত্তেফাক প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

খুলনা: আম্ফান মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা খুলনায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৬০৮টি কেন্দ্র মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ব্যাপত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিও।

বাগেরহাট: বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মে. মামুনুর রশীদ জানান, জেলায় মোট ৯৭৭টি আশ্রয়কেন্দ্র মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউটস, সিপিপির মোট ১১ হাজার ৭০৮ জন স্বেচ্ছাসেক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৫টি মেডিক্যাল টিম।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষায় মূল জেটিগুলো জাহাজশূন্য করা হয়েছে। বুম আপ করা হয়েছে ১৪টি গ্যান্ট্রিক্রেনও। এর আগেই বহির্নোঙরে বড়ো জাহাজ থেকে ছোটো জাহাজে পণ্য খালাস মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্ক সংকেত অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অ্যালার্ট-৩ জারি করেছে। তিনটি কনট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার ৫টি কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিকভাবে চালু রেখেছে।

বরিশাল : বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে মঙ্গলবার ভোর থেকে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর জনসাধারনকে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার মো. ইয়ামিন চৌধুরী জানান, বরিশাল বিভাগে ৬ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ প্রত্যেক ইউনিয়নে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে উপকূলের ৩ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পটুয়াখালী: পটুয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (দায়িত্বরত) সহকারী কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দুর্গতদের সহায়তার জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নগদ সহায়তা বাবদ ৫ লাখ টাকা এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ের জন্য ৩ লাখ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ৩২৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

হাতিয়া (নোয়াখালী): হাতিয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী লোকজনকে সরিয়ে আনতে ১৮৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।

ভোলা (দক্ষিণ): ভোলায় ইতিমধ্যে ১ হাজার ১০৪টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৯২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্টের ১০ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেছে।

শরণখোলা (বাগেরহাট): শরণখোলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ১৩০টি সাইক্লোন শেল্টার। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের বনরক্ষীদের। মেডিক্যাল টিম গঠনসহ বাতিল করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের ছুটি।

পিরোজপুর : জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গলবার দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জেলায় ২৩৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ১ হাজার ২৭৫ জন সিপিবির স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

মোংলা (বাগেরহাট): বিপদ সংকেত বৃদ্ধি পাওয়ায় মোংলা বন্দরে পণ্যবোঝাই-খালাস ও পরিবহনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বন্দরে বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘এলার্ট-৩’ জারি করেছে। মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত মান্নান জানান, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কয়রা (খুলনা): উপজেলা প্রশাসনের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি ও আলোচনা সভা হয়। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে খোলা হয়েছে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা জানান, কয়রায় ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং ১৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *