শেষ বয়সে ছেলের বউয়ের নির্যাতনে বাড়ি ছেড়ে বেনাপোল প্যাসেজ্ঞার টার্মিনালে ঠাঁই হলো বৃদ্ধা মায়ের
দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে শেষ বয়সে এসে এক বৃদ্ধা মায়ের জায়গা হয়নি ছেলে-বউয়ের সংসারে। বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চলতো বৃদ্ধা মায়ের উপর। তাই বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে বাড়ি ছেড়েছে মা। বড় আশা নিয়ে ভারতে ছোট ছেলের কাছে যাওয়ার জন্য বেনাপোলে চেকপোস্ট এসেছেন। নেই কোন পাসপোর্ট ভিসা। তারপরও ছোট ছেলেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হলেও তাকে নিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ছোট ছেলে। তারপরও হাল ছাড়েনি বৃদ্ধা মা। বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেজ্ঞার টার্মিনালের বারান্দায় বিছানা পেতে বসে শুয়ে দিন পার করছেন ওই বৃদ্ধা মা।

শুক্রবার (২৯ মে) বিকালে বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে এ মাকে দেখা যায়। দশ দিন ধরে অনাহারে-অর্ধহারে এখানেই তিনি পড়ে আছেন।
মা সুনতি হালদার জানায়, তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে বাবুল হালদার থাকে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ উপজেলার হলগাপাড়া মহেশপুর গ্রামে আর ছোট ছেলে ও দুই মেয়ে থাকে কলকাতায়। স্বামী নরেন হালদার থাকে ভারতে আর বাংলাদেশে বড় ছেলের সাথে থাকতেন তিনি। ছেলে বাবুল হালদারের সামনে তার স্ত্রী কথায় কথায় বিভিন্ন ভাবে তাকে শারিরীক নির্যাতন করতো। অবশেষে কষ্ট সইতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন ভারতে ছোট ছেলের কাছে যাবেন বলে। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় আটকে পড়ে আছেন সীমান্তের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে।

ছেলের বউ নির্যাতন করলেও পুলিশকে অভিযোগ দেয়নি কেন এমনটি জানতে চাইলে সুনতি হালদার বলেন, এসব কথা বললে পুলিশতো আগে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাবে। অনেক কষ্টে তাকে তিনি মানুষ করেছেন। পুলিশ তাকে মারবে, আঘাত পড়বে তার কলিজায়। সেটা তিনি দেখতে পারবে না বলে কাউকে বলেননি।
যে ছেলের প্রতি মায়ের এতটান সেই ছেলের সামনে ছেলের বৌ কি ভাবে মাকে মারধোর করে এটা ভাবতেই কস্ট হয়।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি মহাসিন হোসেন জানান, তিনি অফিস যাওয়ার পথে কদিন ধরে দেখছেন ওই বৃদ্ধ নারী প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে পড়ে আছেন। কয়েকবার খাবারও কিনে দিয়েছেন। বিষয়টি তিনি পোর্ট থানা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। এছাড়া তার পরিবারের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।
বেনাপোল প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের নিরাপত্তা কর্মী আমিরুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধ নারীর কষ্টের কথা শুনে তিনি ভারতে তার ছেলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তার ছেলে জানিয়েছে মাকে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। পরে ফোন কেটে দেন। আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
একজন বৃদ্ধা আজ ১০ দিন অনাহারে অর্ধহারে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের নীচে শুয়ে আছেন অথচ প্রশাসনের কেউ তাকে বাড়িতে পৌছে দেওয়া বা খোজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।
/ মোজাহো