রংপুরে আইনজীবিকে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন
রংপুরে জেলা ও দায়রাজজ আদালতের আইনজীবিকে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মামলার জের ধরে রংপুরে আইনজীবি আসাদুল হককে (৬০) দিনে-দুপুরে হত্যা করেছে প্রতিবেশী রতন মিয়া (২২)। স্ত্রীর করা নারী নির্যাতন মামলায় সহযোগিতা করা ও রাস্তায় দেখা হলে খারাপ ভাষায় গালমন্দ করায় রতন ওই আইনজীবিকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
আইনজীবি হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ রতনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার আরেক সহযোগী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, উপ-পুলিশ কমিশনার কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান।সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ৫ জুন শুক্রবার রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রবীন আইনজীবী ও সাবেক এপিপি আসাদুল হক নিজ বাড়ি নগরীর ধর্মদাস বারো আউলিয়া এলাকা থেকে মর্ডাণ মোড় যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হন।
এ সময় রতনকে ওই রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে আসাদুল হক রতনকে উদ্দেশ্য করে খারাপ ভাষায় গালি দেয়। রতন এর কোন উত্তর না দিয়ে বাড়িতে চলে আসে। এরপর বাড়িতে এসে প্রতিবেশী আইনজীবির বাড়িতে চুরি ও তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে রতন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারালো চাকু নিয়ে ওই আইনজীবির বাড়িতে অবস্থান করে সে।
আসাদুল হকের ড্রয়ার থেকে ৭ হাজার ৩১৭ টাকা চুরি করে আসাদুল হকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আসাদুল হক শয়নকক্ষে প্রবেশ করলে ওৎ পেতে থাকা রতন তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে কয়েকবার আসাদুল হকের পেটে আঘাত করে। এ সময় রতনের নাম ধরে চোর চোর চিৎকার করলে রতন চাকু দিয়ে আসাদুল হকের গলায় কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আইনজীবির চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে রতন বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পার্শ্ববর্তী কচু ক্ষেতে লুকিয়ে থাকে। এলাকাবাসী রতনের হাতে চাকু ও রক্তমাখা শার্ট দেখে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। এরপর পুলিশ ৬ জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয় হত্যাকারীর।
এ ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামী সাইফুল ইসলামকে ৬ জুন গ্রেফতার করা হয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।উপ-পুলিশ কমিশনার আরও জানান, রংপুর কোতয়ালী থানায় রতন মিয়ার নামে একাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলায় আইনজীবি আসাদুল হক রতনের স্ত্রীকে সহযোগিতা করে। এতে করে রতনের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছিলো। এর আগেও রতন আসাদুল হকের বাড়িতে চুরি করেছে। যে চাকু দিয়ে আসাদুল হককে হত্যা করা হয়েছে সেটি ওই তার বাড়ি থেকে রতন চুরি করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শহিদুল্লাহ্ কাওসার, রংপুর কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার জমির উদ্দিন ও তাজহাট থানার ওসি (তদন্ত) রবিউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নিজ বাড়িতে খুন হয় আইনজীবি আসাদুল হক। অপরদিকে সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত আইনজীবীরা রোববার বিকেলে কোর্ট চত্ত্বরে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবী জানিয়ে মানববন্ধন সমাবেশ করেছে।
এতে বক্তব্য রাখেন, রংপুর জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রমাণিক, সহকারী পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন, রফিকুল ইসলাম মুকুল, প্রবীন আইনজীবি সাজ্জাদ হোসেন তাতাসহ আরো অনেকেই।
/ রাচৌ