জাতীয়জীবনশৈলীশিরোনামসর্বশেষসব খবর

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা নিয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসনের “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা”

জয়দেব রায়, বরগুনাঃ বরগুনা জেলার ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত হতে যাচ্ছে “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা” নামক প্রকাশনা। আগামী ১০ জুন ২০২০ তারিখ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গ্রন্থটির মোড়ক উম্মোচন করা হবে।

‘‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা” সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন ‘উপকূলীয় জেলা বরগুনার রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাস। এ জেলায় রয়েছে ৯নং সেক্টরাধীন বুকাবুনিয়া সাব সেক্টর। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হয়তো একদিন বিস্মৃত হয়ে যেতো মুক্তিযুদ্ধের বর্ণিল ঘটনা। তাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোক রচিত “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা” জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুজিববর্ষের অনন্য উপহার।

এই স্মৃতিকথা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অকাট্য দলিল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সহায়ক হবে।’

বলেন ‘এই বইয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ খুলে তাদের বীরত্বগাথা ব্যক্ত করেছেন। কি শুদ্ধতম দেশপ্রেমে উজ্জীবীত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ মাতৃকার টানে তাই ছড়িয়ে আছে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। এই স্মৃতিকথা মহান মুক্তিযুদ্ধের কেবল অকাট্য দলিলই নয় বরং পরবর্তী প্রজন্মকে যুগে যুগে দেশপ্রেমে উজ্জীবীত করবে।’

‘স্বাধীনতার পর থেকে নানান ঘাত-প্রতিঘাত ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে মুক্তিযু্দ্ধের বীরত্বগাথা ম্লান হয়ে হারিয়ে যেতে বসেছিল। যে রক্তের ঋণে আবদ্ধ এই বাংলাদেশ তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যই জেলা প্রশাসনের এই অনন্য উদ্যোগ। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা আবারো ফিরে গিয়েছেন ১৯৭১ এ। বুকফাটা বেদনা ও অশ্রুসিক্ত নয়নে তারা অসীম সাহসের সাথে অনিশ্চিতের যে পথে পা বাড়িয়েছিলেন সেসব কথাই ফুটে উঠেছে তাদের নিজেদের মুখে।

জেলা প্রশাসনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবলেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেশপ্রেমের মহান ব্রত নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। স্বাধীনতার এতবছরেও এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসক কর্তৃক এই উদ্যোগ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস তুলে ধরবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথার মাধ্যমে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বেঁচে থাকব এবং এটি মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসেবে বরগুনার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে।’

সহযোদ্ধাদের প্রাণের বিনিময়ে কিভাবে দেশকে শত্রুমুক্ত করে বিজয় এনে দিয়েছিলেন সেসব ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন। এসব বীর যোদ্ধারা কোন প্রসিদ্ধ লেখক নয়। তাই হয়তো উচ্চ মার্গীয় সাহিত্য রসে সমৃদ্ধ হয়নি বইয়ের পাতা। তবে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বুকের তাঁজা রক্ত ঢেলে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন তার রসে সমৃদ্ধ হয়েছে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা।

স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। সময়ের কঠিন বাস্তবতায় আমাদের অকুতোভয় প্রাণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা হারিয়ে যাচ্ছেন। তাই তাদের জীবন থেকে উৎসরিত এই স্মৃতিকথাই হয়তো তাদের সময়ের স্বাক্ষ্য দিবে, তাদের আত্মত্যাগের কথা বলবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আলোয় আলোকিত করবে।

মুজিববর্ষের প্রাক্কালে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাস সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে বরগুনা জেলা প্রশাসন নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। মক্তিযুদ্ধ নিয়ে এসব কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের নেতৃত্ত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক জনাব মোস্তাইন বিল্লাহ। দায়িত্ত্ব গ্রহণের পর থেকেই জেলা প্রশাসনের প্রাত্যহিক কাজের বাইরে তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এসব কাজ করে যাচ্ছেন পরম মমতায়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে একটি অনন্য কার্যক্রম হলো ‘মুজিববর্ষে মুজিবকে জানুন।’ এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরগুনা জেলার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শিক্ষা সফরের আয়োজন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট, সাংবাদকর্মী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি চমৎকার দল জাতির পিতার সমাধিস্থল ভ্রমণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানতে পারবে। নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হবে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হবে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সন্নিকটে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধে বরগুনাসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক স্মৃতি নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার এই জেলার একটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই জাদুঘর পরিদর্শন করে থাকেন। এর মধ্য দিয়ে শিশুদের কোমল হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রোথিত হবে।

বরগুনা জেলার অনেক স্থান মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে। যেমন ২৫ মার্চ গণহত্যার নিদর্শনসমূহ,এসডিও’র জেটি, সিএন্ডবি’র ডাক বাংলো টর্চার সেল, জেলখানায় ২৯ ও ৩০ এপ্রিল গণহত্যার স্থান, লাকুরতলা খেয়াঘাট, পাথরঘাটা সপ্ত শহিদের সমাধি ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এসব স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাবহুল ইতিহাস হয়তো কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতো। জেলা প্রশাসক এই স্থানসমূহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য সেই স্থানে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোক রচিত “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা” জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুজিববর্ষের অনন্য উপহার। বরগুনা জেলার ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ নামক প্রকাশনা। আগামী ১০জুন, ২০২০ বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গ্রন্থটির মোড়ক উম্মোচন করা হবে। স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। সময়ের কঠিন বাস্তবতায় আমাদের অকুতোভয় প্রাণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা হারিয়ে যাচ্ছেন। তাই তাদেরকে সময়ের সাথে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।

তাদের রণাঙ্গনের বীরত্বগাথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে হবে। এ লক্ষ্যেই এই প্রকাশনা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন থেকে উৎসরিত এই ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ তাদের সময়ের স্বাক্ষ্য দিবে, তাদের আত্মত্যাগের কথা বলবে। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আলোয় আলোকিত করবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অকাট্য দলিল হিসেবে সমৃদ্ধ করবে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ দেশের সকল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, গণ গ্রন্থাগার, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থাগার এবং জেলার মোট ১৫৭০টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরবরাহ করা হবে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আকর্ষণীয় ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন ম্যুরালটির ভাষ্কর শিল্পী দুলাল গায়েন। জেলা প্রশাসক কর্তৃক এই স্থানের নামকরণ করা হয় ‘মুজিব অঙ্গন’। এখানে জাতির পিতার জীবন ও কর্ম সম্পর্কিত বিশেষ ঘটনাসমূহের একটি টাইমলাইন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে যেন সকলেই জাতির পিতার জীবন, কর্ম, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানতে পারে।

/ জরা

বরগুনা ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট

MILI RANI RAHA Mobile: 01731341913 E-mail: joydeb6@gmail.com 20, Shar-e-Bangla Road, Barguna. Date of Birth: 06 December 1991 Father’s Name : Dipak Chandra Raha Mother’s Name: Purnima Rani Raha Blood Group: A- MA GPA-3.88

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *