কুড়িগ্রামে করোনা উপকরণ ক্রয়ের নামে এডিপি’র অর্থ হরিলুট
কুড়িগ্রামে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন প্রোগ্রাম (এডিপি)’র বরাদ্দকৃত অর্থ হরিলুট হবার অভিযোগ উঠেছে। করোনা দুর্যোগে সাধারণ মানুষের খাদ্য নিশ্চিত এবং মাঠ পর্যায় কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিদের সুরক্ষার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দিলেও সেই সুবিধা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
করোনা মহামারী দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন প্রোগ্রাম (এডিপি)-র ২০১৯/২০২০ অর্থ বছরের কুড়িগ্রামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউএনও’র বিরুদ্ধে। করোনা দুর্যোগ চলাকালীন মানুষের সহায়তার জন্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা একসঙ্গে আসার কারণেই এডিপি’র অর্থ হরিলুট করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফুলবাড়ি উপজেলায় একটি পিপিই’র মুল্য ৫ হাজার ২৭০ টাকা এবং ৪ হাজার ২৫০ টাকা দেখানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি জীবাণুনাশক টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। একই মানের পিপিই নাগেশ্বরী উপজেলায় সাড়ে তিন হাজার টাকা ক্রয় দেখানো হয়েছে। অথচ মাঠ পর্যায় কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সুরক্ষার জন্য দেবার কথা থাকলেও এখনো অনেক কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা তা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। তারা নিজ উদ্যোগে করোনা দুর্যোগে কাজ করছেন। আবার অনেকেই পিপিই পেলেও সেগুলো একদম নি¤œ মানের ২০০- ৩শ’ টাকা মূল্যের।
অপরদিকে রাজারহাট উপজেলায় এডিপির পুরো অর্থ ত্রাণ সামগ্রিতে ব্যয় করা হয়েছে। ত্রাণের প্যাকেটে দেখা যায়, স্টিমেট অনুযায়ী ৫৭ টাকার ডিটল সাবানের পরিবর্তে ২২ টাকার এবং এক কেজি সেমাই ৫৮ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নি¤œমানের চাল ও ডাল দেবার অভিযোগ রয়েছে।
এডিপি’র অর্থ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায়- ৬ লাখ এক হাজার টাকা, ভ‚রুঙ্গামারী- ৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা, রাজিবপুর- ৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা, চিলমারী- ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, ফুলবাড়ি- ৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা, নাগেশ্বরী- ৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা, রাজারহাট- ৪ লাখ ২ হাজার টাকা, রৌমারী- ৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং উলিপুর উপজেলায়- ৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা। জেলার ৯টি উপজেলার ৩টি পৌরসভাসহ ৭৩ ইউনিয়নের করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জীবাণুনাশক, বিøচিং পাউডার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গেøাবস, মাস্ক, এ্যান্টিসেপটিক সাবান, পিপিই এবং ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। যা ১৫ জুলাই’র মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম মঞ্জুসহ অনেকেই জানান, এডিপির অর্থে এসব বরাদ্দ আমরা জানি না। এখানে যে ত্রাণ সামগ্রি দেয়া হয়েছে তা সর্বোচ্চ ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকার হবে। এছাড়াও আমরা ওয়ার্ড ভিত্তিক যে তালিকা দেই সে অনুযায়ী ত্রাণ পাই না। চেয়ারম্যান কাছে গেলে তিনি বলেন বরাদ্দ থেকে ইউএনও স্যার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাদের জন্য রেখে দেন। সে অনুযায়ী সকলের চাহিদা প‚রণ করা সম্ভব না।
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার বলেন, এডিপি’র ত্রাণ সামগ্রির প্যাকেট কত টাকার সে বিষয় আমার জানা নেই।
তবে তিনি আরও বলেন, ইউএনও স্যার বিভিন্ন ত্রাণের চাল রেখে দিয়েছিলেন পরিষদে। সেগুলো কি করেছেন তা আমার জানা নেই।
নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, করোনা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন হতে আমার ব্যবহারের জন্য একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার পেয়েছি। এছাড়া গেøাবস, মাস্ক, পিপিই এগুলো কিছুই পাইনি।
ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বের আলী মুসা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হয়েছে। একটি ওয়ান টাইম পিপিই দেয়া হয়েছে ২শ /৩শ টাকার হবে।
ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডাঃ শামসুন্নাহার জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০টি পিপিই পেয়েছে। এরমধ্যে সাবেক ইউএনও একটি তার কাছে রেখে দিয়েছেন। এছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। তবে দু’টি সংগঠন থেকেও কয়েকটি পিপিই পেয়েছেন বলে জানান।
ফুলবাড়ি উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ জানান, আমরা শুধু স্টিমেট করে দেই। কিভাবে কোথা থেকে খরচ হয়েছে এটা ইউএনও এবং চেয়ারম্যান স্যার বলতে পারবেন। তবে তিনি পিপিই মুল্যের কথা স্বীকার করেন। এবং এগুলো উন্নত মানের হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকৌশলী বাদশার কাছে এডিপি’র অর্থ খরচের স্টিমেট চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও’র কাছে আছে আমার কাছে কোন কপি নেই।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ি উপজেলার সদ্য যোগদানকৃত ইউএনও তৌহিদুর রহমান বলেন, এডিপির অর্থ সম্পর্কে কিছু না জানলেও তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দেন।
প্রতিবেদক:
খাজা ইউনুছ ইসলাম ঈদুল
কুড়িগ্রাম সদর