দেশব্যাপীপরিবেশ ও সমাজসব খবর

খোকসাতে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন হলেও চলছে বিদ‍্যুতের ভেলকিবাজি

খোকসা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া জেলার খোকসা পল্লীবিদ‍্যুতের কিছু দুর্নীতি অনিয়ম বেড়েছে ভৌতিক বিলও নিজেস্ব টাকা দিয়ে মিটার ক্রয় করা সত্ত্বেও প্রতি মাসে গ্রহকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে মিটার চার্জ। অথচ গ্রাহক নিজের জায়গায় বিদ্যুৎ খুটি লাগিয়ে পল্লী বিদ‍্যুৎ বছরের পর বছর ব্যবসা করে যাচ্ছে সেটার চার্জ কিন্তু গ্রাহক পাচ্ছেনা এতে গ্রহকের জমির ক্ষতি হচ্ছে যাদের ফসলি জমি তাদেরও ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে।

১২১ টাকা বিলের মধ্যে ৪৬ টাকাই অতিরিক্ত ডিমান্ড চার্জ ৩০ টাকা, মিটার ভাড়া ১০ টাকা এবং ভ্যাট ৬ টাকা, মোট ৪৬ টাকা। প্রতি মাসে ১০ টাকা করে মিটার ভাড়া নেওয়া হয় খোকসা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিটার রিডিং এর গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি মিটার রিডিং না দেখে পল্লী বিদ্যুৎ নিজের মতো করে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল করেছে। থানা পাড়ার এক বাসিন্দার প্রতি মাসে বিল আসে ৬০০/ ৮০০ টাকা। কিন্তু করোনার এপ্রিল/ মে মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১৭০০ টাকা। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার ৮ দিন পর জুন মাসের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৩৬০০ টাকা। যা দেখে মাথায় হাত ঐ বাসিন্দার। খোকসা জানিপুরে খোকন মিয়া প্রতিমাসে বিল আসে তার ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কিন্তু গত মে মাসে বিল এসেছে ৩০০০ টাকা, খোকন মিয়া পল্লী বিদ্যুতের অফিসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন এই মাসের বিল দিয়ে দেন আগামীতে এডজাস্ট করে দেব!

পল্লী বিদ্যুৎ-এর সাব জোনাল অফিসে গড়ে উঠেছে এক বিশাল দালাল চক্র। অফিসগুলোতে দালাল ব্যাতিত কোন আবেদন গ্রহন করা হয় না। জনসাধারনের কোন সেবা পেতে হলে দালালদের নিকট শরনাপন্ন হতে হয়। যেখানে একটি আবাসিক নতুন সংযোগ নিতে গেলে সমস্ত খরচ সহ বাংলাদেশ সরকারের বিধি অনুযায়ী খরচ হবার কথা ৬১৫ টাকা। কিন্তু খরচ হয় ছয় হাজার টাকা। জোনাল এবং সাব জোনাল অফিসে স্টাফদের তুলনায় দালালদের সংখ‍্যা বেশী।

১২ জুন শুক্রবার পূর্ব ঘোষণা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘণ্টা পুরো শহরে বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু পরদিনই শনিবার সকাল ৯টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবার টানা তিন ঘণ্টা পুরো শহরে বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ। এছাড়া প্রতিদিনই গড়ে ৩/৪ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। ফলে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে জন-জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন বটতৈল ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপ-কেন্দ্রে গত ২০ মে বুধবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে ট্রান্সফরমারে আগুন লাগে। এসময় গ্রিড উপকেন্দ্রে কর্মরত কর্মচারীরা উপকেন্দ্র থেকে দৌড়ে নিজেদের আত্মরক্ষা করেন। ট্রান্সফরমার থেকে আগুনের লেলিহান শিখা ২৫/৩০ ফুট উচ্চতায় জ্বলতে থাকে। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বটতৈল এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতংক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ভীত সন্ত্রস্ত এলাকাবাসীর অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে যান অন্যত্র। খরর পেয়ে কুষ্টিয়া, কুমারখালী খোকসা ও মিরপুরসহ চারটি ফায়ার স্টেশনের ৯টি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই গ্রিড উপকেন্দ্রের ১টি ট্রান্সফরমার, ব্রেকার, আইসেলেটরসহ কয়েক কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে গ্রিড উপকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহ একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। ফলে ওই অগ্নিকাণ্ডে পুরো জেলাসহ আশেপাশের জেলার কিছু এলাকাও ছিল একটানা দেড় দিন অন্ধকারে। এদিকে ওই অগ্নিকাণ্ডের পর ১৫ কোটি টাকা মূল্যের নতুন ট্রান্সফরমারসহ অন্যন্য যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের পরও যাচ্ছে না বিদ্যুতের ভেলকিবাজি।

এর আগেও এই উপ-কেন্দ্রটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জন-জীবন। এছাড়া বিদ্যুৎ বন্ধের কারণে সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ অন্যান্য সেবা কেন্দ্রেগুলোতেও স্বাস্থ্য সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

বিদ্যুৎ গ্রাহক সাইফুর রহমান জানান, বিদ্যুতের অভাবে ওভারহেড ট্যাংকে পানি উঠাতে না পারায় হাইরাইজ বিল্ডিংসহ শহরের বসবাসরত মানুষ আছেন চরম দুর্ভোগে। এছাড়া হাজার হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও পড়েন বিপাকে। এই গ্রিড উপকেন্দ্রটিতে বার বার আগুন লাগার বিষয়টিকে গ্রাহকরা দুষছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, উদাসীনতা ও অবহেলাকেই। প্রতি বছরই বিপুল টাকা ব্যয়ে গ্রিড উপ-কেন্দ্রের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ-বাবদ কি কাজ সম্পন্ন করা হয় তা নিয়েও বিদ্যুৎ গ্রাহকসহ জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

ওয়েস্ট পাওয়ার জোন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী প্রণব দেবনাথ জানান, গ্রিড উপ-কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল দুর্ঘটনা। তবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজসহ যান্ত্রিক টিপের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ মাঝে মাঝে বন্ধ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

/ জুখা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *