দেশব্যাপীব্যবসা বাণিজ্যপরিবেশ ও সমাজজীবনশৈলীশিরোনামসর্বশেষসব খবর

চার কোটি ৯০ লাখ টাকায় হাট ইজারা নিয়ে এখন আর্থিক ক্ষতির মুখে ইজারাদার

চার কোটি ৯০ লাখ টাকায় হাট ইজারা নিয়ে এখন আর্থিক ক্ষতির মুখে ইজারাদার : আগে প্রতি হাটে ৫ হাজার পশু বেচাকেনা হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ১শ‘ থেকে ২শ‘তে

করোনা ভাইরাসে সর্বশান্ত করে দিয়েছে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল পশু হাটের ইজারাদারসহ হাট সংশ্লিস্ট জড়িত কয়েকশ‘ মানুষকে। করোনা ভাইরাসের আগে প্রতি হাটে ৫ হাজার পশু কেনাবেচা হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১শ‘ থেকে দুইশ‘তে। চার কোটি ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে হাট ইজারা নিয়ে এখন ভয়ানক আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছেন ইজারাদার।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে তিন মাস বন্ধ থাকার পর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে পশু হাট খোলা রাখলেও ক্রেতা বিক্রেতার অভাবে এখন লগ্নির টাকা কীভাবে পাবেন-এই চিন্তায় দিশেহারা ইজারাদার। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হাটের ইজারা মূল্য ৬০ শতাংশ কমিয়ে পূর্ণবিবেচনার আবেদন করেছেন ইজারাদার।

এই হাটের ইজারাদার নাজমুল হাসান বলেন, করোনা ভাইরাস আমাদেরকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। আগে প্রতি হাটে অন্তত ৫ হাজার পশু বেচাকেনা হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে দুইশ‘তে। প্রতি হাটের খরচ খরচা ৫০ হাজার টাকা ধরে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় হলে বছর শেষে হাট ডাকের (ইজারার) মূল টাকা তোলা সম্ভব। অথচ গত দু‘সপ্তায় চারটি হাটে উঠেছে যথাক্রমে ৩৮ হাজার টাকা, ৫৯ হাজার টাকা, এক লাখ টাকা ও এক লাখ ১৮ হাজার টাকা। মোট তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা আদায় হয়েছে।

নাজমুল বলেন, দশ বছর ধরে গরু হাট চালাচ্ছি এরকম অবস্থাই কখনো পড়িনি। দুই ঈদের আগে একমাস ধরে হাটে সর্বোচ্চ বেচাকেনা হয়। একটা ঈদ গেল, করোনায় তখন হাট বন্ধ ছিল। আর এখন হাটে ক্রেতা বিক্রেতা নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে আতœহত্যা করা ছাড়া আমার কোন গতি নেই।

শনিবার ও মঙ্গলবার সপ্তাহে দুই দিন এই হাট বসে। করোনার থাবায় এখন এই পশু হাটটি পশুশূন্য প্রায়। যশোর জেলা শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে বসে জেলার বৃহৎ বাগআঁচড়া সাতমাইল হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এই হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকার পশুর হাটে।

যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনেদা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে বিক্রির জন্য পশু আনা হয়। ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বেপারীরা এই হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় হাট বন্ধ ছিল তাই কয়েক হাজার পশু ব্যবসায়ীসহ পশু হাটের সাথে জীবিকায় নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ, কেনা-বেচার পাশ লেখক এবং স্বেচ্ছাসেবকরা পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়ে। ইদানিং হাট চালু করা হলেও ক্রেতা বিক্রেতার অভাবে হাট জমজমাট হচ্ছে না।

পশুহাটে কথা হয় চট্রগ্রামের ব্যাপারি মফিজুর রহমান ও সিলেটের আবু তাহেরের সাথে। মফিজুর প্রতিহাটে অন্তত পাঁচ ট্রাক গরু কিনলেও মঙ্গলবার তিনি মাত্র এক ট্রাক গরু কিনেছেন বলে জানালেন। করোনার কারনে এবার বিভিন্ন এলাকায় পশুর চাহিদা কম। দামও তুলনামূলক অনেক কম। তবে পরিবহন খরচটা আগের চাইতে বেশি।

অপর ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, ব্যবসায় এখন ভাটা চলছে। গরু কিনে হাটে নিয়ে বিক্রি করতি না পারলে পুঁজি হারাতে হবে, তাই সাহস করে গরু কিনতে পারছি না।

সামটা গ্রামের মাছুম বিল্লাহ গরু তাজা মোটাকরন খামার করে এখন বেকায়দায় পড়েছেন। ঈদ উল ফিতরের সময় তার ১২টা গরুর মধ্যে অন্তত ১০টা গরু বিক্রির আশা ছিল। করোনায় হাট বন্ধ ছিল তাই একটিও বিক্রি করতে পারেনি।

মাছুম বলেন,গরু নিয়ে পড়িছি মহা বিপদে। এখন হাটে নিয়ে আইছি। ব্যাপারি আসছে না তাই গরুও বিক্রি করতি পাচ্ছি নে। ব্যবসার সব টাকা গরুর খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন পশুখাদ্য কিনতি যেয়ে হিমসিম খাচ্ছি।

হাট কমিটির সদস্য আবু তালেব বলেন, হাটে গরু বেচাবিক্রি নেই। বাইরির পাটি না আসলি কেনবে কিডা ? ব্যাপারি না আসায় অনেক খেতোয়াল খরচ খরচা করে গরু হাটে আনছে না। দায় ঠেকে কিছু খেতোয়াল হাটে গরু তোলছে কিন্তু দাম পাচ্ছে না বলে ছাড়ছে না। তবে ঈদ আসার আগে কিছু গরু হাটে উঠবে বলে জানান অনেকে।

হাটে হাটে পশু বেচা-কেনায় সম্পৃক্ত পশু ব্যবসায়ী সাতমাইলের মন্টু মিয়া, আনসার আলী ও সোহরাব হোসেন জানান, তারা এক হাট থেকে পশু কিনে অন্য অন্য হাটে বিক্রি করেন। হঠাৎ করেই হাট বন্ধের পর আগেই কেনা পশু নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন তারা। এগুলো বিক্রি করতে পারছেন না।

সোহরাব হোসেন বলেন, করোনায় নিজের সংসারের খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে যেখানে হিমসিম খাচ্ছি, সেখানে পশুখাদ্য কিনবো কীভাবে ? ওদের খাদ্য দিতি না পারলি আবার দামও পাওয়া যাবে না। পড়িছি উভয় সংকটে। করোনার ভয়ে হাটে ব্যাপারি আসছে না। তাই বেচাবিক্রি নেই।

হাট কমিটির সহ-সভাপতি ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস বলেন, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ অন্তত ২০টি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারিরা আসেন এ হাটে। করোনায় তিন মাস ধরে হাট বন্ধ, এখন খোলা থাকলেও হাটে নামমাত্র পশু উঠছে, বেচাকেনা নেই, পুজিও হারিয়ে যাচ্ছে। হাটের খরচের টাকা দিয়ে যা পাচ্ছি তাতে কয়েক বছরেও লগ্নিকরা টাকা তোলা সম্ভব নয়। হাট কমিটির সভাপতি বাগআঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, ব্যবসায়ীরা সব ধরনের নিরাপত্তা পায় বলেই হাটটি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এলাকার তিন হাজার উপকারভোগী হাটের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ব্যবসায়ীদের থাকা খাওয়াসহ নিরাপত্তা, পশুখাদ্য সরবরাহ, ট্রাক বন্দোবস্ত ও হাটের শৃখংলা রক্ষার কাজে জড়িয়ে থাকার মাধ্যমে এদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। কিন্ত তিন মাস তারা কর্মহীন। মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

হাটের শুরু হয় বৈশাখ মাসে আর শেষ হয় চৈত্র মাসে। প্রতি বছর ১০০টি হাট পাওয়া যায়। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় তিনটি মাস শেষ হচ্ছে। আয় হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। সপ্তায় ১০ লাখ টাকা আয় হলে তবে আসল টাকা তোলা সম্ভব। করোনার কারনে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে এখন সবাই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সরকারি সহযোগিতা না পেলে হাটের সাথে যুক্তদের পথে বসতে হবে। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, ওনাদের আবেদন পেয়েছি কিন্তু আমাদের তো বিবেচনার সুযোগ নেই। এটা হাট ইজারা কমিটির ব্যাপার। আবেদনটা সংশ্লিস্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে সরকার বিবেচনা করলে আমরা সেটার বাস্তবায়ন করবো। ওনাদের লস হচ্ছে সেটা তো আমরা বুঝছি। তবে দেশ করোনা বিপদমুক্ত হলে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত সব সেক্টরের পাশে দাঁড়াবে সরকার।

মোঃ জামাল হোসেন, বেনাপোল, যশোর

/ মোজাহো

বেনাপোল (যশোর) করেসপনডেন্ট

Md. Jamal Hossain Mobile: 01713-025356 Email: jamalbpl@gmail.com Blood Group: Alternative Mobile No: Benapole ETV Correspondent

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *