সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে
সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার ও ৪টি পৌরসভার কয়েক লক্ষ মানুষ এখনো পানি বন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যদিও গত কালের চেয়ে কিছুটা পানি কমেছে ,বৃষ্টি পাত ও থেমে থেমে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাবিবুর রহমান জানান গত ২৪ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি পাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫০মিলিমিটার, ভারতের চেরাপঞ্জিতে বৃষ্টি পাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৬৬মিলিমিটার।
সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৯সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন এখনো পৌর এলাকার অনেক বাড়ি, দোকান, সড়ক পানির নিচে প্লাবিত রয়েছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও শাললা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। গত দুই দিন ধরে জেলা সদরের সাথে ৫ টি উপজেলা বিশ্বম্ভর পুর, তাহির পুর, জামাল গঞ্জ, দোয়ারা বাজার,ও ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলাগুলোর সাথে ও অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শাললা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেন জানান উপজেলার সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ১০ টি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম কবীর জানান ছাতক গোবিন্দ গঞ্জ সড়কের মুফতির গাঁও এর ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনের সড়কে পানি বেশি থাকায় যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলো তে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।
দোয়ারা বাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান এডিএম সোহেল মাহমুদ সাহেবকে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা দুর্গত দের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মি জানান তার উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় রোপা আমনের বীজ তলা ১৫১হেক্টর, সবজি ৩৫হেক্টর ও আউশ ৬৪১হেক্টর পানির নিচে প্লাবিত রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা সোহালা ,গরেরঘাট বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে,ফাজিল পুর জামে মসজিদ ভেসে গেছে, ও বিননাকুলি বাজারে ৪টি দোকান নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। সীমান্ত সড়ক চান পুর, বাগলি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৩৪৮৬টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ৩০কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ২৯০৮জন খামারী চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি গবাদি পশুদের নিয়ে আরো বেশি বিপাকে পড়েছেন, সেই সাথে গো খাদ্যের সংকটে কৃষকদের নিরঘূম রাত কাটছে। নলকূপ গুলো পানির নিচে প্লাবিত হওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
পানি বাহিত বিভিন্ন রোগের আশংকা রয়েছে। হাওর পাড়ের গ্রাম গুলোতে প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে বাড়ি ঘর হুমকির সম্মুখীন। কচুরিপানা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বিপিএম জানান বন্যার সময় যাতে চুরি, ডাকাতি না হয় সে জন্য ওসি দের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন ৩৪৫মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৬লক্ষ টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকল ইউএনও দের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজে ও দিনভর বন্যা দুর্গত দের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও তাদের খোঁজ খবর রাখছেন।
/ মোআসা