সুনামগঞ্জে আবারও বন্যার প‚র্বাভাস দিল পানি উন্নয়ন বোর্ড
সুনামগঞ্জে পর পর দু-বার বন্যা রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও বন্যার প‚র্বাভাস দিল সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত তিনদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি না বাড়লেও বৃহস্পতিবার থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। পাউবোর আবারও বন্যার প‚র্বাভাসে আতংক বিরাজ করছে হাওরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মাঝে।
সুনামগঞ্জে পাউবো জানায়, আগামী ২০/২১ জুলাই হতে পুনরায় জেলার প্রধান নদীসম‚হের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বৃদ্ধির এই প্রবণতা ৪/৫ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং সে সময়ে জেলার সুরমা,কুশিয়ারা,যাদুকাটা নদীর পানি সমতল কােথাও কােথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এর ফলে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং কোথাও কোথাও নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে সুনামগঞ্জে পাউবো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুক আইডি থেকে এই তথ্য আপলোড করেছে।
জানা যায়, ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল ও সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর কারনে জেলায় তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজার, জগন্নাথপুরসহ ১১টি উপজেলায় জেলা শহরসহ নিন্মাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে, কমিউনিটি ক্লিনিকে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে সকল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। আর পাহাড়ী ঢলে নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারনে ও নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এছাড়াও জেলার ছোট বড় পাচঁ শতাধিক হাট বাজার,উপজেলা পরিষদসহ অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ ও ব্যবসায়ীরা চরম দ‚র্ভোগে রয়েছে।
পানি বৃদ্ধি আর ঢেউয়ের কারণে জেলার হাওর পাড়ের সাত হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়েছে। বসত ঘরে পানিতে ডুবে যাওয়ায় গোবাদি পশু আর গোখাদ্য(খড়) নিয়েও বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক পরিবার।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার জহিরুল আলম জানান, সুনামগঞ্জে বন্যায় ১ লাখ ৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৩৩টি পরিবার রয়েছে। এপর্যন্ত ত্রাণসহায়তা হিসেবে ৮৬৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ১ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ২ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ২ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল বলছেন, ভারতের মেঘালয়,চেরাপুঞ্জি এলাকায় পাহাড়ি বন, গাছ নির্বিচারে ধংস করা হচ্ছে,তৈরী করা হচ্ছে সড়ক ও উন্নয়ন কাজ। ফলে সেখানে বৃষ্টি হলেই বাংলাদেশের ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে পাহাড়ী ঢল বিনাবাধায় সরাসরি চলে আসে। সেই সাথে প্রতিবছরের বন্যায় পলি জমে কমছে হাওরের নাব্যতা। উজানের পাহাড়ি বন বাঁচাতে না পারলে আগামীতে এই জেলার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই পাহাড়ী ঢলে থেকে বাচঁতে ও পরিবেশ রক্ষায় দু দেশে এখননি প্রয়োনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন সবাই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন,সোমবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে জেলার সুরমার পানি। তবে হাওরের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয় নি। আর আবারও আগামী ২০/২১জুলাই থেকে পুনরায় জেলার প্রধান নদীসম‚হের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
জেলার প্রতিটি উপজেলায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ। তিনি আরও জানান,প্রশাসনের সবাই বন্যার্তদের সহায়তায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে সেখানে আমাদের জানালে আমরা দ্রæত ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র খুলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবার, জিআর চাল, নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
/ মোঅসা