পুলিশের খাঁচায় বেনাপোলের শীর্ষ মাদক সম্রাট বাদশা মল্লিক
যশোর সীমান্তের মাদক সম্রাট হিসাবে বহুল আলোচিত বেনাপোল পোর্ট থানার মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি বাদশা মল্লিককে অবশেষে পুলিশের খাঁচায় ।
ঢাকার শেরে বাংলা থানার একটি জিআর মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বেনাপোল পোর্ট থানার রঘুনাথপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পোর্ট থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
বাদশা বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কেরামত আলী মল্লিকের ছেলে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় দুই যুগ ধরে মাদক সম্রাট বাদশার রাজত্ব বেনাপোল সীমান্ত জুড়ে।
বড় বড় মাদক ও অস্ত্রের চালান তার হাত দিয়ে পবেশ করতো দেশের অভ্যন্তরে।
তবে আশ্চার্যের বিষয় হলো, এতো বড় একজন মাদক সম্রাট হলেও সব সময় থাকতো ধরা ছোয়ার বাইরে।
সব সরকারের আমলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তার ছিল আধিপত্য বিস্তার।
তবে কখনো প্রশাসনের উপর মহলের চাপ পড়লে পালিয়ে যেত ভারতে আবার ভারতে চাপ পড়লে চলে আসতো বাংলাদেশে। দুই দেশে রয়েছে তার নাগরিকত্ব।
পঞ্চগড়ে পিকআপ পেল মৎস্যজীবি সমিতি
তবে এত ভয়ঙ্কর একজন মাদক সম্রাট প্রকাশ্যে রাজত্ব করলেও যেন আইনের লোকের কারো কোন মাথা ব্যাথা ছিলনা।
তার মাদকের চালান আটক হলেও তাকে রক্ষা করতে কাগজ কলমে দেখানো হতো পরিত্যক্ত।
এর পিছনে বাদশা ছিল কারো অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যম আর কারো ক্ষমতার হাতিয়ার।
তবে বছর ১০ আগে একবার পুলিশ তাকে আটক করলেও বিভিন্ন তদবিরে অবশেষে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
এদিকে মাদক সম্রাট বাদশা এতো ভয়ঙ্কর যে স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও তার বিরুদ্ধে লিখতে সাহস পায়না।
ছেড়ে দিতে হয় তাই পুলিশরাও ধরার ঝামেলায় যায়না।
স¤প্রতি দেশে যে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা হয় সেখানে বাদশাকে গ্রেফতারের নির্দেশ জারী হয়।
এসময় সে সীমান্ত পথে পালিয়ে যায় ভারতে। পরে আবার উপর থেকে নিচের মহল সবার ম্যানেজ করে ফিরে আসে এলাকায়।
তার এমন ক্ষমতার উৎস দেখে অবাক এলাকাবাসী। মুখ খুলতে সাহস দেখায় না কেউ।
কুষ্টিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫
গত ৫ সেপ্টেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানার ঘিবা সীমান্ত এলাকা থেকে ১১টি পিস্তল, ২২টি ম্যাগজিন, ৫০ রাউন্ড গুলি এবং ১৪ কেজি গাঁজাসহ
তিন অস্ত্র চোরাকারবারীকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।
পুলিশের খাঁচায় আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং গাঁজা ভারতের বনগাঁ থানার ভিড়া গ্রামের চোরাকারবারি
কোরবান আলী ও লাল্টু মিয়ার কাছ থেকে তারা নিয়ে এসেছেন।
এগুলো বাংলাদেশি মাদক সম্রাট বেনাপোলের নারায়ণপুর গ্রামের বাদশা মল্লিকের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল।
নড়াইলে মিথ্যা ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মামুন খান জানান,
বাদশার বিরুদ্ধে ঢাকার শেরে বাংলা থানার গ্রেফতার পরওয়ানা জারী থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।
কে এই বাদশা
ভারত সীমান্তবর্তী বেনাপোল পোর্ট থানার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত কেরামত মল্লিকের ছেলে বাদশা ফেনসিডিল চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা।
র্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক মাদক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলার এক তৃতীয়াংশ মাদক (ফেনসিডিল) তার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়ে থাকে।
রাজনৈতিক ভাবে কোন দল না করলেও সে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে যোগ দেন। পরে তিনি স্থানীয় এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের প্রিয়ভাজন হয়ে পড়েন।
গত বছর দু‘য়েক আগে বাহাদুরপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের এক জনসভায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতা তার বিরুদ্ধে কথা বললে
তিনি এমপিকে ত্যাগ করে বেনাপোল পৌর মেয়রের হাতে হাত মেলান। ২০১৬ সালের ৩১ মে রাতে তাকে আটক করা হয়।
ঢাকার রমনা থানার একটি ছিনতাই মামলার গ্রেফতারি পারোয়ানামূলে যশোর ডিবি পুলিশ তাকে পুলিশের খাঁচায় আটক করে।
তাকে পুলিশের খাঁচায় আটক করা হলে শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত বাদশাকে ছেড়ে দিতে পুলিশের ওপর নানাভাবে চাপ দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
ওই মামলায় জামিনের পর তিনি আবার এমপি দলে ঢুকে যায়।
গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিটসহ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েন তিনি।
এছাড়াও জনশ্রæতি রয়েছে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকার সাত খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেনকে ভারতে পার করে দেয়
সীমান্তের এই মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত এই বাদশা।
আর বাদশার কাছে পৌছে দেয় শার্শার শ্যামলাগাছি কামাল হোসেন ও মশিউর রহমান নামে ২ মাদক ব্যবসায়ী।
নূর হোসেন বেনাপোলের রঘুনাথপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি দেওয়ার আগে সীমান্তের চোরাপথে কড়াকড়ি থাকায় কামাল ও মশিউরের বাড়িতে দু‘রাত কাটায়।
এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর গা-ঢাকা দেন বাদশা। কিছুদিন পর আবার ফিরে আসেন এলাকায় এবং যথারীতি ফেনসিডিল পাচারের ব্যবসায় মনোযোগী হন।
নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত নূর হোসেনের সঙ্গে তার যোগাযোগ মূলত ফেনসিডিল চোরাচালান ব্যবসার সূত্র ধরে।
পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালের ২৪ মে যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে যশোরের শীর্ষ ১৪ মাদক ব্যবসায়ীকে ধরিয়ে দিতে
পুরস্কার ঘোষণা করেন তৎকালিন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। এদের ছবি দিয়ে পোস্টার তৈরি করা হয়।
এই তালিকার ১৩ নম্বরে নাম ছিল বাদশা মল্লিকের। তাকে ধরিয়ে দিতে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষনাও দেন পুলিশ সুপার।
পুরস্কার ঘোষণা করার আগে থেকে বাদশা ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যায়।
সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আস্তানা গেড়ে বসবাস করা অবস্থায় ধরা পড়ে ভারতের পুলিশের হাতে।
সেখান থেকে জামিন পয়ে আবার ফিরে আসে এলাকায়। কিন্তুু তার ব্যবসা বন্ধ হয়নি।
Pingback: লক্ষ্মীপুরে ডিজিটাল আইনে মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন - দ্যা বাংলা ওয়াল