যশোরে পুলিশ প্রহৃতের ঘটনায় তান্ডব, আ’লীগ নেতা বিপু মুক্ত
যশোরে পুলিশ প্রহৃতের ঘটনায় তান্ডব, আ’লীগ নেতা বিপু মুক্ত।
যশোরে পুলিশ সদস্যকে মারপিটের অভিযোগে পুলিশের হেফাজতে থাকা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
তবে আটকের পর সোমবার মধ্যরাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক সমাজের কথা’র প্রেসে
হানা দিয়ে কর্মরত দুই সংবাদপত্র কর্মীকেও মারপিট করা হয়েছে।
এই ঘটনায় পুলিশ সদস্য ইমরান হোসেন বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেছে।
এ মামলায় দুজনকে আটক দেখিয়ে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তারা হলো. কহরের চড়িপট্টি আব্দুল করিম সড়কের
মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহিনুজ্জামান তপু ও সদরের কিসমত নওয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে ইসলামুল হক।
এদিকে, মাহমুদ হাসান বিপুকে আটক ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মী জড়ো হয়।
তবে পুলিশ সুপারের দাবি, হামলা-ভাঙচুর নয়, আসামি আটকে অভিযান চালানো হয়েছে। তারপরও বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশলাইনে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান হোসেন সাদা পোশাকে
কেন্দ্রীয় শহিদমিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন।
যশোরে পুলিশ প্রহৃতের ঘটনায় এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন।
নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। পরিচয় পাওয়ার পরও তারা চড়াও হয়।
একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করে।
এ সময় অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয় পুলিশ। শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আসাদুজ্জামান জানান,
শহিদমিনার এলাকায় সাদা পোশাকে থাকা দু’জন পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন।
এ সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে মাহমুদ হাসান বিপু এগিয়ে যান এবং মীমাংসা করার চেষ্টা করেন।
তিনি মারপিটে জড়িত নন। পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের এই নেতাকে মঙ্গলবার বিকেল ৩ টার দিকে পুলিশ ছেড়ে দেয়।
পরে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাকে কোতয়ালি থানা থেকে সরাসরি জেলা দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যান।
সেখানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন মাহামুদ হাসান বিপু।
ঢাকা জেলা প্রশাসক কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন
তিনি বলেন, একটি ঘটনার মিমাংসা করতে যায় কিন্তু ভুল বুঝে তাকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে না যায় সে চেষ্টাই তিনি করেছিলেন।
এ ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীরা যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে তিনি অভিভূত। এটা তিনি কোনো দিনই ভুলবেন না।
এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন শহর আওয়ামী লীগের এই নেতা।
তবে, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তিনি অসুস্থবোধ করলে নেতৃবৃন্দ তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
যশোরে পুলিশ প্রহৃতের ঘটনায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
এদিকে থানা থেকে বিপু ছাড়া পেলেও তার সাথে নিয়ে যাওয়া অপর তিনজনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জহুরুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশকে জানিয়েছি বাকি তিনজনের কেউ এই ঘটনায় সম্পৃক্ত না হলে তাদের ছেড়ে দিতে হবে।
এ ঘটনার পর সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার,
যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আব্দুল খালেক, তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন,
পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, যুবলীগ নেতা মনসুর আলম, এমএম কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এবং
যুবলীগ কর্মী সোহাগের বাড়িতে অভিযান চালায় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা।
৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যশোর-চুকনগর মহাসড়কের কেশবপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে অবয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগ।
মণিরামপুর -চুকনগর সড়কে মণিরামপুর বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ করে।
যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সোমবার রাতে পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে
পুরাতন কসবাস্থ শহীদ মিনারে বসে এক নারীর সাথে গল্প করছিলেন।
এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সাথে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন।
নিজের পরিচয় দিয়ে ও পরিচয়পত্র দেখিয়ে পুলিশ কনস্টেবল ইমরান এর প্রতিবাদ করেন।
এসময় তারা তাকে শহীদ মিনার থেকে ধরে নিয়ে যায় পাশের আবু নাসের ক্লাবে।
সেখানে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপু উপস্থিত ছিলেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিপুসহ চার জনকে আটক করে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশ সদস্যকে মারপিট করে তারা আইন ভঙ্গ করেছে।
যারা ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপুকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
রংপুরে ১১ কোটি টাকার এলএ চেক বিতরণ
আর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি। তবে তারপরও বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের বাড়িতে ভাঙচুর হওয়া ও
এস এম মাহমুদ হাসান বিপুর আটকের সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় করতে যান জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময় শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইছালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান,
সোমবার রাতে যশোর শহরের হযরত গরীব শাহ রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে
পুলিশ সদস্যদের সাথে বাকবিতন্ডার জেরে পুলিশ বিপুসহ চারজনকে নিয়ে যায়।
বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও পুলিশ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেনি। একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার সুষ্ঠু মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন বিপু।
কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির কারণে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। আর নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর পুলিশ খতিয়ে দেখছে এবং
সেই সাথে পুলিশ তদন্ত শেষে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা।
Pingback: নোয়াখালী বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন: চলছে প্রচার-প্রচারণা - দ্যা বাংলা ওয়াল
Pingback: স্কুল খুলে দিতে বলছে ইউনিসেফ, ক্ষতির ভার বইতে পারবে না - দ্যা বাংলা ওয়াল