ঝুপড়ি ঘরে অন্ধ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আমেনার নয় বছর
ঝুপড়ি ঘরে অন্ধ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আমেনার নয় বছর। বাবারে একটু দয়া করে আমার ঘড়টা নিমার্ণ করে দেন।
আমার দুইটা নাতিন এতিম , মায়াডা সন্তান নিয়া ঘরে থাকবোনে। আমি তো মরেই যামু এমন আর্থনাত অন্ধ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আমেনা বেগমের।
স্বামীর সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৩.৫০শতাংশ জমিতে তার দুইটি ঝুপড়ি ঘর।
নয় বছর ধরে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের
৯নং ওয়াড বরামা জাম্বরীর টেক গ্রামের মৃত.আব্দুল হামিদের স্ত্রী আমেনা বেগম (৮০)। আমেনা বেগমের এক ছেলে সন্তান জলিল।
ঝুপড়ি ঘরে অন্ধ প্রায় পনের বছর আগে জলিলের বাবা মারা যায়। বাঁশের খুঁটির ওপর কাঠ আর টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘরটি।
তাতেই কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে আমেনা বেগমের পরিবার। নেই বিশুদ্ধ পানি কিংবা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা।
আগে অন্যের বাড়ীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছর ধরে শ্রবণ প্রতিবন্ধি,
অন্ধ আমেনা বেগম বিভিন্ন রোগ-শোক আর বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে পড়ছেন।
শাহজাদপুরে মিনি কারখানাসহ আগুনে ভস্মীভূত ৬ বসতঘর
জলিলের দিনমজুরি আর স্ত্রী রাশিদা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যেটুকু খাবার যোগাড় করেন তা দিয়ে খেয়ে-না খেয়ে কোনোরকমে চলছিল পরিবারটি।
গত বছরের জুলাই মাসে হঠাৎ জলিলও মারা যায়। মারা যাওয়ার সময় দুই ছেলে সন্তান, স্ত্রী ও মাকে জীবীত রেখে যান।
এতে সংসারে নেমে আসে করোনাকালীন মহামারি। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দুই ছেলের পড়াশোনা।
অর্থকষ্টের কারণে অন্ধ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আমেনার চিকিৎসাও করতে পারছেন না। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জলিল।
উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বজনদেরকে নিয়ে জীবন কাটে নিদারুণ অনটনে।
ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করা পরিবারটিকে দেখার মতো যেন কেউই নেই!
মঙ্গলবাল (১৯) জানুয়ারী এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আমেনা বেগম ও তার পরিবারের।আমেনা বেগম জানান, দীর্ঘ নয় বছর ধরে এই ঝুপড়িতে তাদের বসবাস।
এলাকার কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেয় না তাদের। সহায় সম্বল বলতে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া মাত্র ৩.৫০ শতাংশ জমি।
শেষ সম্বল ঝুপড়ি ঘড়টি নিমাণের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ঐ এলাকার এক ব্যক্তিকে। নাম মাত্র কয়েকটি খঁটি কিনেই দায় সারা।
তাই বাধ্য হয়েই ঝুপড়ি ঘর বেঁধে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাননি বলেও জানান এই বৃদ্ধা ।
জলিলের স্ত্রী রাশিদা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও অন্ধ শ্বাশুরীকে একা বাসায় রেখে
আমি বরমী সিট পাড়ায় একটি কারখানায় কাজ করে সংসার চালাই।
যশোর শার্শায় এনজিও কর্মি পরিচয়ে শিশু চুরি
এই নারী আরও বলেন, ‘বয়সের কারণে আমাকে কেউ কাজে নিতে চায় না। তাই যেদিন কাজে যেতে পারি না, সেদিন না খেয়েই থাকতে হয় সবাইকে।
শুনেছি সরকার নাকি গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কার কাছে গেলে সেই সহযোগিতা পাব জানি না।’
স্থানীয় তরুণ তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটি ঝুপড়ি ঘরে থাকছে। কয়েকদিন আগে আমেনা বেগমের একমাত্র ছেলেটি মারা যায়।
তারপর থেকে তাদের বিপদ আরও বেড়েছে। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন।
এমন একটি ঘর পেলে পরিবারটি একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
বরমী ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আলী আমজত পন্ডিত বলেন এ মহিলার কথা আগে কখনো কেউ বলে নাই। আমার কাছে আসলে অঅমি ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বরমী ইউনিয়ন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি আগে এই পরিবারটি সম্পর্কে জেনেছি।
তাদেরকে একটি সরকারি ঘরসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমার জোর প্রচেষ্টা থাকবে।’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমা মোস্তারী বলেন, ‘মুজিববর্ষে সরকার গৃহহীনদের জন্য পাকা ঘরের ব্যবস্থা করছে।
আমরা আমেনা বেগমের পরিবারের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
Pingback: শীতলক্ষ্যা খেয়া ঘাটে সবজির হাট - দ্যা বাংলা ওয়াল
Pingback: কুড়িগ্রামে ছিন্নমুল মাঝে এমপি পনির উদ্দিনের কম্বল বিতরণ - দ্যা বাংলা ওয়াল