অক্সিজেন সংকট পাবনা সদর হাসপাতালে ৭ জনের মৃত্যু
অক্সিজেন সংকট থাকায় পাবনা সদর হাসপাতালে ৭ জনের মৃত্যু।
পাবনায় তীব্র অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। গেল ২৪ ঘন্টায় অক্সিজেন সংকটে ৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন করোনা রোগী মারা গেছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, মৃত ব্যক্তিরা হলেন, পাবনা শহরের দিলালপুর ও গোপালপুর এলাকার নূরে আলম ও নাজমুল ইসলাম,
পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর গ্রামের মৃত আলহাজ দায়েন বিশ্বাসের স্ত্রী রাশিদা বেগম,
ঈশ্বরদী উপজেলার চরকুরুলিয়া গ্রামের মৃত কোরবান সরকারের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন,
চরমিরকামারী মাথালপাড়ার জয়েন উদ্দিন খানের ছেলে আমিরুল ইসলাম খান, শৈলপাড়া গ্রামের শাহীনের স্ত্রী রিমা খাতুন এবং
মুলাডুলি ইউনিয়নের চকনারিচা বাগাবাড়িয়া গ্রামের রিজু প্রামানিক। মৃতদের সবার বয়স ৭৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, হাসাপাতালের অক্সিজেন সংকটের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তালায় মোটর চোরের তিন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্বে থাকা একজন সিনিয়র চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পাবনা হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ ব্যপকভাবে বাড়ছে।
অক্সিজেন সংকট পাবনা সদর হাসপাতালে এসেও রোগীদের বাইরে থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাতেও সংকট কাটছে না।
এখন কোন রোগীর থেকে কেড়ে নিয়ে তো অন্যকে দেয়া যায় না। ঘাটতির কারণে ঠিকমত অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারায় রোগীরা মারা গেছেন।
মৃত্যু রাশিদা বেগমের ছেলে আলমগীর হোসাইন বলেন, আমার আম্মাকে রবিবার দুপুরে ঠান্ডা জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে
হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করেছিলাম। শুরু থেকেই অক্সিজেন সংকট ছিল। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
১০ বার বলার পরও তারা আমার মায়ের জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়নি। শেষে অক্সিজেন সংকট নিয়েই মায়ের মৃত্যু হলো।
তিনি আরো জানান, হাসপাতালের প্রতিটি রোগী প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে তার সামনে তিনজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ভাই মামুন হোসেন জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
আড়াই মাস পর বেনাপোল দিয়ে অক্সিজেন আমদানি শুরু
অনেক ভাল রোগীকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করে রেখেছে। আমার বোনকে ১২ দিন আগে ভর্তি করেছি।
পরেরদিন করোনা পরীক্ষার নমুনা দিলেও ১১ দিন অতিবাহিত হলেও ফলাফল পাচ্ছিনা।
যার কারণে আমাদের রোগী এখন সুস্থ্য হলেও এই ওয়ার্ডে ভর্তি করে রেখেছে।
এব্যাপারে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা: সালেহ মোহাম্মদ আলী জানান,
রোগীদের অনেকেই হয়ে শেষ সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। আসলে শেষ সময়ে একজন করোনা রোগী হাসপাতালে আসলে কিছু করার থাকে না।
যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই করোনা আক্রান্ত হয়ে শেষ সময়ে হাসপাতালে এসেছিল।
তিনি জানান, জেনারেল হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেন চালু না থাকায় অক্সিজেনের ব্যাপক সংকট দেখা দিচ্ছে।
হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে
একটি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা অক্সিজেন দেওয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তবে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট না হওয়ায় সেটি কোনো কাজে আসেনি।
বর্তমানে ২০৬টি ছোট বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও ৯১টি অকেজো। ১১৫টি দিয়ে কোনো মতে চিকিৎসা চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
ঠিকাদারের গাফিলতিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
শার্শার অবাধে চলছে জমজমাট তিন কার্ডের জুয়ার আসর
মেডিফোল্ড সিস্টেমে বড় বোতলে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে যে হারে রোগি বাড়ছে তাতে রোগীর চাপের সাথে পাল্লা দিতে আরো অক্সিজেন প্রয়োজন।
পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর বলেন করোনা সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এবং বিভিন্ন এলাকায়
মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের ফলে পাবনাতেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে।
প্রতিদিন অনেক রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। জনগণ সচেতন না হলে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু করার থাকবে না।
এদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও পাবনায় এখনো করোনার চিকিৎসায় তেমন অগ্রগতি হয়নি।
পিসিআর ল্যাবের অনুমোদন হলেও এখনো তা স্থাপন হয়নি। এছাড়া করোনা চিকিৎসায়
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় করোনার চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
পাবনা সদর আরিফপুর গোরস্থান অফিস থেকে জানা যায় পূর্বে যেখানে প্রতিদিম ২-৩টি লাশ দাফন হত,
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ৯-১০টি করে লাশ দাফন করতে হচ্ছে।

প্রতিনিধির তালিকা দেখতে ভিজিট করুন shopnotelevision.wix.com/reporters সাইটে।




Pingback: নড়াইলে ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ৭০ জন, মোট মৃত্যু অর্ধশত - দ্যা বাংলা ওয়াল