দেশব্যাপীআইন- আদালতজীবনশৈলীশিরোনামসর্বশেষসব খবর

কেরানীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় পা হারালো শিশুর, ডাক্তার আটক

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ কেরানীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় পা হারানো শিশুর পায়ের মূল্য লাখ টাকা! ভুয়া ডাক্তার আটক।

গ্রাম্য সালিসেই নির্ধারিত হলো কেরানীগঞ্জে আলোচিত কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় পা হারানো শিশুর ভবিষ্যত!
কোন মামলা-মোকাদ্দোকা না করার শর্তে স্থানীয় প্রভাবশালীরা শিশুর ডান পায়ের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন মাত্র এক লাখ টাকা।
গৃহহীন অসহায় পরিবারটি যেখানে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো তাদের একমাত্র ছেলে সন্তানটিকে ঘিরে,
সেখানে কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় সব স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেলো।

এক মাস বয়সী ফুটফুটে পুত্র অনিক এখন যেনো তাদের দীর্ঘশ্বাস। কি হবে ছেলের ভবিষ্যত?
কি ভাবে পাড়ি দিবে জীবনের দীর্ঘপথ? ছেলেইবা করবে কি ভবিষ্যতে?
নানা চিন্তায় এক দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে সীমা-আবুল বাসার দাম্পত্যি।

ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার আব্দল্লাহপুর কলাকান্দী মধ্যপাড়া এলাকায়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর সীমা-বাসার দম্পত্তির ঘর আলো করে জন্ম নেয় শিশু পুত্র অনিক।
জন্মের পর থেকেই শিশুটির কান্নাকাটি না কমায় জন্মের ৬ষ্ঠ দিন চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে স্থানীয় কবিরাজ ও
কথিত ডাক্তার কিশোর দেবের কাছে নিয়ে যায় তার মা-বাবা।

সেখানে কাবরাজ শিশুটিকে ঝারফুকের পাশাপাশি একটি ট্রাইজন নামক ইনজেকশন পুশ করে।
শিশুটিকে বাসায় নিয়ে এলে কান্না না থামায় দ্বিতীয় দিন আবারও সেই কবিরাজ এর নিকট নিয়ে গেলে
সেইদিনও আরও একটি ইনজেকশন পুশ করেন কবিরাজ।
এতে শিশুর পা ফুলে গেলে কবিরাজ নিজেই প্রথমে শিশুটিকে স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি করান।
সেখানে শিশু অনিক এর অবস্থা অবনতি হলে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে ডাক্তার শিশুটিকে ভর্তি করাতে না পেরে বাংলাদেশ স্পেশালাইড হাসপাতালে ভর্তি করার।
তবে সেখানে আইসিও না থাকায় ধানমন্ডিতে মাদার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখানে চিকিৎসক জানান শিশু অনিকের ডান পায়ের হাড়ে পচন ধরেছে।
এখন তার পা কাটা ছাড়া কোন উপায় নেই। অবশেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শিশুটির পা কেটে ফেলা হয়।

ছেলে অনিকের পা কাটার ২৩ দিন পর নির্মম ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রচার হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে।
থানার ওসি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারর পর্যন্ত সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দেন পরিবারটিকে, তবে এর পরই পাল্টে যায় সব চিত্র।
কবিরাজ ও কথিত ডাক্তারকে বাচাতে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

শ্রীপুরে রিসোর্টে এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু!

স্থানীয় খবির মেম্বার,তাইজুল ইসলাম, বাতেন, জাহাঙ্গীরসহ কিছু প্রভাবশালী মাতুব্বর মিলে ১ লক্ষ টাকায় মিমাংসা করে দেন ঘটনাটি।
পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেনো কোন দাবিদাওয়া না করতে পারে সে জন্য ভুক্তভোগী অনিকের বাবা-মার সিগনেচার নেওয়া হয় সাদা স্ট্যাম্পে।

শিশুর বাবা আবুল বাসার অভিযোগ করে বলেন, কবিরাজ না বলে ইনজেকশন পুশ করার কারনে আমার আদরের ধন আজ পঙ্গু।
আমার ছেলের মত কোন মানুষ হাতুড়ে চিকিৎসাকের নিকট না যায় আর কোন শিশুর পা হাড়াতে না হয়। এক লাখ টাকার বিনিময়
কেনো অপোষ হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকায় বসবাস করতে হবে,
আমরা গরীব মানুষ তাদের সাথে যুদ্ধ করে আমরা থাকতে পারবোনা। তবে আমি টাকা নয় ছেলের অঙ্গহানীর বিচার চাই।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মাদবর খবির মিয়া বলেন, শিশুটির বাবা আমার আত্মীয় কবিরাজ তার ভুলের সব ঘটনা সত্যি বলেছে এবং
কবিরাজ নিজে বাচ্চার চিকিৎসার সব খরচ দিবে বলে হাসপাতালে ভর্তি ও করিয়েছেন। জানতে পেড়েছি ২লক্ষ ১০ হাজার টাকার খরচ করেছে।
পরিবার আমাকে জানিয়েছেন পা কাটার পর নাকি সে মাদার কেয়ার হাসপাতালে টাকা পরিশোধ করে চলে এসেছে।
আরও এক লক্ষ টাকা ছেলের বাবাকে দেওয়া হয়েছে ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।

কবিরাজ দেব কিশোর ওরফে ধীমান সরকার নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি

একজন পল্লী চিকিৎসক ও আমার বাবা কবিরাজি করতেন বলে, তার কাছ থেকে শিখে আমিও উৎসাহ পাই এবং ঝাড়ফুক করে আসছি।
আমি প্রায় ৩৫ বছরধরে এ কাজ করছি। ওই শিশুটির বয়স যখন ৬ দিন তখন শিশুটিকে তার মা আমার কাছে নিয়ে আসলে
আমি তাকে নাভী শুকানো ও ঠান্ডা ভালো করার জন্য দুদিন ঝাড়ফুক ও দুটি ট্রাইজন ইনজেকশান পুশ করি।
পরে জানতে পারি যে তার পায়ে ইনফেকশন হয়েছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের দুর্গাপূজায় শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ

তার দাবী জম্মের পর থেকে তার ইনফেকশন ছিল। স্থানীয়রা মিমাংসা করে দেয় যে, শিশুটিকে চিকিৎসা বাবদ সকল খরচ আমি বহন করবো।
আমি তাই করেছি। প্রথমে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইড হাসপাতাল এবং
শেষে ধানমন্ডি মাদার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি।
শেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শিশুটির পা কেটে ফেলতে হয়। এতে আমার মোট ২ লাখ ২০ (বিশ)হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
পরে আরও এক লক্ষ টাকা দিলাম। এর পর আর কি থাকে আমি বুঝিনা।

কেরানীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় এব্যাপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,
ভুক্তভোগী পরিবারটি আমরা থানায় আনতে পারছিনা, কোন অভিযোগও করছেনা। আমরা ব্যাপারটা দেখছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির জানান, সংবাদ প্রকাশের পরপরই পুলিশ আসামিকে আটক করতে অভিযানে নামে।
পুলিশের দুইদিনের অক্লান্ত চেষ্টায় আসামি দেব কিশোর সরকারকে আটক করতে সক্ষম হয়।
ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কবিরাজ ও কথিত ডাক্তার দেব কিশোর সরকার পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

/ মোঃ শফিক চৌধুরী

http://shopno-tv.com, http://thebanglawall.com
প্রতিনিধির তালিকা দেখতে ভিজিট করুন shopnotelevision.wix.com/reporters সাইটে।
www.thebanglawall.com
দ্যা বাংলা ওয়াল, The Bangla Wall, www.thebanglawall.com
দ্যা বাংলা ওয়াল, The Bangla Wall, www.thebanglawall.com
www.thebanglawall.com
www.thebanglawall.com

One thought on “কেরানীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় পা হারালো শিশুর, ডাক্তার আটক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *