নড়াইল সদর আধুনিক হাসপাতলে নেই পৃথক ইউনিট
নড়াইল সদর আধুনিক হাসপাতলে নারী-পুরুষের নেই পৃথক ইউনিট, হাসপাতাল থেকেই ঝুঁকি বাড়ছে করোনা সংক্রমণের,
শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনীসহ বিজিবি ও পুলিশ
চল্লিশোর্ধ একজন পুরুষ রোগী বিছানায় বসা। বিছানায় তাঁর বামপাশে বসা দুই নারী। সঙ্গে লাগোয়া পাশের বিছানায় রোগীর মুখোমুখী বসা তিন নারী।
আরও তিনজন দাঁড়ানো। এক রোগীকে ঘিরে আছেন আটজন স্বজন। পাশের বিছানায় আরেক রোগীর ডান ও বামপাশে দুই নারী বসা।
পরের বিছানায় শ্বাসকষ্টের রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে মাথা টিপে দিচ্ছেন স্ত্রী। পায়ের কাছে বিছানায় বসা এক পুরুষ, দাঁড়িয়ে আছেন আরেক স্বজন।
নড়াইল সদর হাসপাতালের মূল ভবনের নিচতলায় ৪০ শয্যার করোনা ইউনিটে দেখা গেছে স্বজনদের এমন ভিড়।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানের রোগী, স্বজন, চিকিৎসক, নার্স ও
স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় এ ভোরের কাগজের প্রতিনিধির। ওয়ার্ডের প্রায় প্রত্যেক রোগীর শয্যার পাশে একাধিক মানুষ।
কেউ বসা, কেউ দাঁড়ানো। কেউ রোগী দেখতে এসেছেন, আবার কেউ রোগীর সঙ্গে থাকেন। ওয়ার্ডের বারান্দায়ও মানুষের ভিড়।
তাঁরা সবাই করোনা রোগীদের স্বজন। অন্য দুটি করোনা ইউনিটে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে তিনটি করোনা ইউনিটেই নারী ও পুরুষ রোগী পাশাপাশি বিছানায় থাকছেন।
পোরশায় ইউএনও’র লোক পরিচয়ে টাকা দাবি
করোনা ইউনিটে ৫৭ বছর বয়সী একজন রোগীকে সেবা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়য়া ছেলে। ওই ছেলে জানালেন, সকালে তিনি বাড়ি থেকে এসেছেন।
তিনি এবং তাঁর মা পালা করে দিনে ও রাতে এ রোগীর কাছে থাকেন এবং বাড়িতে যান। তাঁর গণপরিবহনে যাতায়াত করেন।
ওষুধ ও খাবার কিনতে বা অন্য প্রয়োজনে তাঁরা বাজারে যাচ্ছেন হরহামেশাই।
নড়াইল শহরের বাসিন্দা আরেক করোনা রোগীর স্বামী বলছিলেন, ‘আমি একাই স্ত্রীর সঙ্গে থেকে সেবা করছি। বাইরে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছি।

ওষুধ ও খাবার আনতে বাইরে যাচ্ছি। বাসায়ও যাচ্ছি। এভাবে হাসপাতলের করোনা ইউনিটে অবাধে ঢুকছেন ও বাইরে যাচ্ছেন স্বজনেরা।
এখানে সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। নেই করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনের উদ্যোগ।
এতে হাসপাতাল থেকেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। হচ্ছে সামাজিক সংক্রমণ।
এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে তিনটি করোনা ইউনিটে ৬০ শয্যা। আছে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিশেষায়িত চিকিৎসকেরা সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাই এ হাসপাতালে জেলায় শনাক্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ভিড় বাড়ছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে একই ইউনিটে নারী ও পুরুষ রোগী থাকায় নারী রোগী ও তাঁর স্বজনেরা জানালেন নানা অস্বস্তি ও বিব্রত পরিস্থিতির কথা।
নড়াইল সদর আধুনিক হাসপাতলে কয়েকজন রোগীর স্বজন ও স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, এই তিনটি ইউনিটেই নারী ও পুরুষ রোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট করা যেত।
করোনা ইউনিটে অবাধে প্রবেশ বন্ধ করা খুবই সহজ। রোগীর সঙ্গে একজন থাকবেন, তিনি বাইরে বের হতে পারবেন না।
অন্য স্বজনেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা ইউনিটের সামনে এসে রোগীর প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার বা অন্য জিনিসপত্র রেখে যাবেন।
এটি হাসপাতালের কর্মকর্তাদের একটু সদিচ্ছা ও উদ্যোগের ব্যাপারমাত্র।
পাবনার চাটমোহর সবার প্রিয় ডাক্তার অঞ্জন ভট্টাচার্য আর নেই
এসব বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এ এফ এম মশিউর রহমান বলেন, ‘সমস্যা আছে, চেষ্টা করা হচ্ছে সর্বোচ্চ।
অবাধে ঢোকা বন্ধ করবে কে ? দুজন আনসার সদস্য ডিউটি করছেন। কিছু কিছু রোগী আছেন একা চলতে পারেন না।
তাঁদের সঙ্গে একজন থাকতে হয়। তাঁদের বাইরে যাওয়ার কথা না।’
নারী ও পুরুষের পৃথক ইউনিটের বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের জায়গার স্বল্পতা রয়েছে । নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত এমন সমস্যা থাকবে।
নড়াইলে গত ২৪ ঘন্টায় ৭৫ জন করেনা আক্রান্ত হয়েছে । নড়াইল সদরে ৩৯ জন, লোহাড়ায় ৫ জন, ও কালিয়ায় ৩১ জন।
মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৪৮ শতংশ।
নড়াইল জেলার জন্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিববুর রহমান স্বাক্ষরিত আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে,
প্রজ্ঞাপনে ১লা জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে পরবর্তী ৭ জুলাই রাত ১২ পর্যন্ত জেলার সর্বত্র কঠোর লকডাউন পালিত হবে।
নড়াইল সদর আধুনিক হাসপাতলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার করোনাভাইরাস সংক্রামণের নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার
শতকরা ৩০ দশমিক ৪৮ জনে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ২ হাজার ৯২ জন ।
নড়াইলে চলছে কঠোর লকডাউন। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোষ্ট বসানো হয়েয়ে।
তার পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি টহল দিতে দেখা গেছে।

প্রতিনিধির তালিকা দেখতে ভিজিট করুন shopnotelevision.wix.com/reporters সাইটে।




Pingback: ভালুকায় লকডাউনে দ্বিতীয় দিনে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন - দ্যা বাংলা ওয়াল