জাতীয়ব্যবসা বাণিজ্যখাদ্য ও পুষ্টিসব খবর

পোড়াবাড়ির বিখ্যাত চমচমের ঐতিহ্য প্রায় দু’শো বছরের পুরোনো

সারা বাংলাদেশ জুড়ে নানা জায়গার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে খাবারের জনপ্রিয়তা। ঢাকার বাকরখানি খুব বিখ্যাত। রসমালাইয়ের জন্য নাম করেছে কুমিল্লা। একইভাবে টাঙ্গাইলের এক বিশেষ পরিচিতি তৈরি করে দিয়েছে চমচম। টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনি বাজারের মিষ্টির দোকানগুলোতে ঢুঁ মারলে দেখা যাবে, সারা দেশ থেকে চমচমের অর্ডার আসছে। পর্যটকরা চমচম কিনছেন আর স্থানীয়দের চাহিদা তো আছেই। অন্য দেশেও পাড়ি দেয় এই মিষ্টি। সব মিলিয়ে দোকানগুলো জমজমাট। 

তবে শহর নয়, জিভে জল আনা চমচমের জন্য বিখ্যাত টাঙ্গাইল জেলার একটি গ্রাম – পোড়াবাড়ি। টাঙ্গাইল শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে তার অবস্থান। পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির ঐতিহ্য প্রায় দু’শো বছরের পুরোনো। এক সময়ে ‘চমচমের রাজধানী’ হিসেবেও পরিচিত ছিল এই গ্রাম। লোকে বলে থাকেন, আসাম থেকে যশোরথ হালই নামের এক মুনি এসেছিলেন পোড়াবাড়িতে। তিনিই প্রথম গোরুর খাঁটি দুধ, চিনি আর ধলেশ্বরী নদীর জল দিয়ে বিশেষ উপায়ে চমচম তৈরি করেন। এখনও হালইরা এখানে চমচম বানিয়ে থাকেন। এছাড়া, ঘোষ এবং পালেরাও বংশানুক্রমিকভাবে চমচম তৈরির সঙ্গে যুক্ত। 

পোড়াবাড়ির চমচমের মূল উপাদান দুধের ছানা এবং চিনি। লালচে পোড়া ইটের মতো রং-এর মিষ্টি, ওপরে দুধের তৈরি মাওয়ার আবরণ থাকে। সবথেকে বেশি স্বাদ চমচমের ভিতরে মৌচাকের মতো ফাঁপা নরম অংশে। 

মজার ব্যাপার হল, পোড়াবাড়ির কোনো কারিগর অন্য কোথাও গিয়ে এতটা সুস্বাদু চমচম বানাতে পারবে না। বাংলাদেশের প্রখ্যাত জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী একবার বলেছিলেন, ব্রিটিশ আমলে সন্তোষের জমিদার পরিবারের এক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল কলকাতায়। পোড়াবাড়ি থেকে কয়েকজন দক্ষ কারিগর সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

কিন্তু তাঁরা এখানকার মতো উন্নত মানের চমচম বানাতে পারেননি। সেই কারিগরেরাই বলেছিলেন, টাঙ্গাইল দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা এবং বিশেষ করে পোড়াবাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া তার শাখা ধলেশ্বরী নদীর জল ছাড়া এমন সুস্বাদু চমচম বানানো সম্ভব নয়। এখানকার মাটির কারণে জলে এক বিশেষ গুণ আসে বলে তাঁদের বিশ্বাস ছিল।

আগে ধলেশ্বরী নদীতে পোড়াবাড়ির বাজারে স্টিমার ঘাট ছিল। তাতে ভিড়ত স্টিমার, লঞ্চ এবং বড়ো বড়ো নৌকো। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকায় চমচমের নাম ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। কিন্তু পরবর্তীকালে ধলেশ্বরী নদীতে বার্ধক্য আসে। এখন আর লঞ্চ, স্টিমার ভিড়তে পারে না। তাই ব্যবসায়ীদের যাতায়াতও কমে গিয়েছে। পোড়াবাড়ি এবং পাশের গ্রাম চারাবাড়িতে কয়েকটি কারখানা টিকে আছে কোনোমতে। পোড়াবাড়ির বাজাদের দশা বেহাল হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা টাঙ্গাইল শহরে চলে যান।

সেখানে পাঁচআনি বাজার এখন চমচমের প্রাপ্তিস্থল। আরও বেশ কিছু মিষ্টি পাওয়া যায় সেখানকার দোকানগুলিতে। পাঁচআনিতে লোকে গিয়ে সেখানে ‘আসল পোড়াবাড়ির চমচম’-এর খোঁজ করেন। ৩০-৩৫টির মতো মিষ্টির দোকান এখানে রয়েছে। তার মধ্যে জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এবং গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার সবচেয়ে পুরোনো এবং নামকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *