কেন আবার পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা?
নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় ভোক্তাদের মাঝে কিছুটা হলেও যে স্বস্তি ফিরছিল তা নতুন বছরের শুরুতেই উধাও হয়ে গেছে। পেঁয়াজ এখন ভোক্তাদের কাছে রীতিমতো একটা ‘আতঙ্ক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। কিন্তু কেন পেঁয়াজের কেজি আবার ২০০ টাকা?
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছিল। কিন্তু একই সময়ে কমেছে আমদানিকৃত পেঁয়াজের পরিমাণ। এছাড়া গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে বাজারে থাকে ভারতের আমদানিকৃত পেঁয়াজও। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ থাকায় ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আসছে না। সবমিলিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে একটি অসাধু চক্র আবারও পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। নতুন পেঁয়াজের এ মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র হিসেবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর দেশি পেঁয়াজের দাম ৫৩৩ শতাংশ বেড়েছে। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৪৫ শতাংশ। যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! পেঁয়াজের এই দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। টিসিবির ৩৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ কিনতে আবারও দীর্ঘ লাইন পড়েছে ভোক্তাদের। গতকাল রবিবার সচিবালয়ের গেটে ক্রেতারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পেঁয়াজ কেনেন।
অথচ গত বৃহস্পতিবারই সচিবালয়ে আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কীভাবে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম এত বাড়ল? এ সময় তিনি এখন ‘আগুনের মধ্যে’ বসবাস করছেন বলে উল্লেখ করেন। আর বৈঠকের পরই আবার পেঁয়াজের দামের এই ঊর্ধ্বগতি।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভারত তাদের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মধ্য প্রদেশসহ পেঁয়াজের বড়ো সরবরাহকারী রাজ্যগুলোতে বন্যা হওয়ার কারণে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে অস্থির হয়ে উঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৮০ টাকায় উঠে যায়। মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির বাজার অস্থির। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। কিন্তু এখন আবার পেঁয়াজের বাজার অস্থির।
রাজধানীর বড়ো পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক হাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, সারাদেশে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার জন্য বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিও কম হচ্ছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বাজারে নেই বললেই চলে। তাই পেঁয়াজের দাম আবার বাড়তি।
আমদানিকারক এ ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি বছর নতুন দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের আমদানিকৃত পেঁয়াজও বাজারে থাকে। কিন্তু এ বছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। ফলে দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ পড়েছে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে পেঁয়াজের এ ‘ক্রাইসিস’ থাকবে না।