জাতীয়দেশব্যাপীশিরোনামসব খবরসর্বশেষ

শাখা-বরাক নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের ২য় দিন শহরে বিতর্কের ঝড়! তিন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অর্থ-বানিজ্যের গুঞ্জন

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: নবীগঞ্জ শহরতলীর শাখা-বরাক নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দ্বিতীয় দিনের অভিযান নিয়ে শহরজুড়ে চলছে নানা আলোচনা। সূত্রে জানা গেছে, সকল ধরণের মাপজোক শেষ করে অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দিয়ে এই ‘নদীর যৌবন ফেরানোর’ অভিযান শুরু হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেছেন- ‘যারা আপত্তি করেছেন, তারা আবেদন করেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে ফের জরিপ করা হয়েছে। আবেদন নিস্পত্তির পরই উচ্ছেদের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ইতিপূর্বে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা কয়েকটি স্থাপনা এখন আবার নতুন করে মাপজোকের নামে চলছে নাটকীয়তা। এমনকি লাল রং দিয়ে দেয়া সংকেত মুছে ফেলার কারনে রহস্য ঘণিভূত হচ্ছে।

এদিকে মাপজোকে নিয়োজিত তিন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অর্থ-বানিজ্যের গুঞ্জন উঠেছে। স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জে প্রায় ২০ কিঃমিঃ জুড়ে শাখা বরাক নদীর খনন কাজকে সামনে রেখে নদী ও খালে অবস্থানরত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযানের পূর্বে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সার্ভেয়ার, নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সার্ভেয়ার এবং নবীগঞ্জ পৌরসভার সার্ভেয়ার মিলে মাপজোক করে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করেন ‘অবৈধভাবে দখলকৃত’ স্থাপনাগুলো।

যাচাই বাছাই শেষে সব কিছু চুড়ান্ত হবার পর তালিকা প্রণয়ন ও উচ্ছেদের তালিকা প্রকাশ করা হয় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কর্তৃক এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। তালিকা অনুযায়ী শাখা-বরাক নদীতে নির্মাণকৃত ১০১টি বাড়ি-দোকান পাটসহ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার হাট নবীগঞ্জ, শিবপাশা ও রিফাতপুর মৌজায় অন্তর্গত শাখা বরাক নদীর তীরবর্তী চরগাঁও ব্রীজ হতে রিফাতপুর, বরাকনগর এলাকায় অবৈধ বসবাসকারীদের সরকারী ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বসত বাড়ী/ দোকানভিটি নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই তালিকা নিয়ে গত মঙ্গলবার শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। চরগাওঁ ব্রীজের মুখ থেকে শুরু হয় ওই অভিযান। শুরুতেই পৌরসভার ৬টি পাকা ঘর (সব্জির দোকান), অনেকের বহুতল ভবনের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে ফেলা হয়। কিন্তু গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরুর পর দু’একটি স্থাপনা ভাঙ্গতে গিয়েই শুরু হয় নাটক। পুণঃরায় মাপজোকের নামে নাঠকীয়তার সৃষ্টি করেন। ওই ৩ সার্ভেয়ার মিলে একটি মার্কেটের মধ্যভাগে দেয়া পূর্বের লাল দাগ মুছে ফেলেন। এ ঘটনায় শহর জুড়ে আলোচনা ঝড় উঠে।

এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে-মাপজোকের সময় একটি মার্কেটকে আওতায়ই আনেন নি সার্ভেয়ারা। নতুন করে আবার কেন মাপজোক? এমন প্রশ্নের জবাব জানতে সার্ভেয়ারদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, মাপে ভুল হতে পারে। প্রথমে এসএ ম্যাপ দিয়ে মাপজোক করলে ওই খাল দেখা গেছে ২৬ ফুট। বর্তমানে আরএস ম্যাপ দিয়ে মাপজোক করে দেখা যায় খালের অবস্থান ১৭ ফুট। ফলে পূর্বের লাল দাগ মুছে দেয়া হয়েছে। তাহলে যে সব স্থানে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা কি আরএস ম্যাপ দিয়ে পুণরায় মাপজোক হবে কি-না এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেননি সার্ভেয়াররা।

এদিকে অভিযানের শুরুর দিনে যাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের দাবী, এসএ ম্যাপের পুর্বের মাপ যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে তাদের বাসাবাড়ির মাপজোকও ভুল হতে পারে। আরএস ম্যাপ দিয়ে মাপজোক করলে পুরো নদী এলাকাই আরএস ম্যাপে মাপজোক করা হউক। আইনতো সবার জন্যই সমান। একেক অভিযানে একেক ম্যাপ দিয়ে আইন প্রয়োগকে রহস্য জনক বলে মন্তব্য করেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন- যেহেতু মাপজোক নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা উঠেছে সেজন্য দ্রুত ডিজিটাল ম্যাপের মাধ্যমে মাপজোক করার জোর দাবী জানাচ্ছি।

গতকাল বুধবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন হবিগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুসি কান্ত হাজং। সহযোগিতা করেন- নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বলেন, নবীগঞ্জ পৌরসভা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ প্রতিষ্ঠানের সার্ভেয়ারের সমন্বয়ে মাপজোক হয়।

তিনি বলেন, এখানে বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, অবৈধভাবে নদী দখল উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা মাপজোকের সময় যারা আপত্তি করে লিখিত আবেদন করেছেন তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পূনঃরায় অনেক জায়গায় আবার মাপজোক করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রয়োজনে আবারো মাপজোক করা হবে। সরকারের ইঞ্চি পরিমান জায়গা ছাড় দেয়া হবেনা।

/ মোসেউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *