করোনা পরিস্থিতি: জনগণের পাশে নেই যশোরের অধিকাংশ এমপি
করোনাভাইরাস (কোভিট-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ইতোমধ্যে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ছাড়া সকল দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যশোরের সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এসব মানুষের বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করতে সরকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এগিয়ে এলেও এখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই নেই জনগণের পাশে। বিশেষ করে দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের মতো কার্যক্রমে জেলার আসনগুলোর এমপিদের জনগণের পাশে দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য এমপিদের মধ্যে কেউ কেউ সমালোচনার কারণে বিলম্বে ত্রাণ বিতরণ করতে আসলেও এতে ক্রুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন সাধারণ মানুষ।

গত ১৮ মার্চ থেকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সেই ছুটি এখনো চলছে। এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েন যশোরের অসহায়-দরিদ্র মানুষ। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের নির্বাচিত এমপিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যেভাবে ভোট চাইতে জনগণের দরজায় গিয়েছিলেন, এখন সেভাবে খাবার নিয়ে মানুষের দরজায় যান। এ ঘোষণার পরও যশোরের কতিপয় জনপ্রতিনিধি এখনও জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। তারা অসহায় মানুষের পাশে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সমালোচনার মাঝে যশোর-২ ঝিকরগাছা-চৌগাছা আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দীনকে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবের ৯ দিন পর গত শনিবার চৌগাছা সদরে সীমিত আকারে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে।
যশোর-৫ মনিরামপুর আসনের এমপি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য সরাসরি ত্রাণ বিতরণ না করলেও অধিকাংশ সময় নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে সতর্কতার সাথে পরিদর্শনে গেছি। মানুষের সাথে কথা বলেছি। সরকারি পর্যায়ে বরাদ্দকৃত ত্রাণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করার ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয় সামনে এসেছে। এসব দিক খেয়াল রেখেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সে বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করছি’।
যশোর সদর আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের পক্ষে তার অনুসারীরা গত কয়েকদিন ধরে ত্রাণ বিতরণ করছেন। তবে করোনা সংক্রমণের প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে তার পক্ষে কোনো তৎপরতা না থাকায় মানুষের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহ থেকে তার পক্ষে ত্রাণ দেয়া হলেও এসব অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না বলে স্থানীয়রা জানান। কাজী নাবিল আহমেদ করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে দলের একাধিক নেতাকর্মী নিশ্চিত করেছেন।
শার্শা-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দীন করোনা পরিস্থিতির মধ্যে একদিনও নির্বাচনী এলাকায় যাননি। এ কথা বলেছেন স্থানীয়রা। তবে তার ঘনিষ্টজনরা জানান, এমপি সরাসরি যুক্ত না হলেও নির্বাচনী এলাকায় ইতিমধ্যে প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে ২৩ হাজার মানুষের ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, ‘এমপি সাহেব বর্তমান ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি ঢাকায় করোনা রোগীদের জন্য আকিজ গ্রæপের পক্ষ থেকে যে হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তারপরও দু একদিনের মধ্যে তিনি এলাকায় এসে সরাসরি ত্রাণ দেবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম বলেন, এমপি সাহেব এলাকায় না থাকলেও তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সাধারণ মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি’।
বৈশ্বিক এ পরিস্থিতিতে কোনো খোঁজ নেই যশোর-৪ আসনের এমপি বাবু রনজিৎ কুমার রায়ের। করোনা সংক্রমণ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে তিনি একদিনও নির্বাচনী এলাকায় আসেননি। তার দলের লোকজনদেরও তেমন তৎপরতা নেই। তবে সরকারি পর্যায়ে বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজলকে কিছুটা সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার দৃশ্য দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা বলেন, এমপি সাহেব এখন কোথায় আমরা তা জানি না।
করোনা প্রাদুর্ভাবে যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন স্থগিত হলেও মাঠ ছাড়েনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। গত ২৮ মার্চ ওই আসনে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচিত না হয়েও জনগণের দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি মোতাবেক সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্থে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন শাহীন চাকলাদার। এতে গোটা কেশবপুর উপজেলায় আপামর মানুষের আস্থা-বিশ্বাসের ঠিকানা হয়ে উঠেছেন শাহীন চাকলাদার।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহীন চাকলাদার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় ইতোমধ্যে একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, একটি মনিটর যুক্ত ইসিজি মেশিন, একটি থার্মাল স্ক্যানার দিয়েছেন। এছাড়া কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহানের কাছে বিপুল পরিমাণ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানেটাইজার ও পিপিই দিয়েছেন। পাশাপাশি গোটা যশোর জেলার আট উপজেলায় দুস্থ-অসহায়-কর্মহীন ১০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা জেলা প্রশাসক ও দলীয় নেতাদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা শহর ছাড়াও উপজেলা শহরে কয়েকটি ট্যাংক লরির মাধ্যমে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম চলছে।
এদিকে কঠিন এ পরিস্থিতিতে এমপিরা এলাকায় না থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব মানুষের অভিযোগ, ভোটের সময় এসব নেতা জনগণের কাছে এসে নানা প্রতিশ্রæতি দিলেও এখন এ দুঃসময়ে তারা আমাদের পাশে নেই।
/ মোজাহো