বাড়ছে পানি, বাড়ছে জনদুর্ভোগ: অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
সুনামগঞ্জে বাড়ছে পানি, বাড়ছে জনদুর্ভোগ। কোথাও বেরোনোর ফুরসত নেই। ভিটে বাড়িতেও ঢুকে পড়ছে পানি। যেদিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।
জেলার প্রতিটি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খামারীদের মাছ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। প্রতিটি হাট-বাজারে দোকান পাটে পানি। সওদাপাতি নেই কারো ঘরে। বিপাকে দুর্ভোগে মানুষ। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন। আবার কেউ স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকের ঘরে জ্বলছে না চুলা। ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি তেমন। বন্যার অবর্ণনীয় দুর্ভোগ অপরদিকে করোনার হানা। সব মিলিয়ে ভাল নেই হাওর পাড়ের মানুষ।
গত তিনদিন ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আজ রোববার ষোলঘর পয়েন্টে দুপুর পর্যন্ত পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭২ সে:মিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সদর উপজেলার গৌরারং ও মোহনপুর ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। এ দুটি ইউনিয়নে ২০/২৫টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। লালপুর গ্রামের দারু মিয়ার ১০/১২টি পুকুরের মাছ ও বাণীপুর গ্রামের তৈয়বুর রহমানসহ কয়েকজন বন্ধুর ৮টি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় আর্থিক লোকসানে পড়েছেন।
এদিকে সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মুসলিম উদ্দিনের পুকুরের চাষ করা ৭০ লাখ টাকার মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। সব হারিয়ে তারা এখন নি:স্ব। এমন চিত্র জেলার সবক’টি উপজেলার। রাধা নগর গ্রামের মাজেদা নামে এক মহিলার ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় গত ২দিন ধরে চুলায় জ্বলছে না আগুন। তিনি চিড়া গুড় খেয়ে কোন মতে দিনযাপন করেছেন। এমন অসহনীয় অবস্থা জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কম বেশী রয়েছে। জেলা শহরের সাথে ৫টি উপজেলার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বন্যার পানির বেগে ভেঙ্গে গেছে সংযোগ সড়ক। সুনামগঞ্জ শহরের মধ্য বাজার এলাকায় নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছেন লোকজন।
তাছাড়া শহরের ্এমন কোন পাড়া নেই যেখানে পানিবন্দি নেই মানুষ। শনিবার রাতে মল্লিকপুর এলাকায় এক গৃহিনী তার পালিত কয়েকটি ছাগলকে নিয়ে একটি ঘরে রাত কাটিয়েছেন। ছাগলের ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় এমন অবস্থার খবর সবখানেই পাওয়া যাচ্ছে। গোবাদি পশু থাকার ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে পড়েছে খামারিরা। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শিমুলবাক ইউনিয়নের সুরমা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম পানিবন্দি না শুধু শতাধিক পরিবারের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
এ খবর জানিয়েছেন ইউনিয়নের উদ্যোক্তা আব্দুল মমিন। বাণীপুর গ্রামের আমিনুর রশিদ জানান, আমি ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোহনপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছি। অবস্থা এমন ভয়াবহ যে, প্রায় ২শতাধিক মানুষের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যার পানি না কমলে দুর্গতরা কোথায় দাঁড়াবে। এ নিয়ে হতাশা আর শংকায় দিনরাত কাটছে মানুষের। জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
তাদের সহায়তায় এখন কেউ এগিয়ে আসেননি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, বন্যার পানি বাড়ছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্র্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যানকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।
/ মোআসা