তিন মাসে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা হাওড়ে প্রাণ হারালেন ৩৪
নিয়মনীতি না থাকায় বাড়ছে নৌ-দুর্ঘটনা, গত তিন মাসে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা হাওড়ে ট্রলার ডুবিতে প্রাণ হারালেন ৩৪ জন।
সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা হাওরে চলতি বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে নৌ দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে।
চলতি বছরের জুলাই-আগষ্ট মাসে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও ছাতক উপজেলায় নৌকা ডুবির ঘটনায় প্রায় ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে।
এদের মধ্যে ৩ জন তাহিরপুর উপজেলার।
রাজশাহীর চারঘাটে আইনশৃংখলা সভা অনুষ্ঠিত
এছাড়াও গত ৫ আগস্ট নেত্রকোণার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকা ডুবে ১৭ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানী ঘটে।
চলতি মাসের ৯ তারিখ সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার মধ্যবর্তী গুমাই নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানার ইনাতনগর গ্রামের ৯ জন,
পাইকুরাটি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের ২ জন ও নেত্রকোনার মেদনী গ্রামের বাসিন্দা।
এলাকাবাসি মনে করেন, নৌ যোগাযোগে অব্যবস্থাপনার কারণে প্রায়ই নৌকা ডুবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার মধ্যবর্তী গুমাই নদীতে ফিটনেসবিহীন ট্রলারে যাত্রী পরিবহণের কারণে গুমাই নদীতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে এলাকাবাসীর ধারনা।
প্রথমে যে ট্রলারটি যাত্রী পরিবহণ করছিল সেই ট্রলারটি যাত্রী না নিয়ে বিয়ের ভাড়ায় চলে যায়।
আর এ সুযোগে একটি ফিটনেসবিহীন ট্রলারের যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গিয়েছিল।
শ্রীপুর পৌরসভার বংশী ঘাটা লবলং খালে বাঁশই ভরসা
এ কারনে গত বুধবার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থেকে ঠাকুরাকোনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী ট্রলারের সাথে
একটি বাল্কহেড নৌকার মুখোমুখী সংঘর্ষে মর্মান্তিক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে।
প্রথমে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করে পরে শুক্রবার বিকেল আরো ২ লাশ উদ্ধার করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওর এলাকার বিভিন্ন উপজেলায় সারা বছর চলাচলের জন্য উন্নত সড়কপথ নেই।
যেগুলো রয়েছে, সেগুলোতেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বেশিরভাগ সড়ক ৬-৭ মাস পানির নীচে তলিয়ে থাকে।
এসব সড়কে বর্ষায় সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় কাজে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, বিয়েশাদী, হাট- বাজার, ইউনিয়ন ও
উপজেলায় নৌপথে চলাচল করেন ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলার দিয়ে।
হাওরে বসবাসকারী লোকজন মনে করেন, সড়কপথে পরিবহন চলাচল করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি থাকলেও নৌপথে চলাচলে কোন নিয়মনীতি নেই।
এ কারণে ট্রলার বা নৌকা চালকরা নিজের ইচ্ছামত অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে চলাচল করেন।
ইলিশ পাঠানোর আগেই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলো ভারত
এ কারণেও নৌ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। নৌপথে এরকম দুর্ঘটনারোধ করতে ট্রলার বা নৌকার ফিটনেস যাচাই,
যাত্রী ধারণ ক্ষমতা, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট নিশ্চত করে দেওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নৌঘাট থেকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি যাত্রী সুরক্ষার জন্য নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করা জরুরী।
না হয় নৌপথে প্রাণহানীর ঘটনারোধ করা সম্ভব নয়।
জামালগঞ্জ উপজেলার স্থানীয়রা বলেন, আমরা একেবারেই হাওর এলাকার মানুষ। হাওরের বৈরী আবহাওয়ার সাথে যুদ্ধ করেই বড় হয়েছি।
নৌ পথে চলাচলে কোন নিয়ম নীতি মানা হয়না। চালক ও যাত্রীরা সচেতন হলেই নৌদুর্ঘটনা অনেকটা রোধ করা সম্ভব।
নৌ দুর্ঘটনা বন্ধ করতে চাইলে মেরিন নীতিমালায় হাওরের চলচলকারী সকল ধরনের নৌকা-ট্রলার যানকে নিয়ে আসতে হবে।
বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেল বাংলাদেশের ইলিশের প্রথম চালান
সেই সাথে সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সড়ক পথের মত নৌপথে নিয়ম-নীতির দরকার।
যেসকল নৌকা চালক এসব মানবেন না তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
এদিকে, সুনামগঞ্জ জলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নৌপথে চলাচলকারী নৌযানসমুহ এবং
সংশ্লিষ্ট সর্বসাধারণকে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে প্রচলিত আইন ও বিধি বিধানসহ বিভিন্ন নির্দেশাবলী দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ নৌযান সমুহকে সার্ভে এবং নিবন্ধন করতে হবে;
সার্ভে সার্টিফিকেট (ফিটনেস) নৌযানের প্রকাশ্য স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে;
নিবন্ধন সনদপত্র নৌযানে রাখতে হবে; রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রকাশ্য স্থানে উৎকীর্ণ থাকবে;
প্রতিটি নৌযানে আসন সংখ্যা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট/ ভয়া যাত্রী সাধারণের হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে;
আসন সংখ্যার চেয়ে অধিক যাত্রী বহন করা যাবে না;
দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক এবং সহকারী দ্বারা নৌযান চালনা নিশ্চিত করতে হবে;
৫ বছরের চুক্তিতে নিয়োগ কাজ করছে ১৫ বছর
সাইরেন ও সার্চ লাইট/ সিগনাল লাইট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে;
মালবাহী নৌযানে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করা যাবেনা;
নৌযান চালকের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার সনদ গ্রহণ করতে এবং তা নৌযান চালনাকালে সংরক্ষণ করতে হবে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস মেনে নৌযান চালনা করতে হবে;
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌযান চালনা হতে বিরত থাকতে হবে;
সকল প্রকার সংঘর্ষ ও দুর্ঘটনা এড়িয়ে নৌযান চালনা করতে হবে;
কোনভাবেই ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী/মালামাল বা পণ্য পরিবহন করা যাবেনা; ।
তিন মাসে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা হাওড়ে ট্রলার ডুবিতে প্রাণ হারালেন এব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান,
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেছি।
যারা এসব নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ ও বাংলাদেশ বাণিজ্যিক নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এবং
প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ শাস্তিম‚লক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Pingback: দুদকের মামলায় গ্রেফতার ওসি প্রদীপ - দ্যা বাংলা ওয়াল
Pingback: সাতক্ষীরার তালায় ভূমিহীন পরিবারের উপর হামলা - দ্যা বাংলা ওয়াল
Pingback: পাবনা ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ - দ্যা বাংলা ওয়াল