দেশব্যাপীবিশেষ প্রতিবেদনজীবনশৈলীভ্রমণশিরোনামসর্বশেষসব খবর

নিদর্শনটি দেখতে যেন সম্রাট শাহ্জাহানের নির্মিত তাজমহল

নিদর্শনটি দেখতে যেন সম্রাট শাহ্জাহানের নির্মিত তাজমহল, মহাশিং নদীর কুল ঘেঁষে রাজকীয় মহিমায় দাড়িয়ে আছে এই নিদর্শনটি।
এটি সম্পর্কে না জানলে যে কেউ এটাকে সম্্রাট আকবরের রাজপ্রাসাদ বা সম্রাট শাহ্জাহান তার প্রিয়তমা মমতাজের প্রতি ভালোবাসার স্মৃতীর সেই তাজমহল ভাবতেই পারে।
এতে ভুলের কিছু নেই। কারন তাজমহল নির্মাণে যেসব পাথর ব্যাবহার হয়েছিলো এই নিদর্শনটিতেও একই রকম পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।
আর সেজন্য দৃষ্টিনন্দন এই প্রাচীন নিদর্শন তার সুন্দর্য্যে এই খেতাব অর্জন করে নেয় অনায়েসে। প্রথম দেখায় যে কেউ এর প্রেমে পড়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবেন।
তাই তো দিন দিন এটিকে একনজর দেখতে মানুষের ভীড় জমে চোখে পড়ার মত।
এখন নিশ্চয় এটির নির্মাণ, অবস্থান ও সুন্দর্য্যতা জানার জন্য ধৈর্য্যহারা হয়ে যাচ্ছেন তাই তো..? তাহলে জেনে নিন..!

শত বছরের পুরনো স্থাপত্য নিদর্শন সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলার রায়পুর গ্রামে অবস্থিত।
এবং নিদর্শনটি দেখতে যেন এটি স্থানীয়ভাবে বড় মসজিদ নামে পরিচিত।
মহাশিং নদী’র ক‚ল ঘেঁষে রাজকীয় মহিমায় দাঁড়িয়ে থাকা যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা ঐতিহাসিক এ মসজিদটি নির্মণের পিছনে রয়েছে নানান ঘটনা।
থাক! সেটা না হয় শেষে বলবো। তার আগে জানিয়ে দেই মসজিদের মনকাড়া সুন্দর্য্যতা।

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন পরির্দশন করলেন এমপি পনির উদ্দিন

দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলা ও প্রবাহমান মহাশিং-এর এক বাকসংলগ্ন ক‚লে দাঁড়িয়ে যেনো সভ্যতার ক্রমবিকাশ পর্যবেক্ষণ করছে এই মসজিদ।
মসজিদের সামনে বিশাল ঈদগাহ ময়দান ও উত্তরপার্শ্বের গেট দিয়ে প্রবেশ করে সামনেই দেখবেন মহাশিং নদী।
আর ডান দিকে তাকালেই সেখানে আপনার নজর আটকে যাবে। কারন সেখানে অবস্থিত রয়েছে আপনার আসার উদ্দেশ্য’র কাঙ্খিত সুন্দর্য্যরে সেই নিদর্শন।
আর ঠিক তখনই আপনি এই মসজিদের ভিতরের রূপ দেখার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যাবেন।
ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই ফ্লোর ও তার আশপাশের কারুকার্য দেখলে আশ্চর্য রীতিমত তাজমহল ভেবে নিবেন।
তবে নামাজের জন্য নির্ধারিত ম‚ল স্থান দু’তলায় থাকলেও মসজিদের মিহরাব অংশে জমকালো পাথর কেঁটে আকর্ষণীয় ডিজাইন তোলা হয়েছে।

পুরো মসজিদের চারপাশে তিনফুট উচ্চতা পর্যন্ত যে কারুকার্য খচিত টাইলস লাগানো হয়েছে সেটাও উঁচুমানের স্থাপত্যশৈলীর ইঙ্গিত দেয়।
টাইলসগুলো আনা হয়েছিল ইতালি, জার্মানি ও ইংল্যান্ড থেকে। প্রত্যেকটা প্রবেশদ্বারে পাথরখচিত খিলান মসজিদটিকে বেশ দৃষ্টিনন্দন করে তোলে।
মসজিদের নিচতলার ছাদ ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে রেলের ¯িøপার। ছাদ ও গম্বুজের চারপাশে পাথর খোদাই করা পাতার ডিজাইন গ্রামীণ ঐতিহ্যের জানান দেয়।
মসজিদের দু’তলার মেঝেতে রয়েছে দুর্লভ শ্বেতপাথর, তার চারপাশে বøকে দেয়া বø্যাক স্টোন বা কালোপাথর তো আরো বেশি দুর্লভ।
এগুলো আনা হয়েছে ভারতের জয়পুর থেকে। তখনকার অবিভক্ত ভারতের সাথে নদীপথের যোগাযোগই সহজ ছিল।
নিদর্শনটি দেখতে যেন মসজিদে ব্যবহৃত এই জাতের পাথর একমাত্র তাজমহলে ব্যবহার করা হয়েছে বরে জানা যায়।

মসজিদটি নদীর ক‚ল ঘেঁষে নির্মিত হওয়ায় ডেকার হাওরের পূবালী বাতাস সবসমই মসজিদের ভিতর প্রবেশ করে।
এবং মুসল্লিরা সবসময়ই একটা তাপমাত্রাবান্ধব অনুভ‚তি পান নামাজের সময়। যেন স্বর্গীয় একটা অনুভূতি অনুভব করা যায়।
তাছাড়া আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে দ্বি-তলা বিশিষ্ট এই স্থাপনাটিতে কোনো ধরনের রডের ব্যবহার ছাড়াই সম্প‚র্ণ ইটের উপর নির্মাণ করা হয়েছে।
মসজিদটি ৬৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও বারান্দাসহ ২৫ ফুট প্রস্থের গম্বুজসহ মোট উচ্চতা ৪০ ফুট ও ছয়টি স্তম্ভের উপর ছয়টি মিনার,
তিনটি বিশাল গম্বুজ এবং ছোট সাইজের আরও বারোটি মিনার রয়েছে।

মসজিদের ভ‚মিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে ভ‚মি খনন করে বেশ মজবুত পাতের উপর স্থাপনাটির ভিত নির্মিত।
ফলে অনেকগুলো বড় মাপের ভ‚মিকম্পও এখন পর্যন্ত মসজিদটিতে ফাটল ধরাতে পারেনি।
নিদর্শনটি দেখতে যেন মসজিদ নির্মাণের পর এখনও বড় ধরনের কোনো সংস্কারের প্রয়োজন পড়েনি।
অবশ্য কেবল গম্বুজের এক জায়গায় খানিকটা লিকেজ দেখা দিয়েছিল আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে।
তখন গম্বুজের উপরের দিকের কিছু পাথর পরিবর্তন করতে হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞ স্থপতিদের তত্বাবধানে বেশ সতর্কতার সাথে সংস্কার কাজ সম্পাদন করা হয়েছে, যাতে ম‚ল গঠনে কোনরূপ পরিবর্তন না ঘটে।

অনিয়মের অভিযোগে ইবির জিয়া পরিষদের ১৭ নেতা পদত্যাগ

এখন আসি মসজিদের নির্মাণ সালের কথা ও রহস্যে:
১৩৩১ বঙ্গাব্দের ৫ই আশ্বিন শুক্রবার এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় রহস্যময়ী এই মসজিদের।
মসজিদের ম‚ল প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিন মির্জা ও তাঁর ভাই ইউসুফ মির্জা মিলে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

এই মসজিদটির নির্মাণকাজে ম‚ল মিস্ত্রিসহ জোগালিরা ছিলেন ভারতীয় ও ম‚ল স্থপতির নাম মুমিন আস্তাগার।
যার প‚র্বপুরুষ ভারতের তাজমহলে কাজ করেছেন বলে জানা যায়। এতে প্রায় দশ বৎসর যাবত নির্মাণকাজ চলে।

মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিন মির্জা ও তাঁর ভাই ইউসুফ মির্জা বেশ বিত্তবান এবং ধর্মপরায়ণ ছিলেন।
পাশাপাশি চাষাবাদ ও খামারের বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। মসজিদ নির্মাণের পিছনে ম‚ল কারণ কী ছিলো?
এসম্পর্কে জানতে চাইলে লোকমুখে নানান জনশ্রæতি রয়েছে।
কেউ বলছেন, মহাশিং নদী থেকে অলৌকিকভাবে ৭টি গুপ্তধন পানিতে ভেসে উঠেছিলো।
আর এগুলো ইয়াসিন মির্জা ও তাঁর ভাই ইউসুফ মির্জা ধার্মিক হওয়ার কারনে সেগুলো দেখেছিলেন।
এবং নিজেদের কাছে সেগুলো রাখেন। পরে স্বপ্নের মাধ্যেমে দেখতে পেলেন এগুলো দিয়ে যেন তারা নদীর পাড়ে মসজিদ নির্মাণ করেন।
তাই আনেকে মনে করছেন এখান থেকেই এই মসজিদের সুচনা হতে পারে।

তবে ইয়াসিন মির্জার পরিবারের স‚ত্রে জানা যায়-ইয়াসিন মির্জার পিতা আদিল হাজী ছিলেন বেশ ধার্মিক।
তখনকার সময়ে মুসলমানরা ছিলেন সংখ্যালঘ্যু। পুরো পরগনার মধ্যে তিনিই একমাত্র হাজী ছিলেন।
আদিল হাজীকে সবাই পায়ে হেঁটে হজ্বপালনকারী হিসেবে জানতো।
ধর্ম-কর্মের প্রতি তাঁর অগাধ মনোনিবেশ থেকে তিনি বর্তমান মসজিদের জায়গাটিতে একটি টিনশেড ঘর তৈরি করেন নামাজের জন্য।
আশপাশের গ্রামের মুসলমানরাও এখানে এসে নামাজ আদায় করতেন। পরম্পরাগত ঐতিহ্যের স‚ত্র ধরেই ইয়াসিন মির্জার মসজিদ নির্মাণের স্বপ্ন জাগে।

যে ব্যাপক স্থাপত্য নকশা তিনি হৃদয়পটে এঁকেছিলেন, তাতে মসজিদের নিচতলায় হিফজখানা আর উপরের তলায় নামাজের স্থান নির্ধারিত ছিলো।
মসজিদের বাহিরের অংশকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় করার অভিপ্রায় ছিল ইয়াসিন মির্জার।
বাহিরের অপরূপ শৈলী যেনো সর্বসাধারণকে মসজিদে আসতে উদ্বুদ্ধ করে। এমন প্রত্যাশা ছিলো তাঁর মন-মগজে।
কিন্তু সে স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়নের মুখ দেখার আগেই তার সময় চলে আসে পৃথিবী থেকে বিদায়ের।
আর এতেই আটকে যায় মসজিদের পরবর্তী সকল কাজ। এবং এজন্য পরে বাহিরের নকশা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
তবে তিনি ওসীয়ত করে যান তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী মসজিদের কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়িত করার আগে যেন তাঁদের কবর,
এমনকি ঘরবাড়ী পর্যন্ত পাকা করা না হয়। কিন্তু সেটুকু আর হয়ে ওঠেনি।
দু’ ভাইয়ের কবরও আজ পর্যন্ত কাঁচা বেড়া-বাউন্ডারীহীন রয়ে গেছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনটি এখনও সরকারের প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের দৃষ্টিতে আসেনি ও স্থাপত্য কীর্তিটি এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে সরকারী আনুক‚ল্য পায়নি।

মসজিদ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, এটি দেখতে প্রায় তাজমহলের মত। এবং এর ভিতরে যে কারুকার্য রয়েছে তা মনমুগ্ধকর।
বিশেষ করে এই দুর্লভ পাথরের সাজ দেখে যে কারো মন কেড়ে নিবে। যদি এই প্রাচীন নিদর্শনটি সরকারের প্রতœতত্ত অদিফতরের নজরে
পড়ে তবে দেশের পর্যটন ক্ষেত্রের আরেকটি জায়গা পূরণ হবে।

ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় জামে মসজিদটি অযতেœ ও অবহেলায় থাকায় আনুষঙ্গিক কাজগুলো মসজিদের নিজস্ব ফান্ড বা চাদা কালেকশনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়।
সরকারের তরফ থেকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ পেলে ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি পর্যটন শিল্পে একটা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারতো।
আর যদি অবহেলার ধারাবাহিকতায় দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়তে থাকে ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়
তবে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলা বড় জামে মসজিদটি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে।

মসজিদের উদ্যোক্তা ইয়াসিন মির্জার প্রপৌত্র মনজুর হায়দার বলেন- প্রাচীন এই নিদর্শনটি অবহেলিত ও সরকারের নজরহীন।
যদি এই প্রতœতাত্তি¡ক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয় তাহলে এই মসজিদটি পর্যটকদের অন্যন্য স্থান হতে পারে।
সরকার যেন অতিদ্রæত এর সুন্দর্য্যতা ধরে রাখতে পদক্ষেপ গ্রহন করে।

/ মো: আব্দুস সালাম

The Bangla Wall
http://shopno-tv.com/
https://shopnotelevision.wixsite.com/reporters
Shopno Television
Shopno Television
http://shopno-tv.com/

সুনামগঞ্জ ডিষ্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট

Name: Md. Abdus Salam E-mail: salamsunamgonj@gmail.com Mobile: 01777-705785, 01715-272834 Fathers Name: Md. Irshad Ali Mother’s Name: Mahmuda Begum Date of Birth: 01st December, 1980 Permanent Address: Vill- Uttor Suriarpar, P.O- Bualia Bazar, P.S- Derai, Dist- Sunamganj. Present Address: West Hajipara, Sunamganj Sadar, Sunamganj. Mailing: Media Center, Pouro Biponi 1st Floor, Sunamganj, Bangladesh. Blood Group: A+

One thought on “নিদর্শনটি দেখতে যেন সম্রাট শাহ্জাহানের নির্মিত তাজমহল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *