ছেলের ছবি নিয়ে এখনো কেঁদেই চলেছেন মা
ছেলের ছবি নিয়ে এখনো কেঁদেই চলেছেন মা রেহেনা বেগম। কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তাকে।
ছেলের সার্টিফিকেট, চাকরির কাগজপত্র, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দেয়া রেফারি সনদ ও ছবি বুকে জড়িয়ে থেমে থেমে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠছেন।
কোনো সান্তনা স্বপ্নভাঙ্গা মায়ের আহাজারি থামাতে পারছে না। তার চিৎকার আর বুকফাটা আত্মনাদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।
সান্তনা দেয়া মানুষগুলোও নিরবে অশ্রু ফেলাচ্ছে। ফুটবল ফেডারেশনের প্রতিভাবান রেফারি মবিনুর রহমান নয়ন।
সম্প্রতি যশোরের ঝিকরগাছা-বাঁকড়া আবুল ইসলাম সড়কের বল্লা এলাকায় মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় নিহত হয় নয়ন।
ছেলের এমন চলে যাওয়া কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা রেহেনা বেগম।
ফুটবল টুর্নামেন্টে জামতলা টিএস স্পোটিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন
কদিন বাদেই যার সেনা সদস্য হিসেবে যোগদান করার কথা সেই নয়ন চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন।
যাকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করা মায়ের স্বপ্ন ছিল অনেক।
উপজেলার বারাকপুর মাদ্রাসা মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা দেখার জন্য মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছিল।
সেই খেলা দেখা আর হয়নি। বাড়িতে ফিরে আসে লাশ হয়ে।
ছেলের ছবি নিয়ে নিহত মবিনুর রহমান নয়ন বাঁকড়া গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে।
তিনি বাঁকড়া বাজারে মায়ের সাথে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
মবিনুর রহমান নয়নের মা রেহেনা বেগম জানান, নয়নের বয়স যখন দুই বছর
তখন তার বাবা সামছুর রহমান তাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
তারপরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে বাবার বাড়ি ও পরে বাঁকড়া বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া থেকেছেন।
শার্শায় কৃষক কৃষানীদের বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ
শিশু সন্তান নয়নকে নিয়ে লোকের বাড়িতে আশ্রয়ী থেকেছেন।
অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, মাঠের কাজ, বিচালী কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন। ছেলের জন্য লোকের কাছে থেকে ভাত চেয়ে খাওয়াছেন।
ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন। বাঁকড়া ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণির ২য় বর্ষে পড়ছিল সে। রেফারি কোর্স করেছে। সেনাবাহিনীতে চাকুরি পেয়েছে।
১৫ দিন পরে চাকুরিতে যোগদান করবে। বড় লক্ষœী ছেলে ছিল নয়ন। যে কাজে গিয়েছে, সব জায়গায় সফলতা পেয়েছে।
কথাগুলো বলার সময় নয়নের মা রেহেনা বেগমের কান্নার বাঁধ থামছিল না।
কাঁদতে কাঁদতে নিজের কষ্ট আর ছেলে বড় করার কথা শোনাচ্ছিলেন।
এদিকে মবিনুর রহমান নয়নের অকাল মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনসহ এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।