কপোতাক্ষ নদে ‘অপরিকল্পিত’ সেতু নির্মাণ
কপোতাক্ষ নদে ‘অপরিকল্পিত’ সেতু নির্মাণ : সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে না ছোট নৌকা বা ডোঙ্গা।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের মহাকবি মাইকেলের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের উপরে ঝিকরগাছায়
নির্মিত নতুন ব্রিজ দুইটি নদের গলার কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এখনই সামান্য বৃষ্টিতে ব্রিজের গার্ডারের নিচের অংশ পানি ছুঁতে চলেছে।
ফলে ভরা মৌসুমে এই ব্রিজের নিচ দিয়ে কোন নৌকা চলাচল করতে পারবে না। এলাকাবাসী দাবি করেছেন, ব্রিজটি কপোতাক্ষ নদের গলার কাঁটা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) গেজেট না মেনে এই সেতু নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্ম পরিচালক আশরাফ হোসেন সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে এ অভিযোগের কথা বলেন।
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল যেতে হলে ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের ওপর
কপোতাক্ষ নদে ‘অপরিকল্পিত’ ৬০ বছরের পুরনো সরু ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে হয়।
যে কারণে দেড় বছর আগে এ ব্রিজটির পাশে শুরু হয় ছয় লেনের রাস্তার জন্য দুটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ।
১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে এ ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন দুইটি ব্রিজের মধ্যে একটির কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরি এর পাশে শুরু হবে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ।
প্রতিটি ব্রিজ ১২০ মিটার লম্বা ও ১৫ মিটার চওড়া। দুইটি করে পায়ার বা পিলার ও এবাটমেন্ট ওয়াল এবং ২১ গার্ডার বা ভিম দেয়া হয়েছে।
পুরাতন ব্রিজটির চেয়ে দেড় মিটার উচু করা হয়েছে। ব্রিজটি পিসট্রেজ বা সমান করা হয়েছে।
জাইকার অর্থায়নে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিকো এবং ডেনকো ব্রিজ দুইটি নির্মাণ করছে।
রাজশাহীতে মসজিদের ইমামকে না রাখাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ
কিন্তুু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ব্রিজটি দেখে এলাকাবাসী হতাশ হয়েছে। পুরাতন ব্রিজের নিচ অংশ বা তলোদেশ কখনো নদের পানি স্পর্শ করতে পারেনি।
অথচ, চলমান বৃষ্টিতে নদে পানি সামান্য বাড়ায় নির্মাণাধীন অর্থাৎ নতুন ব্রিজের নিচের অংশ বা তলোদেশকে পানি ছুঁতে চলেছে।
ফলে, এলাকাবাসীর আশংকা ভরা মৌসুমে নতুন এ ব্রিজের নিচ দিয়ে কপোতাক্ষ নদে কোনো নৌকা তো দূরের কথা একটি ডুঙ্গাও চলাচল করতে পারবে না।
তাই নির্মাণাধীন বা নতুন ব্রিজ দুইটি কপোতাক্ষ নদের গলার কাঁটা বলেও দাবি করেছেন অনেকেই।
ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, নতুন ব্রিজ অনেক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ব্রিজের কারণে নদ তার নব্যতা আরো হারাবে। ব্রিজের নকশা ঠিক হয়নি।
পুরনোটির নিচ দিয়ে নৌকা, জাহাজ চলাচল করতে পারলেও নতুন ব্রিজটির নিচ দিয়ে যেতে পারবে না।
কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, নদীর ওপর ব্রিজ করতে হলে অবশ্যই বিআইডবিøউটিএ ও
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা অনুমোদন করতে হয়। কিন্তু ভুল নকশায় সওজ ব্রিজ দুটি নির্মাণ করছে। ব্রিজের নিচে দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না।
ঝিকরগাছা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইমরান রশীদ জানান, নতুন ব্রিজ আমাদের হতাশ করেছে।
বেনাপোলে ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
এ ব্রিজের কারণে নদ নব্যতা আরো হারাবে। ব্রিজের নকশা ঠিক হয়নি।
ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দীন জানান, আমরা শুনেছিলাম যে ব্রিজের কথা তা তো নির্মাণ হলো না।
পুরাতনটির নিচ দিয়ে নৌকা, জাহাজ চলাচল করতে পারলেও নতুন ব্রিজটির নিচ দিয়ে একটি ডুঙ্গাও যেতে পারবে না।
নদকে মেরে ফেলতে নতুন ব্রিজই যথেষ্ট বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী শ্যামল কুমার বসু জানান, বন্যা বা প্রবল বর্ষায় ব্রিজের নিচ দিয়ে কোনো কিছু চলাচল করতে পারবে না।
ব্রিজের গার্ডার উচ্চতা কম করায় এমন হয়েছে। এক্ষেত্রে নদী পুনঃখনন করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রিজ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,
বিশেজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রিজ দুটির নকশা করা হয়েছে। পুরনো ব্রিজের মাপে এটি করা হচ্ছে।
নদীর পানি যদি গার্ডারে লেগে যায় তাহলে নদী খনন করতে হবে। তা না হলে নিচ দিয়ে নৌযান চলতে পারবে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্ম পরিচালক আশরাফ হোসেন সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন।
এসময় তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) অনুমোদন নেয়া হয়নি।
নির্মাণাধীন সেতুটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন গেজেটও মানা হয়নি। এক পর্যায় তিনি নদের পানি থেকে সেতুর উচ্চতা মেপে দেখেন।
যেখানে সর্বনিম্ন উচ্চতা থাকার কথা কুড়ি ফুট সেখানে আছে ১৫ ফুট। এসব দেখে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্ম পরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পত্র লিখবেন।
সেতুর বাকি অংশ নির্মাণে গেজেট মানার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে উপস্থিত মানুষের আশ্বস্ত করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডেপুটি প্রকল্প ম্যানেজার সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন, ডিআরই কন্স্যালটেন্ট আহম্মদ আলী প্রমুখ।

প্রতিনিধির তালিকা দেখতে ভিজিট করুন shopnotelevision.wix.com/reporters সাইটে।




Pingback: বাংলাদেশে আসার পথে ধর্ষণের অভিযোগ : গ্রেফতার জওয়ান - দ্যা বাংলা ওয়াল